চার ডিসির ফোন নাম্বার ‘ক্লোন’ করে প্রতারণা
প্রকাশিতঃ 10:21 am | February 12, 2022

নিজস্ব সংবাদদাতা, কালের আলো:
মোবাইল নম্বরের ডিজিটে কৌশলে প্রযুক্তিগত কিছু পরিবর্তনকে বলা হয় ক্লোনিং। এর মাধ্যমে অবৈধ সুবিধা আদায় ও জালিয়াতি করছে প্রতারক চক্র।
সম্প্রতি এমন ঘটনা ঘটেছে চার জেলার জেলা প্রশাসকের সাথে। অভিযোগ উঠেছে- লক্ষ্মীপুর, নেত্রকোনা, যশোর ও মেহেরপুরের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সরকারি মুঠোফোন নাম্বার ক্লোন করার। দাপ্তরিক নম্বর ক্লোনের পর কয়েকজনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে নগদ অর্থ।
জানা গেছে, গত সোমবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর চার জেলা প্রশাসকের সরকারি মুঠোফোন নাম্বারের মতো একই রকম নম্বর থেকে ফোন করে চাঁদা দাবি করে এবং বিভ্রান্তমূলক তথ্য ছড়ায় একটি চক্র।
বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) নেত্রকোনার জেলা প্রশাসনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে জরুরি সতর্কমূলক বার্তা দেওয়া হয়। এছাড়া এ ঘটনায় জিডি করা হয়েছে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমান বলেন, সরকারি মুঠোফোন নাম্বার ক্লোন করে একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন অফিস ও লোকজনের কাছে টাকা দাবি করছে। এছাড়া বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। রাত ৭টার দিকে বিষয়টি জানতে পারি। এসব প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে টাকার লেনদেনসহ কোনো ধরনের তথ্য আদান-প্রদান না করার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি বলেন, কারো কাছে এ রকম ফোন গেলে যেন আইনের আশ্রয় নেওয়া হয়। বিষয়টি বিটিআরসি, জেলা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দফতরে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে নেত্রকোনার পুলিশ সুপার মো: আকবর আলী মুন্সি বলেন, সবাইকে সচেতন হতে হবে কারন কোন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ফোন করে কোন অনাকাঙ্খিত সুবিধা কিন্তু চাওয়ার কথা না। কাজেই যারা এসব নাম্বার ব্যবহার করে আর্থিক সুবিধা দাবি করেছিল তাদের বিষয়ে আমরা সজাগ আছি।
এদিকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের সরকারি মোবাইল ফোনের নম্বর ক্লোন করে চাঁদা দাবির ঘটনায় জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খানের পক্ষ থেকে সদর থানায় সোমবার একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসকের সরকারি মোবাইল ফোন থেকে জেলা প্রশাসকের গাড়ি চালক মোমিন হোসেনের কাছে দুই হাজার টাকা বিকাশ করতে বলা হয়। পরে গাড়িচালক কোনো কিছু চিন্তা না করে জেলা প্রশাসক ভেবে দুই হাজার টাকা দিয়ে দেন। এরপর তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত আরও কয়েকটি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে দুই হাজার টাকা দেওয়ার জন্য বলে। পরে বিষয়টি জানাজানি হয়।
তদন্ত অফিসার মো. সাজেদুর রহমান জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে হ্যাকারকে খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দের সরকারি মোবাইল নম্বর ক্লোন করে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ দাবি করেছে একটি প্রতারক চক্র। এছাড়া জেলার রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনজন দাশের মোবাইল নাম্বারও ক্লোন করেছে প্রতারক চক্র। বুধবার রাতে (০৯ ফেব্রুয়ারি) প্রতারক চক্রটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুই কর্মকর্তা।
এ ঘটনায় কেউ যেন প্রতারণার শিকার না হয়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক করে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও ইউএনও।
জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, আমার সরকারি মোবাইল নাম্বারটি একটি প্রতারক চক্র ক্লোন করেছে। চক্রটি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এর থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করছি। চক্রটির বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইউএনও অনজন দাশ জানান, প্রতারক চক্র তার সরকারি মোবাইল নম্বর ক্লোন করে বিভিন্নজনকে সুযোগ সুবিধা পাওয়ার প্রলোভন, ভয় ও হুমকি প্রদর্শন করে অর্থ দাবি করেছে। এতে তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। প্রতারক চক্রটি কারও কাছ থেকে কোনো অর্থ দাবি করলে তাকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন। প্রতারক চক্রকে ধরিয়ে দিতে সবার কাছে আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া যশোর জেলা প্রশাসকের দাফতরিক মোবাইল নম্বর ক্লোন করে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাকে ফোন টাকা দাবি করছে একটি চক্র। সাধারণ জনগণ, জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান।
সোমবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের অফিশিয়াল ফেসবুক ও পেইজে একটি সতর্কমূলক স্ট্যাটাসে জানানো হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে জেলা প্রশাসক যশোরের দাফতরিক মোবাইল নম্বর ০১৭১৩৪১১৩৭১ টি ক্লোনের মাধ্যমে একটি চক্র জেলার বেশ কয়েকটি ইউএনওসহ সরকারি কর্মকর্তাদের ফোন করছে। এক্ষেত্রে একটু খেয়াল করে দেখবেন নম্বরটি +৬৮৮০১৭১৩৪১১৩৭১ এ রকমের অর্থাৎ +৮৮ এর পূর্বে কোনো একটি সংখ্যা তারা ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো এবং কোনো প্রকার আর্থিক লেনদেন না করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হলো।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, দাপ্তরিক ফোন নাম্বার ক্লোন করে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাদের নাম্বারে ফোন দেওয়া হয়েছে। তবে কোথাও কোনো চাঁদাবাজি বা প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে ডিসিদের ফোন ক্লোনের ঘটনায় হতবাক সাধারণ মানুষ। তারা বলছে, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে এমন হলে সাধারণ মানুষ তো আরও রিস্ক জোনে আছে। এসব অপরাধে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি তাদের।
কালের আলো/এসবি/এমএম