সত্যকে সহজভাবেই নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা

প্রকাশিতঃ 9:07 pm | March 19, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীশূন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন মরুভূমির মতোই। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনার বিপর্যস্ত সময়ে এমনই দৃশ্য ছিল দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেন ঘরে হাতগুটিয়ে অলস বসে না থাকে, শিক্ষা জীবন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকেই তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

আরও পড়ুনঃ কবি সুকান্তের পৈতৃক ভিটা ঘুরে আবেগমথিত শিক্ষামন্ত্রী

অনলাইন ক্লাস এবং অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম জোরদার করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিপর্যস্ততা কাটিয়ে তুলতে প্রাণান্তকর প্রয়াস গ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরোদমে খুলে দেওয়ার মাধ্যমেও প্রাণের সঞ্চার করেছেন প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। তাঁর মা নিজেও একজন বরেণ্য শিক্ষক হওয়ায় সম্ভবতই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন রক্ষায় তাঁর নিয়ামকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার বিষয়টি আশাবাদী করে তুলেছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাবীদদের।

আরও পড়ুনঃ কী বার্তা দিলেন তিন মন্ত্রী?

করোনায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছেন দেশের প্রথম এই নারী শিক্ষামন্ত্রী। দীর্ঘ সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি তিনি মূল্যায়ন করেছেন। ক্ষতির এই প্রভাব যেন দীর্ঘমেয়াদী না হয় সেদিকেই নিজের নজর রেখেছেন।

শিক্ষার্থীদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সে লক্ষ্যেও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ‘সত্যরে লও সহজে’ মানসিকতার শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি শনিবার (১৯ মার্চ) গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার পথে বরিশাল বিমানবন্দরে অপেক্ষমান গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে দিয়েছেন সরল স্বীকারোক্তি।

তিনি বলেছেন, ‘করোনার প্রাদুর্ভাবকালে অনলাইন ও টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা ৬০ থেকে ৬৫ ভাগের বেশি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পারিনি। অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে ৯৩ ভাগের মতো শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলাম।’ একটি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেছেন।

তিনি শিক্ষার্থীদের করোনাকালীন ঘাটতি পোষাতে সরকার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন তেমনি এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতাও প্রত্যাশা করেছেন। শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের ক্ষতিগুলো মোটা দাগে জেনেছেন। নিশ্চিত হয়েই পুরোমাত্রায় কাজ শুরু করে দিয়েছেন।

সেই তথ্যই মন্ত্রী উচ্চারণ করেছেন বরিশালে বিমানবন্দরে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে। ডা: দীপু মনি এমপি বলেছেন, ‘আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। অ্যাসাইনমেন্টগুলোর মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারছি কোথায় কী ঘাটতি আছে। আর শিক্ষকরাও অ্যাসেস করছেন। সারাবিশ্বেই ক্ষতি হয়েছে, আশা করি শিক্ষক-অভিভাবকসহ সবার সহযোগিতায় নিশ্চয়ই আমরা ঘাটতি পুষিয়ে উঠতে পারবো।’

জানা যায়, দেশে বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত প্রায় ৪ কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মধ্যে রাখতে কার্যকর নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। মাধ্যমিকের এবং প্রাথমিকের রেকর্ড করা ক্লাস সংসদ টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। দূরশিক্ষণের (সংসদ টিভি, রেডিও, অনলাইন ও মোবাইল) মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়ে।

করোনায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা পড়েন বিপাকে। এ সময়ে উচ্চমাধ্যমিকের চৌকাঠ পেরোনো নিয়েই অনিশ্চয়তার কালো মেঘ জমে। ২০২০ সালে এ কারণে উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষায় বসানো সম্ভব হয়নি শিক্ষার্থীদের। সবাই পান ‘অটোপাস’। কিন্তু এবার সেই পথে হাঁটেননি শিক্ষামন্ত্রী।

২০২১ সালের উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। শিক্ষার্থীরাও বেশি সময় প্রস্তুতি নিতে সক্ষম হন। সাবজেক্ট ম্যাপিংয়েও তাঁরা এগিয়ে যান। ফলে এবারের ফলাফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিজয় কেতন উড়ান। ১৩ লাখ ৭১ হাজার ৬৮১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩ লাখ ৬ হাজার ৭১৮ শিক্ষার্থী কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন। পাসের হারও ছিল অভাবনীয়, ৯৫.২৬ শতাংশ। জিপিএ ৫ পান ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ শিক্ষার্থী।

ফল প্রকাশের পর শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসের মতোই চেনা হাসি ছিল শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির মুখেও। শিক্ষার্থীদের আলোকময় উজ্জ্বল ভবিষ্যত উপহারে শিক্ষার মানোন্নয়নে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে চলেছেন তিনি। করোনার দু:সময়ে পরীক্ষা নেওয়ার পর অসাধারণ ফলাফল মন্ত্রীর কঠিন চ্যালেঞ্জে উত্তীর্ণ হওয়ার বার্তাই দিয়েছে। একই সঙ্গে এটি সরকারের বড় সাফল্য হিসেবেই উপস্থাপিত হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে রেমিডিয়াল ক্লাস বা প্রতিকারমূলক ক্লাস নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের পুনর্বিন্যাস করা সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলার জন্য সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। শিক্ষামন্ত্রী সেই সোনার মানুষ তৈরি করতে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

দৃঢ়তার সঙ্গেই তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার অনেক কমে গেছে। আমরা সবাইকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে পেরেছি। শিক্ষার মানোন্নয়নে কাজ করছি। আমরা চাইছি শুধু শিক্ষা নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে সব বিষয়ে দক্ষতা বাড়িয়ে দক্ষ ও ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। বঙ্গবন্ধু যেমন সোনার বাংলায় সোনার মানুষ চেয়েছেন। আমরা সেই সোনার মানুষ তৈরি করছি।’

পরীক্ষার সময় ও নম্বর কমিয়ে আগামী ১৯ মে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা এবং ১৮ জুলাই এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা আয়োজনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যেই শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি ঘোষণা দিয়েছেন ২০২৩ সালেও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার কথা। শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমিয়ে আনন্দময় মানসিকতা নিশ্চিত করতেই তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।

কালের আলো/এসবি/এমএম