ষড়যন্ত্রের ভেতরেও শিক্ষামন্ত্রীর দুই জয়
প্রকাশিতঃ 10:09 pm | February 14, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
ভেতরে-বাইরে তাকে নিয়ে অব্যাহত রয়েছে ষড়যন্ত্র। কিন্তু নৈতিক দৃঢ়তায় তিনি অনড়, অটল। ধৈর্য্য ধরেই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় পারঙ্গম। কূটকৌশলের রাজনীতির নেতিবাচকতা কখনও প্রভাবিত করতে পারে না তাঁর দায়িত্বের বিশাল কর্মপরিধিকে। আরও একবার চোখে আঙুল দিয়েই সবাইকে দেখিয়ে দিলেন। নিজের নেতৃত্বকেও ফের প্রমাণ করলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসন করেছেন। আবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অভাবনীয় ফল উপহার দিয়েছেন। রীতিমতো চমক তৈরি করেছেন দেশের প্রথম এই নারী শিক্ষামন্ত্রী। সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই দু’টি কঠিন চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ করেছেন নিজেকে। ক’দিনের ব্যবধানে এই দু’সাফল্যকে অনেকেই শিক্ষামন্ত্রীর দুই জয় হিসেবেই দেখছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তাকে নিয়ে চলছে ইতিবাচক প্রচারণা। যেকোন সঙ্কটে তাঁর নেতৃত্বের মুন্সীয়ানাও হয়েছে প্রশংসিত।
জানা যায়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কথিত দুর্নীতির অভিযোগের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি ও তাঁর পরিবারকে ঘৃণ্য কায়দায় ঘায়েল করার অপচেষ্টা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করেন মন্ত্রী নিজেই। নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তোলেন।
জানিয়ে দেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যে নির্ধারিত জায়গা থেকে তাঁর বা তাঁর ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপু’র বিন্দুমাত্র সুবিধা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। এরপরই বদলে যেতে শুরু করে চিত্রপট। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও অনলাইনে-অফলাইনে সক্রিয় থাকলেও হালে পানি পাচ্ছেন না এটি দিবালোকের মতোই পরিস্কার।
নিজ নির্বাচনী এলাকায় দলীয় বিরুদ্ধবাদীদের এমন অপরাজনীতির শিকার হলেও দমে যাননি শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। মূলত তাকে ‘টার্গেট’ করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উচ্চারিত হয় মেঘনাপাড়ের জনপদের প্রতিটি সড়কে।
দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত চক্রটি দীপু মনিকে বিতর্কিত করতে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের হাতে ‘কার্ড’ তুলে দেওয়ার ফন্দিফিকির করে। ঠিকই এই বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছে দলটির হাইকমান্ড।
এমন কঠিন বাস্তবতার ভেতরেও শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সমস্যার সমাধান করেন। মন্ত্রী নিজে গত শুক্রবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তিনি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে দু:খ প্রকাশ করার করার অনুরোধ করেন। মন্ত্রীর অনুরোধে সাড়া দিয়ে উপাচার্য দু:খ প্রকাশ করেন।
সূত্র মতে, এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিকভাবেই বুঝাতে সক্ষম হন শিক্ষামন্ত্রী। উপাচার্যের বিষয়টি তিনি আচার্য অর্থাৎ মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করার আশ্বাস দেন। তাঁর আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হন এবং আন্দোলনে দাঁড়ি টেনে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
এর মাধ্যমে গত এক মাসের উত্তপ্ত পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ সমাধান হয়েছে। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার মাধ্যমে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছিল। কিন্তু বেশ বিচক্ষণতার সঙ্গেই পুরো বিষয়টির সমাধান করেছেন মন্ত্রী। শিক্ষামন্ত্রীর দূরদর্শীতা ‘খোয়াব’ দেখা চক্রটিকে পর্যদুস্ত করেছে।
দেখা গেছে, করোনাকালে উচ্চমাধ্যমিকের চৌকাঠ পেরোনো নিয়েই অনিশ্চয়তার কালো মেঘ জমেছিল। ২০২০ সালে করোনার কারণে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষায় বসানো সম্ভব হয়নি শিক্ষার্থীদের। সবাই পান ‘অটোপাস’। কিন্তু এবার সেই পথে হাঁটেননি শিক্ষামন্ত্রী। ২০২১ সালের উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে।
শিক্ষার্থীরাও বেশি সময় প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হয়েছে। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়েও তাঁরা এগিয়ে গেছেন। ফলে এবারের ফলাফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিজয় কেতন উড়িয়েছেন। ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ শিক্ষার্থী কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। পাসের হার ৯৫.২৬ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ শিক্ষার্থী।
ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের মতোই চেনা হাসি ছিল শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির মুখায়বেও। শিক্ষার্থীদের আলোকময় উজ্জ্বল ভবিষ্যত উপহারে শিক্ষার মানোন্নয়নে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে চলেছেন তিনি। করোনার দু:সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার পর অসাধারণ ফলাফল মন্ত্রীর আরেকটি বড় বিজয় হিসেবেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা এমনও বলছেন, ‘ষড়যন্ত্র করেও আটকানো যায় না দীপু মনিকে। তিনি দুরন্ত, দুর্বার। তাঁর এই সাফল্য প্রকারান্তরে সরকারের বড় সাফল্য হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে।’
কালের আলো/এসবি/এমএম