‘অধূমপায়ী’ তথ্যমন্ত্রী, রক্ষা করেছেন বাবার সঙ্গে দেওয়া ওয়াদা
প্রকাশিতঃ 12:20 am | March 23, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
ক্যান্সারে মমতাময়ী মা’কে হারিয়েছেন নিজের দুরন্ত শৈশবে। চিকিৎসকের পরামর্শে সিগারেট বর্জন করেছিলেন তার বাবাও। ওই সময়েই বাবা ওয়াদা করিয়েছিলেন নিজের সন্তানকে, কখনও সিগারেট না খেতে। আজও সেই ওয়াদা রক্ষা করেছেন। জীবনের ৫৮ বছর অধূমপায়ী থেকেছেন। পুরোপুরি তামাকবিহীন দীর্ঘ পথচলার এই গল্পটি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ’র।
আরও পড়ুনঃ নিশ্চিত হয়নি ধূমপানমুক্ত পরিবেশ
তাঁর এই পথচলা গ্রাম্য ভাষায় প্রচলিত ‘থলি যদি ভালো হয়, তাহলে সেখানে ভালো কিছু থাকবে। আম যদি মিষ্টি হয়, তাহলে তার আঁটিও মিষ্টি হবে’- প্রবাদকেই মনে করিয়ে দিয়েছে। অর্থাৎ আদর্শ পরিবারের সন্তান সুসন্তান হবে এটাই স্বাভাবিক, যেমনটি হয়েছেন বীর চট্টলার এই সন্তান।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সংসদ সদস্যদের স্বাস্থ্য সংগঠন ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং’ আয়োজিত এক সেমিনারে নিজের জীবনের এই অজানা অধ্যায়কেই প্রথমবারের মতোই প্রকাশ্যে এনেছেন সরকারের অন্যতম এই নীতি নির্ধারক। একজন অধূমপায়ী এই মন্ত্রীর বক্তব্য সবাইকে দায়িত্ববান হওয়ার বার্তাও দিয়েছে।
পারিবারিক শিক্ষা উপদেশ একটি শিশুর জীবনে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করতে পারে।ছোট বয়সের সুশিক্ষা প্রতিটি মানুষের সারা জীবনের সেরা পাথেয় সেই মর্মবাণীও উচ্চারিত হয়েছে মন্ত্রীর কন্ঠে। ধূমপানমুক্ত থেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে নিজেদের সন্তানকে গড়ার জন্য প্রতিটি পরিবারের পালন করতে হবে অগ্রণী ভূমিকা-এমন বার্তাও দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ডা. হাছান মাহমুদ নিজের জবানীতে তুলে এনেছেন ধূমপানের মতো বদঅভ্যাস থেকে নিজেকে দূরে রাখার বিষয়টি। মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘আমার জীবনে আমি কখনো একটি সিগারেট খাইনি। অনেকে জানেন না সেজন্যই বলবো, আমার মা ছোটবেলায় মারা যান। যখন আমার বয়স সাত বছর। আমার মা মারা যান ক্যান্সারে। আমার বাবা বেশি সিগারেট খেতেন। একদিন ডাক্তারের কাছে গেলেন, কাশি হচ্ছিল।
তখন ডাক্তার তাকে বললেন— আপনার সিগারেট খাওয়া বন্ধ করতে হবে। এভাবে সিগারেট খেলে ক্যান্সার হতে পারে। তারপর বাবার ঘরে এসে রাতের বেলা আমাকে ওয়াদা করিয়ে বললেন, একটা ওয়াদা কর। জীবনে কখনো সিগারেট খাবি না। বাবার কাছে ওয়াদা করেছিলাম এবং আমি আর জীবনে সিগারেট খাইনি।’

তিনি বলেন, ‘পারিবারিক শিক্ষা, উপদেশ সেটি মানুষের জীবনে কত বড় ভূমিকা রাখে। সেটিই আমি আমার জীবনের যদি পেছনে ফিরে তাকাই তাহলে আমি দেখতে পাই এবং আমাদের দেশে যদি পরিবার থেকে সবাই শিশু-কিশোরদের উদ্বুদ্ধ করে সিগারেট না খাওয়ার জন্য, তাহলে আমি মনে করি যে ধূমপায়ীর সংখ্যা আরো কমে যাবে।’
দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমেছে দাবি করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের ধূমপায়ীর সংখ্যা অনেক কমেছে। আগের তুলনায় মানুষ যত বাড়ছে, হয়তো সংখ্যা সেভাবে কমছে না। ধূমপায়ীর সংখ্যা অনেক কমেছে। এর পেছনে বড় কারণ হচ্ছে প্রথমত আমাদের আইন করা হয়েছে, জনসমক্ষে সিগারেট বিরুদ্ধে আইন করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত: সামাজিক প্রচারণা আছে প্রচুর। এ সমস্ত কারণে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমেছে।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাবিবে মিল্লাত বলেন, ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং- এর মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় নানান কার্যক্রম পালন করছে। তারই ধারাবাহিকতায় ফোরামের পক্ষ থেকে আমরা বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বরাবর ১৫২ জন সংসদ সদস্যের স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়েছি। আমরা ১৫৩ জন সংসদ সদস্য মিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর ই-সিগারেটসহ তামাক আইন সংশোধনের ডিও লেটার প্রদানের মাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছি। সকল তামাকপণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধির জন্য অর্থমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি
আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, দ্রুতই তামাক আইন সংশোধন করবেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল সে অনুযায়ী অনেকটা পথ এগিয়েছে। আমরা আশাবাদী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ বাস্তবায়নে আমাদের এই উদ্যোগ পথে অনেকটা এগিয়ে নেবে।’
সভায় অন্যদের মধ্যে সংসদ সদস্যদের মধ্যে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম ও সমন্বয়কারী জনাব হোসেন আলী খান্দকার। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস্ বিশ্ববিদ্যালয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষণা সেলের প্রতিনিধি জনাব শেজাল শার, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিবৃন্দ, তামাক-বিরোধী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, অন্যান্য এনজিও ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
কালের আলো/বিএস/এমএম