ড.মোমেনকে বাইডেন-ব্লিনকেন’র শুভেচ্ছা; বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন মেরুকরণের আভাস!
প্রকাশিতঃ 9:28 pm | January 23, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাপিড একশন ব্যাটিলিয়ন (র্যাব)-এর সাবেক ও বর্তমান সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের অভিযোগ এনে যুক্তরাষ্ট্র-ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা ঘটেছিল বিদায়ী বছরের শেষভাগে। কিন্তু নতুন বছরের শুরুতেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন মেরুকরণের আভাস মিলেছে।
বন্ধুপ্রতীম বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন মাত্রা সৃষ্টিতে ইংরেজি নববর্ষকেই বেছে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র! ইতোমধ্যেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিনকেন’র পর দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনকে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফাস্ট লেডি জিল বাইডেন ও ব্লিনকেন পত্নী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ড.মোমেনের প্রিয়তমা স্ত্রী মিসেস সেলিনা মোমেনকেও।
গত ১৯ ও ২০ জানুয়ারির এই শুভেচ্ছা ঘটনাপ্রবাহ জাগিয়েছে নতুন আশা-সম্ভাবনার। সব সন্দেহ-অবিশ্বাস দূরে ঠেলে বিষয়টিকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবেই দেখছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরাও।
যদিও সম্পর্ক উন্নয়নের এই শুভেচ্ছা বার্তা দেশবিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়ানো এবং বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র’র স্বার্থ ও মঙ্গলের প্রতিকূলপক্ষের কপালে ফেলেছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ, এমন গুঞ্জণও হালে পানি পেয়েছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে কঠোর বাংলাদেশ
সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়’ বন্ধুত্বপূর্ণ এই সহাবস্থান নিশ্চিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে একাগ্রচিত্তেই কাজ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। কিন্তু বিভিন্ন সময় মার্কিন প্রশাসনকে মিথ্যা তথ্য ও উপাত্ত দিয়ে প্রভাবিত করে একটি তৃতীয় পক্ষ। ফলশ্রুতিতে গত বছরের ডিসেম্বরে র্যাবের বর্তমান ও সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন প্রশাসন।
এ বিষয়ে তোলপাড় সৃষ্টির পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোনালাপ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেনের সঙ্গে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং নিরাপত্তা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেন।
ড.মোমেনও সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনার জন্য মার্কিন সরকারকে লিখিত চিঠি দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, বিশ্বের সব দেশেই হিউম্যান রাইটস লঙ্ঘিত হচ্ছে। অনেক দেশে এই লঙ্ঘনের হার অনেক বেশী।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, দীর্ঘ সময় র্যাবকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। দেশটির বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন র্যাবের সঙ্গে একত্রে কাজ করেছেন। র্যাবের ইনকোয়ারি সেলও যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত। এই ইনকোয়ারি সেলের কর্মদক্ষতাও তারা বহুদিন পর্যবেক্ষণ করেছেন। এরপরেও প্রশিক্ষণে কোন দুর্বলতা থাকলে অবশ্যই সেটি দূর করা হবে বলেও তিনি লিখিত চিঠিতে উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন দেশের স্বার্থে যেখানে তদবির করা দরকার সেখানেই তদবির করার। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে র্যাবের ঈর্ষণীয় সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে উপস্থাপন করেছেন ড.মোমেন। সেখানকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট স্বীকার করেছে র্যাব বাংলাদেশে সন্ত্রাস বহুলাংশে কমিয়েছে এবং দেশের সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে।
জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের নীতি
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, ভূরাজনৈতিক সমীকরণ, বিশেষ করে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের অগ্রাধিকারের কারণে বাংলাদেশ বরাবরই দেশটির কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত এক যুগে বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নতুন মাত্রা পায়।
দেশ দু’টির বিরাজমান সুসম্পর্ক উপমহাদেশের ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও ব্যাপভাবে তরান্বিত করে। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের নীতি এবং প্রচেষ্টা এক ও অভিন্ন। কিন্তু দেশের স্বার্থ বিরোধী একটি বিশেষ মহল সম্পর্কে ফাটল ধরাতে নানামুখী কূটকৌশল অব্যাহত রেখেছে।
সূত্রটি মনে করছে, বঙ্গবন্ধুকন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দেশের অভ্যন্তরে যেমন জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দমনে সফল হয়েছেন, ঠিক তেমনি তিনি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য একটি রোডম্যাপও তৈরি করে দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী মানুষের ন্যায্যতার অধিকার নিশ্চিতের লড়াইয়ে নেমে এদেশের মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি, ন্যায় বিচার, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন।
সম্পর্কে নতুন মেরুকরণের আভাস?
নতুন বছরে নতুন সৌন্দর্যের আবাহন ঘটিয়ে পূর্বদিগন্তে শাশ্বত নতুন সূর্যের উদয় হয়েছে। প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা নিয়ে গ্রেগরিয়ান পঞ্জিকা অনুযায়ী ইংরেজী নতুন বছরের পথচলা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের নতুন মেরুকরণ ঘটছে নীরবে।
গত ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ও তার পত্নীকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর (ইউ এস ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট) থেকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিনকেন।
পরদিন ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউস থেকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন ও তাঁর পত্নী মিসেস সেলিনা মোমেনকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও যুক্তরাষ্ট্রের ফাস্ট লেডি জিল বাইডেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের তাবৎ পরাক্রমশালী দেশটির সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ এবং গভীর হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কালের আলো/এমএএএমকে