নদী-উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা ও মৎস সম্পদ রক্ষায় কাজ করছে নৌ-পুলিশ

প্রকাশিতঃ 2:22 pm | February 11, 2022

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:

দেশের স্থলভাগের সাথে পাল্লা দিয়ে অপরাধ, দূষণসহ অপরাধ বেড়েছে জল এলাকাতেও। এসব অপরাধ দমনে আগে স্থানীয় থানা পুলিশ কাজ করতো। তবে পরবর্তী সময়ে অপরাধের ধরন ও মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সব ধরনের অপরাধ বন্ধসহ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি মৎস্য সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় নদীপথের নিরাপত্তা ও প্রধামন্ত্রীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের সংকল্পের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে নৌ-পুলিশ।

নৌ-পুলিশ সংশিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নৌপথে উদ্ধার ও আটক চুরি, ছিনতাই, চাদাবাজি, ডাকাতি, বেওয়ারিশ লাশ উদ্ধার, মাদক ও চোরাচালানসহ এ ধরনের অপরাধের তদন্তভার স্থানীয় থানা পুলিশের ওপর ন্যস্ত ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে অপরাধের মাত্রা ও ধরন বাড়লে একটি বিশেষায়িত ইউনিট প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে নদী দিবস উপলক্ষে দেওয়া বক্তব্যে নৌ- সম্পদ ব্যবহারের সংকল্প ও ২০১০ সালে ‘নৌ-পুলিশ’ ইউনিট গঠনের ধারণা দেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মৎস সম্পদ রক্ষাসহ নৌপথের নিরাপত্তায় সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে নৌ-পুলিশ।

জানা গেছে, পুলিশের বিশেষায়িত এ ইউনিট সরকার ঘোষিত নৌচলাচল উপযোগী যেকোনো নৌপথ, জোয়ার-ভাটা বিশিষ্ট নৌপথের অংশবিশেষ এবং পানির সর্বোচ্চ স্তর হতে ভূ-ভাগের উভয়দিকে ৫০ মিটার পর্যন্ত এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে নদ-নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৪ হাজার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে বর্তমানে সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার নৌপথ নৌ-চলাচলের উপযোগী। ২০২৫ সালের মধ্যে নৌপথ ১০ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০১৩ সালে যাত্রা শুরুর পর ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত নৌ পুলিশের অনুকূলে টিওত্যান্ডইভুক্ত বিভিন্ন ধরনের জলযান ও মোটরযান বরাদদ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে এ ইউনিটে মোট জলযানের সংখ্যা ৮৭টি ও মোটরযানের সংখ্যা ১৩৪টি।

সংশিষ্ট সুত্র জানায়, বাংলাদেশের নদীবিধৌত জেলাগুলোকে কেন্দ্র করে নৌ-পুলিশকে উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগ নামে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। দুই বিভাগে নৌ-পুলিশের সদর দফতরসহ ১১টি অঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে উত্তর বিভাগে ৭টি ও দক্ষিণ বিভাগে ৪টি নৌ-পুলিশ অঞ্চল রয়েছে।

প্রতিটি অঞ্চলে রয়েছে একাধিক নৌ-থানা ও ফাঁড়ি। সারা দেশে ১৫৭টি স্টেশনের অনুমোদন হলেও ১১৭টি স্টেশন বর্তমানে কার্যক্রম রয়েছে। বাকি ৪০টি নৌ-পুলিশ স্টেশন শিগগিরই চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকালে 8৫টি ফাঁড়ি নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও ১৫৭টি থানা ও ফঁাড়ির অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে অনুমোদিত ১৬টি থানার মধ্যে ১৪টি ও অনুমোদিত ১৪১টি ফাঁড়ির মধ্যে ১০৩টিতে কার্যক্রম চলছে।

এ ছাড়া শুরুতে ৭৪৭ জন জনবলের মঞ্জুরি হলেও পরবর্তী সময়ে এ সংখ্যা ১ হাজার ৪৬১ জনে উন্নীত করা হয়। এ ছাড়া পুলিশের অন্য ইউনিট থেকে আরও ৫৪৫ জন সদস্য নৌ-পুলিশে সংযুক্ত রয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে নৌ- পুলিশের জনবল হলো ২ হাজার ৬ জন।

পুলিশের একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) নৌ-পুলিশের প্রধান হিসেবে দামিত্ব পালন করেন। এ ছাড়া উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন ৩ জন ডিআইজি, ১৩ জন পুলিশ সুপার, ৮ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ১৪ জন সহকারী পুলিশ সুপার। প্রতিষ্ঠাকালে নৌ-পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি। বর্তমানে ডিআইজি মো. আতিকুল ইসলাম নৌ-পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পর্যন্ত বাহিনীর তিনজন পিপিএম ও সাতজন আইজি ব্যাজসহ মোট ১০ জন পুরস্কার লাভ করেন। নৌ-পুলিশের কার্যক্রম আরও গতিশীল ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ‘কমান্ড অ্যান্ড ডিজিটাল মনিটরিং সেন্টার’ করা হয়েছে। এই সেন্টারে মেগা মনিটর স্থাপন, গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাট ও লঞ্চঘাটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, বেতার নেটওয়ার্ক স্থাপন, নৌ-পুলিশের সব অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ, আবহাওয়া অধিদফতরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন, ভিডিও ওয়াল স্থাপন ও ইন্টারেকটিভ ফ্ল্যাট প্যানেল স্থাপন করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধর জনশতবার্ষিকী উপলক্ষে নৌ-পুলিশ সদর দফতরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া একটি ‘বোট মিউজিয়াম’ স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ২০টি নৌকার প্রতিলিপি রয়েছে। ভবিষ্যতে সব জাহাজে চ্যানেল-১৬ চালু করা, নৌপথের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা, নৌ-স্টেশন ও সদর দফতরের জন্য নিজন্ব জমির ব্যবস্থা করাসহ আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) সাথী রানী শর্মা বলেন, নৌ-পুলিশের অভিযানে ২০১৯ সালে ১৪ কোটি ৬৬ লাখ ৪৩ হাজার ৫৮০ মিটার জাল জব্দ করা হয়। এর বাইরে ৪ হাজার ৫৬১ কেজি মা ইলিশ ও ৭৯৯টি নৌকা জব্দসহ মৎস্য আইনে ৩১টি মামলা করা হয়েছে। ২০২০ সালে ৪২ কোটি ১৪ লাখ ২২ হাজার ১৫ মিটার জাল; ২৭ হাজার ৬৩ কেজি মা ইলিশ; ২ হাজার ৯৭৪টি নৌকা জন্দসহ ৯টি পুলিশ আ্যাসল্ট মামলা ও মৎস্য আইনে ১৮১টি মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ২৭ মে পর্যন্ত ৫০ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার ৫১৭ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করা হয়।

কালের আলো/ডিএসবি/এমএম