সরকারের দৃঢ় ভূমিকায় অনুপ্রাণিত সেনাবাহিনী, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার শপথ সেনাপ্রধানের

প্রকাশিতঃ 8:43 pm | January 12, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের মুন্সীয়ানায় দেশের অসামান্য অগ্রগতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও কয়েকটি পালক। মুজিবশতবর্ষ ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশবাসীর জন্য আরও চারটি নতুন উপহার দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন: দুর্ঘটনা রোধে ট্রাফিক আইন মেনে চলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সওজ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বাস্তবায়িত এই চারটি প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গুরুত্ব ও তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

আরও পড়ুন: আন্ডারপাসসহ তিন প্রকল্পের হাইলাইটস

সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করতে সরকারের দৃঢ় ভূমিকা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সব সময় অনুপ্রাণিত করেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উন্নত, সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সোনার বাংলা গড়ে তোলারও দৃপ্ত শপথের কথাও উচ্চারণ করেছেন সেনাপ্রধান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘দেশ ও জাতির উন্নয়নে এবং মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও স্বত:স্ফূর্তভাবে কাজ করে যাবে, ইনশাআল্লাহ।’

আরও পড়ুন: পাহাড়ের পদ্মাসেতু, খুলে দিলো সম্ভাবনার দূয়ার

বুধবার (১২ জানুয়ারি) গণভবনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়িত ঢাকা-এয়ারপোর্ট মহাসড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজ সংলগ্ন পথচারী আন্ডারপাস, সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ লেন মহাসড়ক, বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক এবং রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচরে চেংগী নদীর উপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজের এমন মূল্যায়ন উপস্থাপন করেন সেনাপ্রধান।

প্রধামন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো.নজরুল ইসলাম প্রকল্প বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তথ্যচিত্র তুলে ধরেন।

সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ নিজের বক্তব্যের শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, মহান স্বাধীনতার রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ।’

তিনি স্মরণ করেন স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদদেরও। এ প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলেন, ‘যাদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। আমি স্মরণ করছি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সকল শহীদদের, যারা শুধু স্বাধীনতা যুদ্ধেই নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের প্রয়োজনে দেশ-বিদেশে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি পদ্মাসেতু
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড.এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদক্ষ নেতৃত্ব ও সময়োচিত দিকনির্দেশনায় ঢাকা মহানগরীসহ সমগ্র দেশে ভৌত অবকাঠামো এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও অসামান্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আজ আমরা পদ্মাসেতু নিজেরাই তৈরি করেছি। এসব উন্নয়ন কর্মকান্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করে দেশের উন্নয়নের অংশীদার হবার সুযোগ দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।

এ সময় সেনাপ্রধান আরও বলেন, ‘বালুখালী (কক্সবাজার)-ঘুনধুম (বান্দরবান) সীমান্ত সংযোগ সড়ক’, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সড়কে শহিদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ সংলগ্ন আন্ডারপাস’, ‘সিলেট শহর বাইপাস-গ্যারিসন লিংক ৪ লেন মহাসড়ক’ এবং ‘রাঙ্গামাটি জেলার নারিয়ারচরে চেংগী নদীর ওপর ৫শ’ মিটার দীর্ঘ সেতু’- এই চারটি প্রকল্প নির্মাণে সার্বিকভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশেষভাবে কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স সর্বোচ্চ দক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

তারা সকল প্রতিকূলতা দূর করে গুণগতমান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পসমূহের কাজ শেষ করেছে। সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করতে সরকারের দৃঢ় ভূমিকা সর্বদা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।’

তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার ঐকান্তিক আগ্রহ এবং সকল মন্ত্রণালয়ের সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট অঞ্চলসমূহের আপামর জনসাধারণের আন্তরিক সহযোগিতায় উল্লেখিত প্রকল্পসমূহ কাঙ্খিত সময়ের পূর্বে সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পসমূহ সফলতা ও দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়নে আমি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী, সচিব ও সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং চীফ ও ২৪ ও ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সকল সদস্যদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।

অনুপ্রেরণা প্রধানমন্ত্রীর, দিকনির্দেশনা সেনাপ্রধানের
প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক অনুপ্রেরণায় এবং সেনাপ্রধানের সার্বিক দিকনির্দেশনায় এই চারটি প্রকল্প বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ডেলিকেটেড পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করেছে বলে জানান সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং চিফ মেজর জেনারেল ইবনে ফজল শায়েখুজ্জামান।

নিজের স্বাগত বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নে অনেক চ্যালেঞ্জ বা প্রতিকূলতা ছিল। কিন্তু সেনাবাহিনীর প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আকুন্ঠ আস্থা এবং জাতির যে ভরসা তাতে করে চ্যালেঞ্জ কোন শব্দ আছে বলে আমরা মনে করি না। আমাদের ওপর অর্পিত যে কোন দায়িত্ব আমরা করতে পারছি এবং করবো এবং অর্পিত দায়িত্ব পালনে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করার জন্য আমরা সবসময় প্রস্তুত আছি।

সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং চিফ বলেন, আন্ত:সংস্থার সমন্বয়ের নিরিখে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনীর পারস্পারিক সহযোগিতা নি:সন্দেহে দৃষ্টান্তমূলক। সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য সন্মানিত সেনাবাহিনী প্রধানকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওপর অবিচল আস্থা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বির্নিমানের প্রত্যয় পুনরায় উচ্চারণ করেন তিনি।

কালের আলো/এমএএএমকে