কবি সুকান্তের পৈতৃক ভিটা ঘুরে আবেগমথিত শিক্ষামন্ত্রী
প্রকাশিতঃ 10:51 pm | March 19, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী/ অবাক তাকিয়ে রয়:/ জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়’- কবি সুকান্তের এই পঙক্তিমালা সম্ভবত তাঁর কন্ঠে উচ্চারিত সর্বক্ষণ। কবির লেখনীতে ফুটে উঠা সাধারণের জীবন-সংগ্রামের ধারাপাত বা যন্ত্রণা, গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাণী আন্দোলিত করে তাকেও। আধুনিক কাব্যভাষার স্বতন্ত্রে অনন্য সুকান্তের গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় পৈতৃক ভিটা ঘুরে চিহ্নহীন মূল ভিটির ওপর পাঠাগার আর মুজিব কর্ণার ঘুরে দেখে আবেগমথিত হলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি।
আরও পড়ুনঃ সত্যকে সহজভাবেই নিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা
ছন্দ আর ভাষার শৈলীতে স্বচ্ছন্দ, বলিষ্ঠ ও নিখুঁত ভাষায় তুলে ধরেছেন প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী কিশোর কবির পৈতৃক ভিটার হাল। পন্ডিত পান্নালাল ঘোষ আর সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার সুন্দর দিককে উপস্থাপনার মাধ্যমেও যেন করেছেন একাত্ম। বরিশাল তাঁর কাছে ভালোবাসা-শ্রদ্ধার জায়গা। এক কথায় ‘গুরু তীর্থ’।
শনিবার (১৯ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের ভেরিফাইড ফেসুবক পেইজে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈতৃক ভিটা ঘুরে দেখানোর বিষয়টি জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি। এদিন দুপুরে তিনি উপজেলার আমতলী ইউনিয়নের উনশিয়া গ্রামে কবি সুকান্তের পৈতৃক ভিটা ঘুরে দেখেন। সময় কাটান কবি সুকান্ত লাইব্রেরি ও মুজিব কর্ণারে। এ সময় স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস ওয়াহিদসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্তকর্তারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
আরও পড়ুনঃ কী বার্তা দিলেন তিন মন্ত্রী?
আকাশ থেকে বরিশাল, কবি সুকান্তের পৈতৃক ভিটার তিনটি ছবি পোস্ট করে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি লিখেছেন- সভায় অংশ নিতে। বিমানে বরিশাল হয়ে যাচ্ছি গন্তব্যে। বিমান থেকে কীর্তনখোলার রূপ দেখে মনে পড়লো এ নদীর ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া ছোট্ট একটি বাঁশি একদিন তুলে নিয়েছিলো এক দুরন্ত কিশোর। সে কিশোর একদিন পরিনত হয়েছিলো উপমহাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তীতে। ছোট্ট রাখালিয়া বাঁশিটি তাঁর হাতে পরিনত হয়েছিলো ধ্রুপদী সঙ্গীত যন্ত্রে, যে বাঁশির বাদনে মুগ্ধ হয়েছিলো সমগ্র উপমহাদেশ। তিনি পন্ডিত পান্নালাল ঘোষ।
কীর্তনখোলা, সুগন্ধা, আড়িয়াল খাঁ, বিষখালি, আগুনমুখা, বলেশ্বর, ধানসিঁড়ি, ইলিশা, সন্ধ্যা, পায়রা আর আরও বহু নদী বিধৌত বৃহত্তর বরিশালে জন্ম নিয়েছেন বহু গুনীজন। আজ স্বল্প সময়ের জন্য বরিশালে এলাম। বিনম্র শ্রদ্ধা বরিশালের সকল গুনীজনকে যাঁরা আমাদের রাজনীতি, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রেখেছেন।
বরিশাল থেকে টুঙ্গিপাড়ার পথে কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ালাম কোটালিপাড়ায় কবি সুকান্তের জন্মস্থানে। মূল ভিটির কোন চিহ্ন নেই, শুধু সে জমির ওপর নির্মিত হয়েছে একটি পাঠাগার। সামনে আছে কবির একটি ভাষ্কর্য। পাঠাগারের ভেতরে কবির বাড়ি থেকে সংগৃহীত কিছু দ্রব্য দেখবার জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম বাংলার সঙ্গীত জগতের নক্ষত্র সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তীর বাড়িটিও আর নেই। সে জায়গায় এখন কোটালিপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়। সঙ্গীতাচার্যের নিজের জন্মস্থানের নামেই পরিচিতি পেয়েছিলো তার সঙ্গীতের ঘরানা – কোটালি ঘরানা।
পন্ডিত পান্নালাল ঘোষ আর সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তীর সাথে আমার শ্বশুর, স্বামী আর পুত্র-কন্যার সূত্রে আমি গভীর আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ। প্রথমজন আমার শ্বশুর আমিনর রহমানের গুরু। দ্বিতীয়জন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এ বন্ধুত্ব এখন কয়েক প্রজন্মের। ধ্রুপদী সঙ্গীত চর্চার শুদ্ধতার নির্যাস দিয়ে তৈরি এ সম্পর্ক। আমার জন্য, আমার পরিবারের জন্য বরিশাল তাই আপন জায়গা, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার জায়গা। গুরু-তীর্থ।’
কালের আলো/বিএসবি/এমএন