প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে প্রগাঢ় আস্থা-বিশ্বাস আনসার ডিজি মেজর জেনারেল শামীমের

প্রকাশিতঃ 9:08 pm | February 10, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রত্যাশার চেয়েও প্রাপ্তি বহুগুণে অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাহিনীটির মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম।

আরও পড়ুন: দেশের উন্নয়ন-সঙ্কটে আনসার-ভিডিপির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

সরকারপ্রধানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। আপনার সাহসী ও দূরদর্শী নেতৃত্বে দেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে আসীন হয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে উন্নত রাষ্ট্রের পালক অর্জনে। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের গৌরবময় ও ঐতিহাসিক মুহুর্তে আপনার সৎ, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা আমরা লাভ করেছি। যা আমাদের জন্য বিরল সম্মান ও গৌরবের বিষয়।’

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষে গৃহিত সকল ধরণের কর্মসূচিতে ‘মুজিববর্ষের উদ্দীপন আনসার ভিডিপি আছে সারাক্ষণ’ এই স্বত:স্ফূর্ত আত্মনিবেদনের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্তও করেন।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত আনসার-ভিডিপি : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ৪২ তম জাতীয় সমাবেশে নিজের স্বাগত বক্তৃতায় এসব মন্তব্য করেন তিনি।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গাজীপুরের সফীপুরস্থ আনসার ভিডিপি একাডেমির মূল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো.আখতার হোসেন। গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস।

আরও পড়ুন: আনসার-ভিডিপিকে এক নির্ভরযোগ্য সুশৃঙ্খল বাহিনী মনে করেন জননিরাপত্তা সচিব

আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম নিজের বক্তব্যের শুরুতেই গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্ট্রা ও গর্বিত রূপকার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। নিজ বাহিনীর ৪২তম জাতীয় সমাবেশের আনন্দঘন মুহুর্তে শতব্যস্ততার মধ্যেও মূল্যবান সময় ব্যয় করে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী যুক্ত হওয়ায় তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

বলেন, ‘আপনার সদয় উপস্থিতিতে বাহিনীর সকল সদস্য/সদস্যা আজ আনন্দিত, উদ্বেলিত এবং অনুপ্রাণিত। প্রতিবছর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত বাংলাদেশ আনসার একাডেমিতে আপনার উপস্থিতি এই বাহিনীকে করেছে সর্বদাই গৌরবান্বিত ও মহিমান্বিত।’

মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম বলেন, ‘দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানে সুবিশাল এই জনসম্পৃক্ত ও সুশৃঙ্খল এই বাহিনীর প্রায় ৬১ লক্ষ সদস্য/সদস্যা পার্বত্য চট্রগ্রামসহ দেশের সর্বত্র এবং বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি স্থাপনায় নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনসহ সকল জাতীয় উৎসবে বাহিনী গৌরবোজ্জ্বল ভুমিকা রেখে চলেছে, যা সর্বজন বিধিত।

মৌলিক প্রশিক্ষণ ছাড়াও যুবসমাজকে নানামুখী পেশাভিত্তিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন এবং আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ঋণ গ্রহণ করে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে, যোগ করেন মহাপরিচালক।

‘তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত বাহিনীর সদস্য জাতীয় দুর্যোগ ও যেকোন প্রয়োজনে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে স্বত:স্ফূর্তভাবে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার সেবায় অনন্য ভূমিকা রেখে চলেছে’-উল্লেখ করে ডিজি বলেন, ‘বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণের মাঝেও জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ, লিফলেট, মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণসহ লক্ষাধিক পরিবারকে খাদ্যসহায়তা প্রদান, কৃষককে ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দেওয়া, কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে নিরাপত্তা, লকডাউন নিশ্চিতের পাশাপাশি জনগণকে টিকা গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে জীবনের ঝুঁকি উপেক্ষা করে এই বাহিনী সেবার অনন্য উদাহরণ তৈরি করেছে। দায়িত্বপালন করতে গিয়ে প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে বাহিনীর ২৩ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করেছে। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর আধুনিকায়ন, দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ, পেশাগত উৎকর্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে মন্তব্য করে মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক ও প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় বাহিনীর সদস্যদের জন্য অতিরিক্ত পদ সৃজন, পদের মানোন্নয়ন, সময়মতো পদোন্নতি, পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

বিশেষায়িত গার্ড ব্যাটালিয়নসহ আনসার ব্যাটালিয়ন গঠন, স্থায়ীকরণের মেয়াদ হ্রাস, বেতন গ্রেডের ধাপ উন্নিতকরণ, নতুন পোষাক প্রবর্তন, পারিবারিক রেশন বৃদ্ধিসহ আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামোসহ মডেল ব্যাটেলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে।’

‘সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ আপনি রাষ্ট্রীয় পদক পবর্তন করেছেন। যা সকলের মনোবল ও কর্মস্পৃহা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছে। এই বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সর্বমোট ১৬২ জন পদকে ভূষিত হয়েছে। উপজেলা এবং আনসার কমান্ডার এবং দলনেতা/দলনেত্রী এবং অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের মাসিক ভাতা বৃদ্ধি এবং মহিলা আনসার এবং উপজেলা প্রশিক্ষিতাদের চাকরি স্থায়ীকরণসহ অস্থায়ী চাকরি শতভাগ গণনার নির্দশনা প্রদান করে আপনি নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করায় আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি’-যোগ করেন ডিজি।

‘প্রধানমন্ত্রীর প্রজ্ঞা, দূরদর্শীতা ও সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে শান্তি, উন্নয়ন ও দুর্যোগ মোকাবিলায় রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত এবং সম্মানিত’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সমসাময়িক কালের করোনা মহামারির মধ্যেও দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখে আপনি বিশ্ব অর্থনীতিতে সৃষ্টি করেছেন নতুন উদাহরণ।
আপনার সরকারের সকল অসামান্য এবং অভূতপুর্ব অর্জনে আমরা গর্বিত এবং অনুপ্রাণিত।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মনে-প্রাণে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ থেকে উন্নত পেশাদারিত্বের স্বাক্ষর রেখে বাহিনীর সদস্যরা সর্বদা বাহিনী ও দেশের ভাবমূর্তি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে অঙ্গীকারাবদ্ধ¬-বলেন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম।

কালের আলো/জিকেএম/এমকে