সামিয়া রহমানের অন্য চাকরির অনুমতিপত্র নেই ঢাবির রেজিস্ট্রার দফতরে

প্রকাশিতঃ 12:42 am | October 05, 2017

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান একটি বেসরকারি টেলিভিশনের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পদেও চাকরি করেন। একজন শিক্ষক মূল চাকরির পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ করতে পারেন। তবে এজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু সামিয়া রহমানের অন্য চাকরির অনুমতির কোনও কাগজ নেই ঢাবির রেজিস্ট্রার দফতরে। টেলিভিশনের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পদে চাকরিটিকে তিনি খণ্ডকালীন দাবি করছেন। তবে এমন শীর্ষপদে চাকরি অস্থায়ী হয় না বলেই মনে করেন দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল।

ঢাবির রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানা যায়, একজন শিক্ষক কেবলমাত্র একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি পান। তবে শর্ত হচ্ছে, এক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের বিভাগের নিয়মিত কাজকর্মের কোনও বিঘ্ন ঘটাবেন না। এছাড়া, একটি স্থায়ী চাকরির পাশাপাশি অন্য কোনও স্থায়ী পদে চাকরি করার নিয়ম নেই। তবে স্থায়ী চাকরি করতে হলে শর্তসাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অনুমতি নিতে হয়।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান ও ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজানের বিরুদ্ধে একটি নিবন্ধে দার্শনিক মিশেল ফুকোর নিবন্ধের বিভিন্ন অংশ থেকে লেখা কপি করার অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করে ঢাবির সিন্ডিকেট। পরে তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন দার্শনিক এডওয়ার্ড সাঈদের লেখাও কপি করার অভিযোগ আসে কর্তৃপক্ষের হাতে। এর পর সামিয়া রহমানের একইসঙ্গে দুটি চাকরি করা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন দেখা দেয়।

একইসঙ্গে দুটি চাকরি করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম সরওয়ার ভূইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষকরা অন্য কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি, দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ছুটি, দেশের বাইরে স্কলারশিপ নিয়ে যাওয়ার জন্য ছুটি অথবা স্থায়ী কোনও চাকরি নিয়ে ছুটি চাইলে রেজিস্ট্রার দফতর বরাবর অফার লেটারসহ আবেদন করতে হয়। পরে নিয়ম অনুযায়ী তার ছুটি মঞ্জুর অথবা নামঞ্জুর করা হয়।’

খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি কিভাবে মেলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন শিক্ষক কেবলমাত্র একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই কাজের অনুমতি পাবেন। তবে কেউ যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই সিন্ডিকেট সভা থেকে অনুমতির প্রয়োজন হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায় কোনও শিক্ষক অন্যত্র স্থায়ী পদে চাকরি করতে চাইলে সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে তা করতে পারেন। তবে চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ চার বছরের জন্য বিনা বেতনে ছুটি নিয়ে দেশে বা দেশের বাইরে স্থায়ী পদে চাকরি করতে পারেন।’

ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান বর্তমানে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পদে চাকরি করছেন। এর আগেও তিনি আরেকটি টেলিভিশন চ্যানেলের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এবং প্রোগ্রাম এডিটর হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু তার অন্যত্র চাকরির অনুমতি বিষয়ে কোনও চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে নেই জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী রেজিস্ট্রার মোক্তার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিনি (সামিয়া) আবেদন লিখেছিলেন উপাচার্য বরাবর। তাই তিনি অনুমতির চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে আনলেও সেটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে তার কাজে অনুমতির কোনও চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে  নেই। তিনি যদি অন্যত্র কাজের অনুমতি পান তাহলে তৎকালীন উপাচার্যই তা দিয়েছেন। অনুমতি পেয়েছেন কিনা তার কোনও নথি বা এ সংক্রন্ত কোনও চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দাবি করেন সামিয়া রহমানের অন্যত্র খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি রেজিস্ট্রার দফতরের মাধ্যমেই হয়েছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামিয়া রহমানের অন্যত্র খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি আমি দিয়েছিলাম। আর সেটি রেজিস্ট্রার দফতরের মাধ্যমেই হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামিয়া রহমানসহ যাদের বিরুদ্ধে হঠাৎ নানা অভিযোগ উঠছে, তারা সবাই সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠজন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিক্ষকরা খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি চাইলে রেজিস্ট্রার দফতর বরাবর আবেদন করতে হয়। তারপর উপাচার্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। কিন্তু যে অনুমতিগুলো সিন্ডিকেট পাঠানোর প্রয়োজন হয়, সেগুলো সেখানেই পাঠানো হয়। অনুমতি পাওয়ার পর রেজিস্ট্রার দফতরই তা বাস্তবায়ন করে।’

সামিয়া রহমান বরাবরই দাবি করছেন, তিনি ফ্রিল্যান্স হিসেবে টেলিভিশনটির হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পদে চাকরি করছেন। এর আগেও তিনি যে টেলিভিশনগুলোতে কাজ করেছেন সেখানেও ফ্রিল্যান্স হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি গত শুক্রবার এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছিলেন, ‘আমি বর্তমানে একটি বেসরকারি টেলিশনে ফ্রিল্যান্স হিসেবে কাজ করছি। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যথাযথভাবে অনুমতিও নেওয়া আছে।’

হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, হেড অব নিউজ পদগুলো খণ্ডকালীন হতে পারে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজ) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে একটি পেশাগত কাঠামো রয়েছে। চিফ রিপোর্টার, নিউজ এডিটর, হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, হেড অব নিউজ­– এগুলো  মৌলিক পদ। সেগুলো কখনোই খণ্ডকালীন হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, এই পদগুলোতে যারা চাকরি করেন তাদের সার্বক্ষণিক কাজের মধ্যে থাকতে হয়, চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। তবে টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এখনও সেভাবে পেশাগত কাঠামো ঠিক করা নেই। তবে মৌলিক পদ হওয়ায় খুব স্বাভাবিকভাবে এগুলো স্থায়ী পদ। ফলে এগুলো খণ্ডকালীন হওয়ার সুযোগ নেই।’

বাংলা ট্রিবিউন