এবার সু চি’কে দেওয়া সম্মাননা প্রত্যাহার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
প্রকাশিতঃ 11:51 am | November 13, 2018
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, কালের আলো:
মিয়ানমারের ডি ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি’কে দেওয়া ‘অ্যাম্বাসেডর অব কনসায়েন্স অ্যাওয়ার্ড’ সম্মাননা প্রত্যাহার করেছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি জানায়, সু চি তার এক সময়কার নৈতিক অবস্থান থেকে ‘লজ্জাজনকভাবে’ সরে যাওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংস্থাটির মহাসচিব কুমি নাইডু এক চিঠির মাধ্যমে অং সান সু চিকে এই খবর দিয়েছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে গৃহবন্দী থাকার সময় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়েছিল।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের পর সেখান থেকে নতুন করে আরও সাত লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনায় সু চি’র বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠে। এ কারণে এর আগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সু চি’কে দেওয়া তাদের খেতাব প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে, কানাডার পার্লামেন্টের দেওয়া সম্মানসূচক নাগরিকত্ব, ব্রিটেনের অক্সফোর্ড শহরের দেওয়া সম্মাননা, গ্লাসগো নগর কাউন্সিলের দেওয়া ফ্রিডম অফ সিটি খেতাবসহ আরও অনেক সম্মাননা। এই তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হলো লন্ডনভিত্তিক এই সংস্থা – অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সংস্থাটির মহাসচিব কুমি নাইডু চিঠিতে লিখেছেন, ‘আট বছর আগে গৃহবন্দী থাকা নেত্রী ক্ষমতা গ্রহণের পর তার রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার কথা ভুলে সামরিক বাহিনীর চালানো জাতিগত নিধনযজ্ঞ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে ছিলেন উদাসীন।’
তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, ‘সংস্থার একজন দূত হিসেবে সু চি’র কাছে প্রত্যাশা ছিল। শুধু মিয়ানমারের ভেতরে নয়, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের অবিচারের বিরুদ্ধে আপনি আপনার নৈতিক কর্তৃত্ব ও ভূমিকা রাখবেন কিন্তু আমরা গভীর দুঃখ ভারাক্রান্ত। কারণ আপনি আর আশা, সাহস এবং মানবাধিকার রক্ষার প্রতিনিধিত্ব করেন না। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আপনাকে দেওয়া অ্যাম্বাসেডর অফ কনসায়েন্স সম্মাননা অব্যাহত রাখার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছে না।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ‘অং সান সু চি’র নেতৃত্বে বেসামরিক সরকার মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসার পর তার প্রশাসন একাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল। গত বছর নিধনযজ্ঞ চলার সময় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী হত্যা করেছে হাজারো মানুষ। ধর্ষিত হয়েছে অগণিত নারী ও শিশু, আটক ও নৃশংসতার হাত থেকে রেহাই পায়নি বৃদ্ধ, শিশু এবং কিশোরও। শতাধিক গ্রাম আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। নিরাপত্তা বাহিনীর অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় অস্বীকার করে অং সান সু চি ও তার দপ্তর তাদেরকে রক্ষা করেছেন।’
চিঠিতে সংস্থাটি আরও জানায়, ‘রোহিঙ্গাদের পক্ষে অং সান সু চি‘র দাঁড়ানোর ব্যর্থতাই এর মূল কারণ। ভয়ঙ্কর নিপীড়ন এবং নির্যাতনের এসব ঘটনা অস্বীকার করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে কিংবা রাখাইন রাজ্যে অবস্থানরত লাখো রোহিঙ্গার জীবনমান উন্নয়নের বা পরিবর্তনের আশা ক্ষীণ। নৃশংসতা থামাতে ভবিষ্যতে সরকারের উদ্যোগ কেমন হতে পারে তা সহজেই বোঝা যায় যখন একটি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধের কথা অস্বীকার করে রাষ্ট্রযন্ত্র।’
সেখানে বলা হয়, ‘সামরিক বাহিনীর বিস্তর ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আইন তৈরি ও সংশোধনের বেশ কিছু ক্ষমতা ছিল বেসামরিক সরকারের হাতে। কিন্তু অং সান সু চি’র সরকার ক্ষমতা গ্রহণের দু’বছরের মাথায় মানবাধিকার কর্মী, শান্তিকর্মী ও সাংবাদিকদের হুমকি, ভয়, হয়রানি এমনকি কারাবরণও করতে হয়েছে।’
অং সান সু চি সাহায্য করুণ আর নাই করুন, মিয়ানমারে বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে তারা তাদের লড়াই অব্যাহত রাখবে বলেও জানায় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
কালের আলো/এনএম