বটমক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছ চাষে সাফল্য, ফোয়াব সম্মাননায় ভূষিত ফারহীন রিশতা

প্রকাশিতঃ 1:17 am | January 25, 2022

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো :

স্বপ্ন, ইচ্ছা আর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ রচনায় ব্রত হয়েছিলেন। পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা আর মেধাকে পুঁজি করে পা বাড়িয়েছিলেন। স্বাবলম্বী নারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ৩০০ জনের কর্মসংস্থান।

সাফল্যর জন্য সময় আর ধৈর্য্যের সমন্বয়ে ছিল অপেক্ষা। প্রতীক্ষা শেষে সাফল্য এসেছে হাতের মুঠোয়। দেশের সফল একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে বিকশিত করেছেন শাবানা ফার্ম প্রোডাক্টস’র পরিচালক‍ ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর। নিজের একাগ্রতায় স্থাপন করেছেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

বটমক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি পেয়েছেন সম্মাননা। ভূষিত হয়েছেন ফিসফার্ম ওনার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র চলতি বছরের ফোয়াব সম্মাননায়।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে তার হাতে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দিয়েছেন এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশন’র প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারী।

সম্মাননাপ্রাপ্ত ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর পুলিশের আইজি ড.বেনজীর আহমেদ ও বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) সভানেত্রী জীশান মীর্জার জ্যেষ্ঠ কন্যা।

এই অনুষ্ঠানের কারিগরি সহযোগিতায় ছিল মৎস্য অধিদপ্তর ও ফিসারিজ প্রোডাক্ট বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এফপিবিপিসি), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন মৎস্য উন্নয়ন, সমবায় ব্যাক্তিত্ব ও ফোয়াব প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মোল্লা শামসুর রহমান শাহীন।

র‌্যাংগস গ্রুপ’র ডিপ সী ফিসার্স লিমিটেডের পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. সৈয়দ আরিফ আজাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা খন্দকার হাবিবুর রহমান। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন মৎস্য অধিদপ্তরের সাবেক কাঁকড়া ও কুচিয়া প্রকল্প পরিচালক ড. বিনয় কুমার চক্রবর্তী।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জ জেলা সদরের সাহাপুর ইউনিয়নের বৈরাগী টোল এলাকায় শাবানা ফার্ম প্রোডাক্টস’র পথচলা শুরু হয় ২০১২ সালে। এই সমন্বিত খামারটি প্রায় ২০০ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মৎস্য, ডেইরি, পোল্ট্রি, ফুল, ফল, ঔষধী গাছ ও নানা প্রকার সবজির চাষাবাদ করা হয়। এছাড়াও গবেষণামূলক বিভিন্ন চাষাবাদও হয়ে থাকে ফার্মটিতে।

সূত্র জানায়, এই খামারের অন্যতম বিশেষত্ব হচ্ছে বটমক্লিন রেসওয়ে পদ্ধতিতে মাছ চাষ। গবেষণা ও বিজ্ঞানের প্রভাবে মাছ চাষের আধুনিক এই পদ্ধতিতে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছে এই খামার।

ব্যয়বহুল হলেও আধুনিক টেকসই এই পদ্ধতিতে শতাংশে ১ টন পর্যন্ত মাছ উৎপাদন সম্ভব। এখানে বৃত্তাকার বিশাল পাকা পুকুরে মাছ ছাড়ার পর যন্ত্রের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম স্রোত। নিয়ম মেনে দেওয়া হয় পরিমাণমতো অক্সিজেন আর খাবার। আধুনিক যন্ত্রপাতিতেও হয় মাছের পরিচর্যা। অল্প জায়গায় এই পদ্ধতিতে উৎপাদিত শিং, পাবদা, গুলশা , কার্প এবং শোল মাছ বেশ সুস্বাদুও।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, এখানে সেমি অর্গানিক চাষ পদ্ধতি প্রাকৃতিক ভেষজ নিম এবং প্রোবায়োটিক ব্যবহারের ফলে মাছের জন্য একটি উন্নত ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত হয় । বর্তমানে আধুনিক এই মাছ চাষ পদ্ধতিটি অভিজ্ঞ ফিশারিজ কনসালট্যান্ট’র মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এই খামার থেকে বছরে ১২০-১৫০ টন মাছ, ২০-২৫ টন সবজি ও ১০০-১২০ টন মাংস উৎপাদিত হচ্ছে।

সম্মাননাপ্রাপ্ত ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর মনে করেন, যে কোন স্বীকৃতি ভালো কাজে উৎসাহ জোগায়। নিজের মনের মধ্যে নতুন নতুন স্বপ্ন বুনে একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান তিনি।

পুলিশপ্রধান ও পুনাক সভানেত্রীর এই জ্যেষ্ঠ সন্তান বলেন, ‘এই সম্মাননা আমার জন্য অনেক গর্বের। একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে এমন অর্জনে সত্যিই আমি অনেক আনন্দিত।’

দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির টেকসই প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে শাবানা ফার্ম প্রোডাক্টস’র প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক‍ ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর আরও বলেন, ‘আমরা ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিতে স্বাস্থ্যসম্মত বিশ্বমানের নিরাপদ পণ্য উৎপাদন করে চলেছি।

বৃহত্তর এগ্রো সেক্টরের চাহিদা মোতাবেক দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও আমরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি একটি গতিশীল এবং চ্যালেঞ্জিং বিশ্ব বাজারের সাথে একটি সুস্থ বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব’-যোগ করেন তিনি।

কালের আলো/আরএম/এমকে