কার স্বার্থে আইজিপিকে নিয়ে ‘তথ্য সন্ত্রাস’?

প্রকাশিতঃ 10:38 am | February 17, 2022

কালের আলো ডেস্ক :

চাদর বা বালিশের কভার কেনার কোন কথাই নেই, সুযোগও নেই। অথচ ভূয়া এই তথ্যে যতো বাগাড়ম্বর। গোয়েবলসীয় কায়দায় একটি মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠায় খিস্তিখেউর করা হয়েছে রীতিমতো। নিজেদের অসৎ এজেন্ডা বাস্তবায়নে ‘পুরনো বোতলে নতুন মদ’ কায়দায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবেই ছড়ানো হয়েছে অপপ্রচার।

বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশের জন্য এক লক্ষ বিছানার চাদর আর বালিশের কভার কিনতে আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ জার্মানি যাচ্ছেন! অবাক করা এই কান্ডের সূত্রপাত হয়েছে অসাবধানতাবশত একটি ভুল জিওতে (সরকারি আদেশ)।

চাদরের রঙের মান পরীক্ষা সফরের অন্যতম প্রতিপাদ্য হলেও সামাজিক মাধ্যমে বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে বিষয়টিকে। অথর্ব এবং মূর্খ চক্রটি ভারী শিল্পের জন্য বিখ্যাত জার্মানিকে বিছানা চাদর উৎপাদন ও রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টার মাধ্যমে কার্যত নিজেরাই ফাঁদেই পা দিয়েছে যেন!

দেশ-বিদেশ সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান রাখেন এমন মানুষ মাত্রই জানেন ইউরোপের এই দেশটি কখনও বিছানার চাদর তৈরিও করে না, রপ্তানিও করে না। মূলত মোটর গাড়ি, জাহাজ, উড়োজাহাজ, ষ্টিল, শিল্পের যন্ত্রপাতি, বা ইলেকট্রিক্যাল প্রভৃতি ভারী শিল্পের জন্য দুনিয়াজুড়ে পরিচিত রয়েছে দেশটির।

কিন্তু পুলিশের আইজি ড.বেনজীর আহমেদকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনৈতিক কানুনে ঘায়েল করতেই জার্মানির হাজার বছরের ঐতিহ্যকে ম্লান করার অপপ্রয়াস চালিয়ে নিজেদের বেকুব সাব্যস্ত করে উল্টো ‘গোল’ খেয়ে বসেছে। বুধবারও (১৬ ফেব্রুয়ারি) অনভিপ্রেত এই ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।

পুলিশ সদর দপ্তরের ফের প্রতিবাদ, বিভ্রান্তি নিরসনের প্রত্যাশা
পুলিশ সদর দপ্তর বলেছে, সম্প্রতি স্যোশাল মিডিয়াতে প্রচারিত আইজিপি পুলিশ বাহিনীর জন্য জার্মানি থেকে ১ লক্ষ চাদর কিনতে দেশটি সফর করছেন মর্মে একটি অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারিত হয়েছে।

এই বিষয়ে প্রকৃত সত্য এই যে, পুলিশ বাহিনী জার্মানি হতে বালিশের কাভারসহ বিছানা চাদর ক্রয় করছে না। তাছাড়া, জার্মানি বিছানা চাদর উৎপাদন ও রপ্তানিকারক কোন দেশ নয়, তারা ভারী শিল্পের দেশ।’

পুলিশ সদর দপ্তর আরও বলছে, সঙ্গত কারণে আইজিপির চাদর, বালিশের কভার কিনতে জার্মানি গমনের কোন অবকাশ নেই। তাছাড়া, গণক্রয় আইন অনুযায়ী সরকারি কেনাকাটায় কোন কর্মকর্তা ব্যক্তিগত সামগ্রীর মতো কোন মার্কেট বা দেশ সফরে গিয়ে কোনো প্রকার সরকারি পণ্য ক্রয় কিংবা সংগ্রহ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া রয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ সব সময়ই স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে স্থানীয় প্রস্তুতকারীদের প্রস্তুতকৃত বিছানা চাদর, বালিশের কাভার ক্রয় করে থাকে। চলতি বৎসরেও অনুরূপভাবে বাংলাদেশ পুলিশ স্থানীয়ভাবে দরপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বিছানা চাদর, বালিশের কাভার সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো: কামরুজ্জামান বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক একটি সরকারি আদেশে অসাবধানতাবশত (Inadvertently) সৃষ্ট ভাষাগত বিভ্রাট প্রসূত তথ্যগত বিভ্রান্তির কারণে স্যোশাল মিডিয়াতে একটি অপপ্রচারকারী চক্র উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এটি গুজব আকারে ছড়িয়ে পুলিশ বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা করেছে। এই বিজ্ঞপ্তির পর এ সংক্রান্ত সকল বিভ্রান্তির নিরসন হবে বলে পুলিশ সদর দপ্তর প্রত্যাশা করে।’

নজিরবিহীন তথ্য সন্ত্রাসের নেপথ্যে কারা?
বিশ্লেষকরা মনে করেন, জার্মানি থেকে পুলিশের জন্য বিছানার চাদর বালিশ কেনার সর্বৈব মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে নজিরবিহীন ‘তথ্য সন্ত্রাস’ চালানো হয়েছে দেশপ্রেমিক পুলিশ ও বাহিনীটির প্রধানকে নিয়ে। আড়ালে আবডালে একটি পক্ষ কলকাঠি নেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন আইডি থেকে ভুল জিওসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

চক্রটি মূলত বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, গর্বিত সহযাত্রী পুলিশ বাহিনী ও ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হিসেবে পরিচিত নন্দিত পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদকেই ‘টার্গেট’ করার ফন্দিফিকির আঁটে। কিন্তু পুলিশ সদর দপ্তর গ্রহণযোগ্য তথ্য প্রমাণের মাধ্যমে পুরো অপকৌশল রুখে দেয়।

সবকিছুই যে নেহায়েত গুজব আর কুচক্রী মহলের কারসাজি এটিও প্রমাণ করে দিয়েছে কাগজে-কলমে। এক্ষেত্রে মূলধারার গণমাধ্যম বিবেকের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হিসেবে পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং সত্য উপস্থাপনেও নিজেদের মুন্সীয়ানার স্বাক্ষর রেখেছে।

অভিজ্ঞ মহল মনে করেন, আইজিপি ড.বেনজীর কেবলই কোন ব্যক্তি নন, তিনি মুক্তিযুদ্ধে পাকিদের বিরুদ্ধে প্রথম বুলেট ছুঁড়া পুলিশ বাহিনীর প্রধান। তিনি একটি প্রতিষ্ঠান।

ডিএমপি কমিশনার, র‍্যাব ডিজি হিসেবে ইতিহাসের অমর অধ্যায় রচনার পর পুলিশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে বহু জঞ্জাল পরিস্কার করেছেন, পুলিশে নব অধ্যায়ের সূচনা করে নিজেকে ঠিকই লিপিবদ্ধ করেছেন আজ ও আগামীর ইতিহাসের সোনালী পাতায়। তাকে ‘বিতর্কিত’ করার হীন প্রয়াস প্রকারান্তরে সরকারকেই বিপাকে ফেলার চক্রান্ত বলেই বিবেচিত হচ্ছে। ঘরে-বাইরে সব ষড়যন্ত্রকারীদের এখনই চিহ্নিত করে ‘মূলোৎপাটন’ করতে না পারলে ভবিষ্যতে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

[দৈনিক সন্ধানী বার্তার সৌজন্যে]

কালের আলো/এমএএএমকে