‘গর্বিত’ নসরুল হামিদ বিপু, উচ্ছ্বাস স্বপ্নের পূর্ণতায়

প্রকাশিতঃ 11:42 pm | March 21, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ ধারণাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। জাতির পিতার চির আরাধ্য এই স্বপ্ন হয়েছে বাস্তব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শতভাগ বিদ্যুতের আলোয় ভরিয়ে দিয়েছেন দেশকে। অসম্ভবকে করেছেন সম্ভব। স্বপ্নছোঁয়ার মাহেন্দ্রক্ষণটিতে স্বভাবতই অপরিমেয় আনন্দ-উচ্ছ্বাস তাঁর মন-মননে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নিজের মুখেই উচ্চারণ করলেন- ‘শতভাগ বিদ্যুতায়নের এই কর্মযজ্ঞে আপনার (প্রধানমন্ত্রী) একজন ক্ষুদ্রকর্মী হিসেবে আপনার পাশে থাকতে পারে আমি গর্বিত।’

আরও পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধুর আলোকিত বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ করলেন শেখ হাসিনা

সোমবার (২১ মার্চ) পটুয়াখালীর পায়রায় দেশের সবচেয়ে বড় এবং অত্যাধুনিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশকে শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় আনার অনুষ্ঠানটিতে নিজেকে অন্যভাবেই যেন মেলে ধরলেন তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই রাজনীতিক। শতভাগ বিদ্যুতায়নের স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর আর সেই আলোকিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে-সবকিছুই উপস্থাপন করলেন যুক্তিনির্ভর তথ্য-উপাত্তের মাধ্যমেই। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন নিজের পূর্বসূরীদের প্রতি, যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন এই মন্ত্রণালয়কে।

আরও পড়ুনঃ বরণে নতুনত্ব বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের, মোহিত প্রধানমন্ত্রীও

দেশের মাত্র ৪৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেতো
বিদ্যু, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এমপি সভাপতির বক্তব্যে বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ দায়িত্ব নেয় তখনও দেশের মাত্র ৪৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেতো। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের সুর্বণজয়ন্তীর সময় আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন শতভাগ বিদ্যুতায়ন। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’-এই মূলমন্ত্রে দুর্গম পাহাড় থেকে বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল সব জায়গাতেই বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।

আরও পড়ুনঃ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে বাংলাদেশের পথচলাকে আরও বেগবান করবে বিদ্যুৎ খাত

দেশের দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন চরে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করা হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ে গ্রিড লাইনে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে সম্ভব হয়নি, সেখানেও বিকল্প ব্যবস্থায় সোলার সিস্টেমের মাধ্যমে বিদ্যুতায়ন করেছি আমরা।

আমাদের বিদ্যুৎ কর্মীরা নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে এই অসাধ্যকে সাধন করেছে। এই করোনা মহামারিতেও সুপার সাইক্লোন আঘাত হানলেও আমাদের কাজ থেমে থাকেনি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নতি লাভে চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে।

মানুষের মাথা পিছু আয় বেড়েছে, খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হয়েছে। কর্মসংস্থান বেড়েছে। বেড়ে গেছে মানুষের জীবনমান। আর এর সবকিছুর পেছনে বিদ্যুৎ খাতের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’

‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’, এই ধারণা স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’, এই ধারণা স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭২ সালে রচিত মহান সংবিধানের ১৬ নম্বর অনুচ্ছেদে বিদ্যুৎকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। ফলে বিদ্যুতের প্রাপ্যতা এই দেশের সকল মানুষের সাংবিধানিক অধিকার হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সুদূর প্রসারিত সিদ্ধান্তে সিদ্ধিরগঞ্জ, ঘোড়াশাল এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার হাব প্রতিষ্ঠা করা হয়। লোড সেন্টার বিবেচনায় উক্ত পাওয়ার হাবগুলো এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে।

৭৫এর পরবর্তী স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে পঙ্গু করে দেয়। এমন অচল অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নানা সংগ্রাম আর ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে বিবেচনা করে নানা সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করেন।’

তিনি বলেন, ‘এ সময়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন বেসরকারি খাতে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে প্রাইভেট পাওয়ার জেনারেশন পলিসি প্রণয়ন করা হয়। এর ফলে বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে বেসরকারি অংশগ্রহণ প্রায় ৫০ ভাগে দাঁড়িয়েছে। ২০০১ সালে স্বাধীনতা বিরোধী বিএনপি-জামাত জোটের শাসন আমলে বিদ্যুৎ খাতে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। সারাদেশ নিমজ্জিত হয় অন্ধকারে, জনজীবনে নেমে আসে স্থবিরতা।

বিদ্যুতের হাহাকার এবং খাতের অচলায়তন ভাঙতে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তার দিনবদলের ইশতেহারে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। তিনি বাংলাদেশের জনগণকে ওয়াদা দিয়েছিলেন সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার। যা আজকে আর কোন স্বপ্ন নয়, বাস্তব।’

নসরুল হামিদ এমপি বলেন, ‘পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে নির্মিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র। বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ হয়েছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিশ্বের ১৩তম দেশ হিসাবে বাংলাদেশ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। সময়মতো কার্যক্রম শেষ করাতে পারা মেগা প্রকল্পে অনন্য উদাহরণ এই পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। নির্ধারিত সময় মধ্যেই শেষ করতে পারা বিদ্যুৎ বিভাগের এক অনন্য অর্জন।

প্রকল্পটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য ধন্যবাদ জানাই নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড এবং বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে। ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ চায়না কোম্পানি লিমিটেড’র চেয়ারম্যান এবং প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিব ডা. আহমদ কায়কাউস এবং বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলমকে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আপনাদের দারুন টিম ওয়ার্ক’র জন্যই আমরা এই কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি। ’

নিজেও বিশ্বাস করতে পারেননি
৮ বছর আগের ঘটনাপ্রবাহের স্মৃতিচারণ করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন, দিকনির্দেশনা ছাড়া এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন কখনো সম্ভব হতো না। একটি কথা না বললেই নয়, ২০১৪ সালের বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন পায়রা ধানখালীতে এই প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিকল্পনার কথা জানালেন, সত্য বলতে কি তখন আমিও বিশ্বাস করতে পারিনি এখানে এরকম মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব। আমাদের প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শী, ভবিষ্যৎদ্রষ্টা, আমরা যা দেখতে পাইনা, ওনি তা ঠিকই দেখতে পান। তাই এ বিশাল কর্মযজ্ঞ অতিদ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালের নির্বাচনের ইশতেহারে শতভাগ বিদ্যুতায়নের যে ঘোষণা দিয়েছিলেন আজ তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই দেশের সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। আপনার দূরদর্শী নেতৃত্ব, ভবিষ্যৎমুখী চিন্তা ভাবনা, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং জনগণের প্রতি আপনার দায়বদ্ধতা তা আমাদের দেশের মানুষের জন্য কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়। শতভাগ বিদ্যুতায়নের এই কর্মযজ্ঞে আপনার একজন ক্ষুদ্রকর্মী হিসেবে আপনার পাশে থাকতে পারে আমি গর্বিত।’

কালের আলো/বিএসব/এনএন