আমি থেমে যাবো না: সিদ্দিকুর রহমান
প্রকাশিতঃ 12:37 am | October 05, 2017
‘অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত এসেছি। আমাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। এটুকু বলতে পারি, আমি যেন পুরোপুরি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করবো। আমাকে থামানো যাবে না। আমি থেমে যাবো না।’ বাংলা ট্রিবিউনকে এ কথাগুলো বলেছেন পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের আঘাতে দু’চোখ হারানো কলেজছাত্র সিদ্দিকুর রহমান।
সোমবার (২ অক্টোবর) এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে চাকরিতে যোগ দেন তিনি।
চাকরিতে যোগ দেওয়ার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সিদ্দিকুর বলেন, ‘চাকরিটা পেয়ে নতুন জীবনে প্রবেশ করলাম। আমার সঙ্গে শুরু থেকে যেভাবে দেশবাসী ছিল, তাদের সারাজীবন সেভাবে আমার পাশে চাই। একইসঙ্গে কৃতজ্ঞতা জানাই সরকার ও গণমাধ্যমকে। সবার সহযোগিতা না থাকলে এই চাকরি তো পেতাম না। তাই সবার কাছে দোয়া চাই।’
এর আগে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সিদ্দিকুরের হাতে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানির নিয়োগপত্র তুলে দেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। নিয়োগপত্র অনুযায়ী, তাকে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে টেলিফোন অপারেটর পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে এক বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এসময় তার বেতন ধরা হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। এছাড়া আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন তিনি। একবছর পর চাকরি স্থায়ী হলে তার বেতন হবে ২৩ হাজার টাকা।
প্রসঙ্গত, পরীক্ষার রুটিন ও তারিখ ঘোষণাসহ কয়েকটি দাবিতে গত ২০ জুলাই শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত নতুন সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করলে গুরুতর আহত হন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান। আহতাবস্থায় তাকে প্রথমে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো হয়। কিন্তু চোখের আলো পাননি সিদ্দিকুর।
সিদ্দিকুর রহমান সোমবার ১১ টা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত অফিস করেন। তারপর বিকালে ফিরে যান খিলক্ষেতের বাসায়। প্রথমদিন অফিস করার অভিজ্ঞতার কথা মোবাইল ফোনে বলেন তিনি বাংলাট্রিবিউনের সঙ্গে। সিদ্দিকুর বলেন, ‘যোগদানের সব প্রক্রিয়া শেষ হতে ১১টা বেজে যায়। তারপর আমাকে পৃথক একটি কক্ষে বসানো হয়। তবে আমার সঙ্গে আরও দু’জন সহকর্মী রয়েছেন।তারা থাকাতে আমার খুব সুবিধা হলো।’
প্রথমদিন কী কাজ করলেন জানতে চাইলে সিদ্দিকুর বলেন, ‘আজতো প্রথমদিন, খুব একটা কাজ করতে হয়নি। তারপরও দুই-তিনটা ফোন ধরেছি, কাজ করেছি। এটুকু বলে সিদ্দিকুর হাসতে থাকেন। তার হাসিতে খুশির মাত্রা বোঝা যাচ্ছিল ফোনের এপ্রান্ত থেকেও।
প্রথমদিনে কাজ করতে অসুবিধা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘সহকর্মীরা খুবই হেল্পফুল।এমনকি এমডি স্যারও খুব আন্তরিক। কয়েকবার আমার কক্ষে এসে খোঁজ নিয়েছেন। আর আমার বড় ভাই নওয়াব আলী আজ সঙ্গেই ছিলেন। তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি। তবে নিজের ওপর আমার আত্মবিশ্বাস রয়েছে, আমি পারবো। আজ এ পর্যন্ত এসেছি। আমাকে থামানো যাবে না। আমি সব ধরনের পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছি। আমি থেমে যাবো না।’
সিদ্দিকুর বলেন, ‘যেকোনও পরিস্থিতিতে আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। দুঃখের যেকোনও মুহূর্ত থেকে সুখ খুঁজে নিতে চেষ্টা করি। আনন্দ নিতে চেষ্টা করি। তবে এখন খিলক্ষেতের বাসা থেকে অফিস দূরে হওয়াতে যাতায়াতে সমস্যা হবে। তাই অফিসের কাছাকাছি বাসা পেলে যাতায়াতে সুবিধা হতো। আর মাকেও এনে কাছে রাখতে পারতাম। মা-ও গ্রামের বাড়িতে আমাকে ছাড়া থাকতে পারছেন না। ফোন করে প্রতিদিনই কান্নাকাটি করেন। মাকে ছেড়ে থাকতে আমারও কষ্ট হচ্ছে। বাসা পেলে মাকে নিয়ে আসবো। তখন আর কোনও সমস্যা থাকবে না।’
চাকরিতে যোগদানের আগের রাতে (রবিবার) কেমন লেগেছিল জানতে চাইলে সিদ্দিকুর বলেন, ‘সবার হাসি শুনতে পাচ্ছিলাম, সবাই খুব খুশি ছিল। সবার হাসি আমাকে খুশি এনে দেয়।’ নিজেকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করছেন জানিয়ে সিদ্দিকুর বলেন, ‘আমি এখন তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। ইচ্ছা আছে একজন ‘রাইটার’ নিয়ে সমাপনী পরীক্ষা দেবো। তারপর স্নাতকোত্তর শেষ করবো ব্রেইল পদ্ধতিতে।’ ব্রেইল শিখতে কম সময় লাগবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমারতো কিছুটা ধারণা রয়েছে বই-খাতা নিয়ে, তাই সময়ের আগেই ব্রেইল শিখে নেবো।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের প্রত্যেক চিকিৎসক এবং সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সিদ্দিকুর বলেন, ‘এই মানুষগুলো আমার পাশে না দাঁড়ালে এই চাকরিটাও আমি পেতাম না।’