শিক্ষক নয়, সবাই ছাত্র; একটি ‘ফেইসবুক স্কুল’র গল্প

প্রকাশিতঃ 10:48 am | November 10, 2018

উবায়দুল হক, কালের আলো:

স্লোগান হচ্ছে- ‘শিখতে এসেছি শেখাতে নয়’। এখানে শিক্ষক কেউ নয়, সবাই ছাত্র। কেউ প্রশ্ন করছেন অন্যরা সঠিক উত্তর দিচ্ছেন, পাশাপাশি গুণী ব্যক্তিরা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করছেন। সবই হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। এভাবেই চলেছে একটি বছর। বলা হচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী অনলাইন স্টাডি গ্রুপ ‘ফেইসবুক স্কুল’ এর কথা। যার যাত্রা শুরু হয়েছিলো গেল বছরের ৭ নভেম্বর।

স্কুলটির শিক্ষার্থীসংখ্যা এখন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। এক বছর সময় অতিক্রম করায় শুক্রবার উদযাপন করা হয়েছে বর্ষপূর্তি উৎসব। তবে এ উৎসবটি ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ রইলো না। ভার্চুয়াল জগত থেকে বেরিয়ে এসে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হলো ময়মনসিংহের মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে। যেখানে স্কুলের এডমিনরাসহ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। আলোচনাসভা, পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয় দিনটি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জামালপুরের বকশীগঞ্জ সরকারি কিয়ামত উল্লাহ কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ইদ্রিস আলী। তিনি বলেন- মানুষ বলে থাকে ফেসবুক একটি সময় অপচয়ের মাধ্যম। কিন্তু এই গ্রুপটিই প্রমাণ করেছে ফেসবুক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। যতক্ষণই এ গ্রুপের সাথে সংযুক্ত থাকবে ততক্ষণই কেউ কিছু না কিছু শিক্ষা লাভ করতে পারবে। এসময় গ্রুপটি সম্প্রসারিত ও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে এডমিনদের বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও দেন তিনি।

এতে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার আলী (বীর বিক্রম)। প্রধান আলোচক ছিলেন সরকারি আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক, কবি ও প্রাবন্ধিক আল মাকসুদ।

ফেইসবুক স্কুলের প্রধান এডমিন জীবন রবি’র সঞ্চালনা ও প্রধান উপদেষ্টা গাজীপুর জেলা কারাগারের জেলার ফোরকান ওয়াহিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- স্পেকস্ট্রাম ল্যাঙ্গুয়েজ রিজোর্টের পরিচালক কাজী শহীদ শওকত, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট খাইরুল খান ও বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এহসানুল কবির সুমন। আলোচনাসভা শেষে বিগত মাসে ফেইসবুক স্কুলে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদেরকে পুরস্কার বিতরণ ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ, প্রেরণাদায়ক অবদানের জন্য বেশ কয়েকজনকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর যাত্রা শুরু করা স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিস্ট জীবন রবি। স্কুলটির শুরুর যাত্রা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, একসময় আমি বাংলাদেশ জেল ডিপার্টমেন্টে ফার্মাসিস্ট হিসেবে জব করতাম। পাশাপাশি অনেকগুলো চাকরীর পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছি। বিশেষ করে ফার্মাসিস্ট পদে চাকরীর পরীক্ষা নিয়ে ভালই অভিজ্ঞতা ছিলো। আমি চেয়েছিলাম আমার অভিজ্ঞতাটা জুনিয়রদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে যারা কিনা তখনো সরকারি চাকরীর পরীক্ষা দেয়নি।

তিনি বলেন, প্রথমে আমি আমার ফেসবুক টাইমলাইনে ফার্মাসিস্ট পদে চাকরীর পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে কয়েকটি পর্ব আকারে পোস্ট করি। এগুলোতে ব্যাপক সাড়া পাওয়ায় চিন্তা করলাম একটা গ্রুপ তৈরি করি ফার্মাসিস্টদের নিয়ে। ২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর গ্রুপটি খোলা হলো এবং নাম দিলাম ‘ফেইসবুক স্কুল’। শুরুতে ফার্মাসিস্টদের নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও কিছুদিন পরেই সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা এতে চরম আগ্রহ দেখায়। যা  বর্তমানে সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য শিক্ষার গুরুপূর্ণ একটি মাধ্যম হয়ে উঠছে।

এর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে জীবন রবি বলেন, ফেইসবুক স্কুলে প্রতিদিন সদস্যরা বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন পোস্ট করেন, একজন প্রশ্ন করলে অন্যরা কমেন্টে সঠিক উত্তর দিয়ে থাকেন। এভাবেই সকলেই জানা বিষয়টি অন্যকে জানাতে ও অজানা জিনিস অন্যের কাছ শিখা সম্ভব হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিমাসের শেষ দিন একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা নেয়া হয়, যেখানে  তিন সবোর্চ নম্বর সংগ্রহকারীকে পুরস্কৃত করা হয়।

কালের আলো/ওএইচ