মন্ত্রী-উপদেষ্টার স্বাভাবিক কথোপকথনকে ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপকৌশলে ক্ষোভ-অসন্তোষ
প্রকাশিতঃ 9:53 am | February 15, 2022

বিশেষ ভাষ্যকার, কালের আলো :
দেশে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক কর্মযজ্ঞের প্রকল্প ইনফো সরকার। এই প্রকল্পটি নিয়েই স্বাভাবিক একটি টেলি কথোপকথন চলছিল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মাঝে। প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে কথা বলছিলেন তাঁরা। হঠাৎ করেই এই অডিও ক্লিপটি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বিরক্ত, ‘কোন কিছুই ভালো লাগে না’ পক্ষটি শুরু করে তুলকালাম কান্ড। একটি ইংরেজি শব্দের সঠিক অর্থ বা তাৎপর্য না বুঝেই অর্বাচীনের মতোই প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোম্পানি হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার অপকৌশল নিয়ে জনমনে তীব্র ক্ষোভ-অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অনেকেই এই চক্রটির ‘জ্ঞানের বহর’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
আদতে এলটিমএম সজীব ওয়াজেদ জয়ের দেশী বা বিদেশী কোন কোম্পানির নাম নয়। এটি হচ্ছে সরকারের আইনসিদ্ধ একটি ক্রয় পদ্ধতি। ইনফো সরকার প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এবং মানসম্পন্নভাবে শেষ করতেই লিমিটেড টেন্ডারিং মেথড বা এলটিএম প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল ওই সময়ে।
দীর্ঘ সময়ের পুরনো এই ফোনালাপ নিয়ে ইতোমধ্যেই কথা বলেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। আইনমন্ত্রী অপপ্রচারকারীদের রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টিকে তদন্ত করার কথা জানিয়েছেন।
ডিজিটাল বাংলাদেশের গোড়ার কথা
একটি আধুনিক, বিজ্ঞানমনস্ক ও প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশের ভিত্তি রচনা করেছিলেন মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২০০৮ সালের ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার মুখ্য হাতিয়ার এই ডিজিটাল বাংলাদেশ। সরকারের এই নির্বাচনী অঙ্গীকার আজ বাস্তবতা।
ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে মাধ্যমে গ্রাম পর্যন্ত স্বল্প মূল্যে উচ্চ গতির ব্যান্ডউইথ সম্পন্ন ইন্টারনেট ব্যবহারে তথ্য প্রযুক্তি খাতে অবকাঠামো সৃষ্টি তথা বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে গত কয়েক বছরে দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতে ঘটে গেছে যুগান্তকারী বিপ্লব।
ইন্টারনেট এখন পৌছে গেছে দুর্গম চরে। ফাইভার অপটিক ক্যাবল সংযোগের মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়ন। ১৮ হাজার ৫০০ সরকারি অফিসসহ পুরোদেশ এখন একই নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। দেশের অন্তত ৭ হাজার ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার বা ইউটিসি ভাগ্য ফিরিয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের। সরকারি অফিসগুলোতে চালো হওয়া ই-নথি ব্যবস্থাপনা। নাগরিক সেবা কার্যক্রমকে করেছেও আর গতিশীল ও স্বচ্ছ।
দেশে বর্তমানে সাড়ে ৬ লাখের বেশি সক্রিয় ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। বিশ্বের সাতটি দেশে সফটওয়্যার বা আইসিটি সেবা রপ্তানি করা দেশটির নাম বাংলাদেশ। সুদূর গ্রামে কিং বা দুর্গম চরের মোবাইল ব্যবহার করতে না পারা মানুষগুলোর কাছেও পৌঁছে গেছে প্রযুক্তির সেবা। ফলে উদ্যমী মানুষগুলো হয়ে উঠছেন একেকজন উদ্যোক্তা।
এতসব কাজ সম্পূর্ণ উদ্যোগটির মাধ্যমে সেটি হলো সরকারের তথ্য প্রযুক্তির বিভাগ পরিচালিত ইনফো সরকার প্রকল্প। তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হয় এই মহাকর্মযজ্ঞ। প্রথম ধাপে ২০১০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ইনফো সরকার এক প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪ জেলাকে অপটিক্যাল ফাইভারের নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা হয়। দ্বিতীয় ধাপে ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৪২০টি উপজেলায় এবং ১৮ হাজার সরকারি অফিস আসে অপটিকেল ফাইভার নেটওয়ার্কের আওতায়।
পুরো দেশকে ডিজিটাল অপটিক্যাল ফাইভার বা নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসতে তৃতীয় ধাপে বাস্তবায়িত হচ্ছে ইনফো সরকার তিন প্রকল্প। এর মাধ্যমে স্বল্পতম সময়ে ২৬০০ ইউনিয়ন ১ হাজার থানাকে সংযুক্ত করা হচ্ছে অপটিক্যাল ফাইভার নেটওয়ার্কে। যোগাযোগ মানব সম্পদ উন্নয়ন এই শিল্পায়নের দৃষ্টিতে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে দেশ।
নীরবে ঘটে যাওয়া এমন আইসিটি বিপ্লবের অগ্রনায়ক হিসেবে স্বনামে খ্যাত প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা ও জাতির পিতার দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও এই হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট অনেক পরিশ্রমী এবং পরিচ্ছন্ন জীবনের অধিকারী। নিজের জীবন ও কর্মের প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর সততার অনুশীলন। দেশের লাখ লাখ তরুণের প্রাণে স্বপ্নজয়ের বীজ তিনিই বপন করেছেন। কেবল উন্নয়নই নয়, প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও উদীয়মান অর্থনৈতিক ব্যাঘ্র-বাংলাদেশ এক অনন্য উদাহরণ।
নির্মোহ মন মননের স্বপ্নবান এই বিজ্ঞানী দেশের আইসিটি খাতে পরিবর্তনের স্থপতি। তাঁর দূরদর্শী ভাবনা-চিন্তার আলোকেই বিশ্ব যোগাযোগ আর গতিময় জীবনযাপনের পথনকশা মিলেছে। বরাবরই মায়ের পাশে থেকে প্রযুক্তি বিপ্লবের মহানায়ক হিসেবে নিজের ক্যারিশমা দেখাতে সক্ষম হয়েছেন এই ভিশনারি লিডার।
ফোনালাপকে ঘিরে যতো অপকৌশল
সম্প্রতি আইনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মধ্যকার একটি টেলি কথোপকথনটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কথোপকথনটির এক পর্যায়ে ইনফো সরকারের প্রকল্পটি প্রসঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। ভাইরাল হওয়া ওই অডিও ক্লিপে উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর আরেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পৃক্ততার কথাও।
অডিও ক্লিপটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এলটিএমের মাধ্যমে কাজটি হয়েছে কি না জানতে চান আইনমন্ত্রীর কাছে। এ সময় সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমাকে একজন বললো যে- জয় এলটিএম চাচ্ছিলো। তো আমি ওইটাই কনফার্ম করতে চাচ্ছিলাম। আসলেই জয় এলটিএম চাচ্ছে কিনা।’ উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘হ্যাঁ, জয় এলটিএম চাচ্ছিলো তো।’
এরপরই মূলত এলটিএম প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা শুরু করেন অথর্ব-অর্বাচীন চক্রটি। তাঁরা এও বলাবলি করেন, ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতেই সরকারের দু’ প্রভাবশালী মন্ত্রী-উপদেষ্টা কথা বলছেন। আসলে এলটিএম সজীব ওয়াজেদ জয়ের কোন কোম্পানি নয়, এটি সরকারের একটি ক্রয় পদ্ধতি।
এলটিএম কী এবং কিভাবে কাজ করে?
সরকারি যে কোন কেনাকাটা প্রক্রিয়াকে তদারকি দায়িত্ব থাকে অর্থমন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান সেন্টাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট সিপিটিইউ। ইন্টারনেট ঘেঁটে সিপিটিইউ ডট জিওবি ডট বিডি ওয়েবসাইটে গিয়ে তাদের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলসের আওতায় প্রকিউরমেন্ট ফ্লো চার্টে গিয়ে দেখা যায় মোট ৯টি পদ্ধতিতে কেনাকাটা সম্পন্ন করে সরকার।
এর মধ্যে রয়েছে- ওপেন টেন্ডারিং মেথড (ওটিএম), লিমিটেড টেন্ডারিং মেথড (এলটিএম), ডিরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম), টু স্টেজ টেন্ডারিং মেথড, রিকুয়েস্ট ফোর কুটেশন মেথড, কিউসিবিএস মেথড, এসএফবি মেথড, এলসিএস মেথড এবং এসএসএস মেথড। এখান থেকেই স্পষ্ট মহল বিশেষের দাবি করা এলটিএম কোন কোম্পানি নয়। আসলে জ্ঞান পাপীরা এই শব্দটিকেই পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করেছেন। এই টেলি আলাপের এলটিএম শব্দকে বিদেশী কোম্পানি হিসেবে দাঁড় করানোর অপপ্রয়াস শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারের প্রভাবশালী দু’উপদেষ্টা ও আইনমন্ত্রীর মানহানির পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার সুগভীর চক্রান্ত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অপপ্রচারকারীদের প্রতি ঘৃণা-ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে
একজন সজীব ওয়াজেদ জয় স্বপ্ন দেখেন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই রোবোটিকস, আইওটি, এআই-সেক্টরে একদিন নেতৃত্ব দেবে বাংলাদেশের তরুণরা। এই লক্ষ্যপূরণে কোমরবেঁধে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে উচ্চ প্রযুক্তির ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব। আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর বসানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে।
দেশপ্রেমিক ও নিবেদিতপ্রাণ সজীব ওয়াজেদ জয়ের হাত ধরেই ভবিষ্যত প্রযুক্তিখাতে বিশ্বে নেতৃত্ব দেওয়ার স্বপ্ন দেখছে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের দৌলতেই বাংলাদেশের জিডিপি শুধুমাত্র ভারত বা পাকিস্তানকেই নয়, চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।
বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের সুযোগ্য, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক কর্মবীর, কোটি তরুণের স্বপ্নসারথি সজীব ওয়াজেদ জয়। প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক অর্থনীতির দেশ হিসেবে বিশ্ব পরিমন্ডলে উপস্থাপন করেছেন সতের কোটির দেশকে।
কিন্তু ওই ফোনালাপকে বিকৃতভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশের আইসিটি বিপ্লবের অগ্রনায়ক সজীব ওয়াজেদ জয়, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপপ্রয়াসকারীদের প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে ঘৃণা-ক্ষোভ। কন্ঠে কন্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রযুক্তি নির্ভর, উন্নয়ন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে যান সজীব ওয়াজেদ জয়। জয় হোক সজীব ওয়াজেদ জয়ের।
ক্ষোভ আইনমন্ত্রীর, তদন্তের কথা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
গত রবিবার সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘আমি টেলিফোনে একজন উপদেষ্টার উত্তর দিচ্ছিলাম। তিনি একটা ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টার একটা প্রজেক্ট ইনফো সরকার, প্রজেক্টটা তাঁর ব্রেইন চাইল্ড, সেটা নিয়ে আলাপ হয়েছে। এখন এই দেউলিয়া যারা, তারা এটা নিয়ে প্রচার করছে। আমার মনে হয়, এটাতো তদন্ত করা হবে। এটাকে গুরুত্ব দেওয়াও আমদের মনে হয় সঠিক হবে না।’
একই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘আমাদের সরকারিভাবে এই রকম রেকর্ড করার কোনো সিস্টেম নেই। এটা যদি করে থাকে তাহলে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে (করেছে)। অন্য কোনো প্রযুক্তি বের হয়েছে কি না দেখার বিষয় আছে। এনটিএমসি একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান যেখানে লফুল ইন্টারসেপশন করতে পারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া মনিটর বা প্রকাশ করতে পারে না। কাজেই অনুসন্ধানের ব্যাপার আছে।’
কালের আলো/এসবি/এমএম