তবে কী ‘বিগ লাই থিওরি’-র কবলে শিক্ষামন্ত্রীর ভাই টিপু?
প্রকাশিতঃ 5:30 am | March 27, 2022

পলিটিক্যাল এডিটর, কালের আলো :
শুধু একবার নয়, একাধিকবার মিথ্যাকেই একটি ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আদর্শিক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয়, নিজেদের ভাগ্যের খোলনলচে পাল্টে দিতেই তৃণমূলে একেবারেই ‘অচ্ছুত’ এবং ‘অপাংক্তেয়’ কেউ কেউ আদাজল খেয়েই নেমেছেন তাঁর বিরুদ্ধে। হাত মিলিয়েছেন ‘মাইনাস শেখ হাসিনা’ ফর্মুলার রূপকারদের সঙ্গেও! হয়েছেন ওয়ান ইলেভেনের অনির্বাচিত, অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক সরকারের কর্মকান্ডে নেতৃত্বদানকারীদের ‘বশংবাদ’।
শুরু হয়েছে অবিমৃষ্য তথ্যের অভিযান! প্রথমেই ‘টার্গেট’ তাঁর আপন ছোট বোন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি। এরপর স্বভাবতই ডা: জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপু নিজেই। পরিকল্পিত এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাকে নিয়েও ছড়ানো হচ্ছে বিষোদগার। নানা বাহানায় নিজেদের গায়ের দুর্গন্ধ ধুয়ে-মুছে দিতে ‘বিগ লাই থিওরি’-র অপকৌশলকে পূর্ণমাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রতিহিংসায় মিথ্যাকে নিজেদের স্বার্থ প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার বানাতেই আওয়ামী রাজনীতির বিশুদ্ধ রক্তধারার টিপুকে রাজনীতিতে ‘বলি’ দেওয়ার ‘খোয়াব’ দেখছেন। রাজনীতির কাদা গায়ে মেখে বড় হওয়া কর্মীবান্ধব গণমুখী চরিত্রের জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদকে নিয়ে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের সহায়তায় মঈন-ফখরুদ্দিন সরকারের উপকারভোগীদের অপতৎপরতাকে অবশ্য ফুৎকারেই উড়িয়ে দিয়েছেন চাঁদপুর আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
তৃণমূলের পরিস্কার ভাষ্য হচ্ছে- জনকল্যাণ আর জনস্বার্থ রক্ষাই মন্ত্রী দীপু মনি এবং তাঁর ভাই টিপুর রাজনীতির মূল সুর। জরুরি সরকারের বলয়ের সঙ্গে নিজেদের দলীয় একশ্রেণির প্রকাশ্য ও গোপন প্রেম-প্রণয়ের কথা তাঁরা নিজেরাও জানেন। দুুর্দিনে পরীক্ষিত, সৎ, সরল ও বিনয়ী দীপু মনির পরিবারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ করতে পাকিপ্রেমী ও ক্রিয়াশীল শক্তির অপতৎপরতা ও চক্রান্ত ঐক্যবদ্ধ সাহসী ভূমিকার মাধ্যমেই তৃণমূল রুখে দেবে।
আওয়ামী লীগের তৃণমূলের ভাষ্য হচ্ছে- প্রতিবার নির্বাচনের আগেই পাক প্রেমে হাবুডুবু ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা সরকার দলীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে ‘প্রোপাগান্ডা লিস্ট’ তৈরি করে মিথ্যাকে ফোকাস করে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলে। মন্ত্রী ও তাঁর ভাই’র ‘ভাবমূর্তি সঙ্কট’ তৈরির লালিত বাসনার আলোকে মতাদর্শগত সিদ্ধান্তে গোয়েবলস থিওরিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের অনৈতিক বিবেচনাবোধকেই চক্রটি যেন সামনে এনেছেন।
তাঁরা আরও বলছেন, এই সময়ে সত্য-মিথ্যা যাচাই করাও কোন কঠিন কাজ নয় মোটেও। এর মাধ্যমে মূলত সাময়িকভাবে পাবলিককে বোকা বানো যায় বটে তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি অর্থহীন ও অকার্যকর হয়েই ঠেকে। যারপরেনাই কেউ কেউ অনেক বছর পরেও নিজের ভুল স্বীকার করে ‘প্রকাশ্যে’ ক্ষমা চান। কেউ আবার ‘তওবা’ করেন। ইতিহাস কিন্তু সেই কথাই বলে।
খাস জমি দখলের মিথ্যাচার-ভাঁওতাবাজির অভিযোগকে ‘চ্যালেঞ্জ’ ডা: টিপুর
খাস জমিতে খামারের কথিত অভিযোগে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদের জ্যেষ্ঠ সন্তান, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা: জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপু। চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ৪ নম্বর নীলকমল ইউনিয়নের বাহেরচরে নিজের ৩২ একর জমির বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন।
দলিল আর দাগ নাম্বার উল্লেখ করে জমির মালিকদের সন্তুষ্টির পাশাপাশি চাহিদামাফিক মূল্যে কিনেছেন বলেও দৃঢ়তার সঙ্গেই জানিয়েছেন। পাশাপাশি জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কোন অনিয়ম বা বেআইনি কার্যক্রম ঘটে থাকলে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যাক্তিদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন।
ডা: টিপু’র বক্তব্য হচ্ছে-‘আমি ২০১৯ সালের মার্চ মাসে দলিল নং ৩২৫, ৩৮১, ৫৪০, দাগ নং-৪৮ এর মাধ্যমে ২৪ একর জমি এবং ৩২৮নং দলিল দাগ নং- ৪৯ এর মাধ্যমে ৮.৭৫ একর জমি ক্রয় করি। জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সকল কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করে জমি ক্রয় করেছি। হাইমচর সাব রেজিষ্ট্রি অফিস সমস্ত আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের নামে দলিল করে দেয়। আমরা যে জমিগুলো ক্রয় করেছি ও আমাদের নামে রেজিষ্ট্রি হয়েছে, সে সকল জমির ব্যাপারে পূর্বে বা এখনো জমির মালিকগণ কোন অভিযোগ করেননি। জমির মালিকরা যে মূল্য চেয়েছে তা দিয়েই জমি ক্রয় করেছি।’
পরবর্তীতে আমরা যখন খামারের এলাকা বৃদ্ধির জন্য আরও জমি কেনার উদ্যোগ নেই। তখন হাইমচর ভূমি অফিস আমাদের জানায় যে সকল জায়গা আমরা ক্রয় করতে চাই, সেই সকল জায়গা নিয়ে শরিয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার সীমানা বিরোধ আছে সুতরাং সাময়িকভাবে সেই সকল জমি হাইমচর রেজিষ্ট্রি অফিস রেজিষ্ট্রি করে দিতে পারবে না। সুতরাং আমরা পরবর্তীতে আর এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নেইনি। ৪১৫নং দলিল ও ৬৮১নং দলিলের যে কথা বলা হয়েছে সেই জমিগুলোর দাগ নম্বর হল ৫৪২, ৮১, ৮৫, ৯০ এই সকল জমির সাথে খামারের জমির কোন সম্পর্ক নেই।’
প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে খামারের কোন জায়গা নেই জানিয়ে ডা: জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ বলেন, ‘হাইমচর ভূমি অফিস কিছুদিন পূর্বে আমাদের দাগের দলিলগুলো দেখতে চেয়েছিলেন। আমরা আমাদের সকল দলিল পত্র দেখিয়েছি। ওনারা পর্যালোচনা করে বলেছেন কোন অনিয়ম নেই এবং আমাদের জমির সাথে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চলের কোন সম্পর্ক নেই। বাহের চর মৌজা অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে।’
জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে কোন জোর জবরদস্তির ঘটনা ঘটেনি বলেও দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে জানিয়েছেন টিপু। তিনি বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে জোর করে জমি কিনেছি বা প্রভাব খাটিয়ে জমি থেকে বের করে দেয়া হয়নি, জুলুম করারও কোন প্রশ্নই আসেনা।
বাহরে চর মৌজা একটি প্রত্যন্ত চর এলাকা। এখানে কোন চাষাবাদও হতো না। মানুষ খুব অসহায় ছিল। জমির মৌজা মূল্য ছিল ২০০ টাকা শতাংশ। কিন্তু আপনি যে মৌজা রেটের কথা বলেছেন তা অর্থনৈতিক জোন যেখানে হবে তার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। জমির মালিকগণ আমি একটি খামার করব শুনে খুশি হয়ে জমি বিক্রি করেছেন। খামারের কোন নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই। যারা শাকসবজি আবাদ করছেন সেখানে যেন গরু-ছাগল না যায় সেজন্য বাঁশ দিয়ে বেড়া দেয়া হয়েছে।’
শিরোনামে উল্লেখিত টিপু নগরের বা বাজারের কোন অস্তিত্ব নেই জানিয়ে জাওয়াদুর রহিম বলেন, ‘টিপু নগরের যে কথা বলা হয়েছে তা ঠিক নয়। আমি প্রথম আলোর সাংবাদিক জানতে চাইলে বলেছি যে এখানে পুনর্বাসিত কিছু অতি উৎসাহী ভাসমান লোক জায়গাটির নাম রাখতে চেয়েছিল টিপু নগর আমি রাজি হইনি।
এই জায়গাটি ঘিরে নদী ভাঙনের শিকার প্রায় ৬০ টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। সেখানে একটি স্কুল, একটি জামে মসজিদ ও একটি বাজার হয়েছে। মানুষ খামারে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। খামারটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়নি। নদী ভাংতি মানুষকে পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও দুর্গম অবহেলিত চর এলাকার উন্নয়নের কথা চিন্তা করে খামারটি করা হয়েছে। সম্পূর্ণ আইনানুগভাবে খামারের জন্য জমি ক্রয় করা হয়েছে।’
কালের আলো/এসআর/জিকে