জীবনের ছন্দে ফিরবে শিশু সোহান, পুনাক সভানেত্রীর সহযোগিতায় আপ্লুত মা
প্রকাশিতঃ 8:49 pm | January 06, 2022

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :
মাথার ওপর ছায়া বাবাকে আরও আগেই হারিয়েছেন শিশু সোহান। অভাবের যাতনায় বিসর্জন দিয়েছেন শৈশবের স্বপ্ন-আহলাদ। সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের স্বপ্ন সেটিও যেন ‘গরিবের ঘোড়া রোগ’! এরই মাঝেই শরীরে বসত গড়েছে রক্তের জটিল এক রোগ। স্বভাবতই দিশেহারা মা; পরিবারের সদস্যরা।
অসহায়ের মর্মবেদনা কারও কারও মনকে করে তুলে ব্যাথাতুর। অনির্বাণ মানবিকতায় আলোকময় ভবিষ্যত আর মানসিক প্রশান্তির আভা ছড়িয়ে দিতে কেউ না কেউ পাশে এসে দাঁড়ান রিক্ত-নি:স্ব এমন সব পরিবারের পাশে। মানবিক হৃদয়ের দৌলতে এক চিলতে সোনালী রোদ উঁকি দেয় এমন অসহায়ের দূয়ারেও।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) থ্যালাসেমিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন শিশু সোহান ও তাঁর পরিবারের দিনলিপিতে ঠিক এমনই একটি দিন যেন এসে ধরা দিয়েছিল বৃহস্পতিবার (০৬ জানুয়ারি) সকালে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাগ্যবিড়ম্বিত এই শিশুটির মায়ের আক্ষেপ-আর্তনাদ ব্যাথাতুর করেছে বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জার হৃদয়রে অতলকেও। মানবিক মন নিয়েই এদিন তিনি ছুটে গেছেন বিএসএমএমইউ’তে।

দাঁড়িয়েছেন থ্যালাসেমিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সোহানের পাশে। চিকিৎসার সার্বিক খোঁজ খবর নিয়েছেন। নিজেও মা বলেই কীনা সন্তানতূল্য শিশুটির জন্য খেলনা, বেলুন আর নানা রকমের ফল সঙ্গে নিতেও ভুলেননি।
জটিল রোগে অসুস্থ শিশুটিকে জীবনের ছন্দে ফিরিয়ে আনতে তিনি শিশুটির মায়ের হাতে বাংলাদেশ পুলিশ ও পুনাকের পক্ষ থেকে তুলে দিয়েছেন আর্থিক সহায়তা বাবদ ৬০ হাজার টাকা। পুনাক সভানেত্রীর মহানুভবতায় আপ্লুত শিশু সোহানের মা পারভীন আক্তার। তিনি আইজিপি পত্নীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, রক্তের জটিল রোগে (Immune Thrombocytopenic Parpura) দীর্ঘদিন যাবত আক্রান্ত শিশু সোহান। তাঁর বাড়ি ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর থানার গোপালপুর গ্রামে। তার বড় এক বোন রয়েছে। অন্য দশটি মায়ের মতো তিনিও স্বপ্ন দেখতেন তাঁর সন্তান থাকবে দুধে-ভাতে। কিন্তু দারিদ্র্যজর্জর জীবনে রোগাক্রান্ত সন্তানকে নিয়ে যেন অসহায়ত্বের ঘূর্ণিপাকে খাবি খাচ্ছিলেন মা পারভীন আক্তার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে শিশু সোহানের জটিল রোগের খবর পৌঁছে যায় পুনাক সভানেত্রীর কর্ণকুহরে। তিনি মানবিক সহযোগিতার মাধ্যমে অসুস্থ শিশুটিকে স্বাভাবিক জীবন উপহার দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। নিজের প্রবল ইচ্ছা থেকেই সোহানের প্রতি বাড়িয়ে দেন মানবিক সহায়তার হাত।
বিএসএমএমইউ’র পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান সোহানের চিকিৎসার সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে পুনাক সভানেত্রীকে এ সময় অবহিত করেন।
পরে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপে জীশান মীর্জা বলেন, ‘পুনাক সমাজের অসহায় ও দুস্থ মানুষের জন্য কাজ করছে। আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোহানের অসুস্থতার খবর পেয়ে তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি।’
থ্যালাসেমিয়া সম্পর্কে সচেতন হলে এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। এজন্য তিনি থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, জীশান মীর্জা থ্যালাসেমিয়া রোগের ওপর একটি ডকুমেন্টারি দেখেন এবং থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত শিশু ও তাদের অভিভাবকদের অভিজ্ঞতার কথাও শোনেন।
এ সময় পুনাকের স্বাস্থ্য সম্পাদিকা ডা. প্রথমা রহমান সিদ্দিকী, স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) অতিরিক্ত ডিআইজি রখফার সুলতানা খানম, এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. কামরুজ্জামান এবং কর্তব্যরত চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/একে/এমকে