প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে সফলতার গল্পগাঁথা নির্মাণ করছে বাংলাদেশ : আইজিপি

প্রকাশিতঃ 5:01 pm | April 10, 2022

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফলতার গল্পগাঁথা নির্মাণ করছে বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার)।

আরও পড়ুন: পুলিশ মানুষের ‘আস্থা ও বিশ্বাস’ অর্জন করেছে : প্রধানমন্ত্রী

তিনি বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সফলতার গল্পগাঁথা নির্মাণ করে চলেছে। গত একযুগে বাংলাদেশ একদিকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, অন্যদিকে উন্নয়নের মূলধারায় সর্বস্তরের জনগণের অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশহণের মাধ্যমে ‘উন্নয়ন বিস্ময়’ হিসেবে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে পরিচিতি লাভ করেছে।

রোববার (১০ এপ্রিল) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের ৬৫৯টি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় স্থাপিত সার্ভিস ডেস্কের উদ্বোধন এবং গৃহহীনদের জন্য বানানো ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আইজিপি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন: পুলিশ ইতোমধ্যে জনগণের ভালোবাসা ও আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের গৃহীত উদ্যোগে আজ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, জেন্ডার সমতা, দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ, কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে আমাদের কাঙ্খিত উন্নতি সাধিত হয়েছে এবং বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে।

পুলিশপ্রধান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ এক উন্নতসমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন আহ্বানের ক্ষেত্রেও আজ বৈশ্বিক পরিমন্ডলে একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশও সরকার কর্তৃক গৃহীত উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞের গৌরবময় অংশীদার হওয়ার লক্ষ্যে নানাবিধ উদ্ভাবনী কার্যক্রম গ্রহণ করছে।

আরও পড়ুন: ‘পুলিশের সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন ও গৃহহীনদের গৃহ নির্মাণ যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত’

ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বমহিমায় সমুজ্জল আত্মপ্রত্যয়ী এক ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ, যিনি নিজ কর্মের উজ্জ্বল দীপ্তি ছড়িয়ে সারাবিশ্বে এক অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। গণমানুষের অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন ইস্পাত কঠিন, অকুতোভয় এক সংশপ্তক। বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রখর দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এক মহান রাষ্ট্রনায়ক; সাম্য, মুক্তি ও মানবতার এক প্রোজ্জ্বল বাতিঘর।

‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন একান্তই জনগণ অন্তঃপ্রাণ এবং জনগণের ভালোবাসাই ছিলো তাঁর শক্তি। আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনকল্যাণকর ও মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমেই বাংলাদেশ পুলিশ তাঁর প্রতি যথার্থ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে সক্ষম হবে।’

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর একান্ত উদ্যোগে স্বল্প সময়ে প্রণীত বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, লিঙ্গভেদে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে সকলের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়। ১৯৭২ সালের ২৬ শে মার্চ বেতার ও টেলিভিশনের ভাষণে তিনি বলেছিলেন, “শ্মশান বাংলাকে আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলতে চাই। সেই বাংলায় আগামী দিনের মায়েরা হাসবে, শিশুরা খেলবে। আমরা শোষনমুক্ত সমাজ গড়ে তুলবো।” বঙ্গবন্ধুর এই দর্শন ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ মুজিববর্ষে দেশের প্রতিটি থানায় স্থাপন করেছে ‘নারী-শিশু-বয়স্ক-প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক’।

‘নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সুরক্ষায় দেশে প্রণীত সকল আইন ও নীতিমালার আলোকে মুজিববর্ষের সূচনালগ্ন ২০২০ সাল থেকে পরীক্ষামূলকভাবে এই ডেস্কের কার্যক্রম শুরু করা হয় এবং এই ডেস্ক এর আওতায় এ পর্যন্ত সারা দেশে ৩,৬৩,১৬৮ জন সেবা গ্রহীতাকে সেবা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ১৩,৯৬৮ জন এবং প্রতিদিন গড়ে ৪৬৫ জন সেবা গ্রহীতা এই ডেস্ক থেকে সেবা গ্রহণ করছে।’

আইজিপি বলেন, নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী আমাদের সমাজেরই অভিন্ন অংশীজন। নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সমাজে বসবাস উপযোগী ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে তাদেরকে উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার কোন বিকল্প নেই। মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে থানায় থানায় স্থাপিত সার্ভিস ডেস্ক পুলিশের সেবার পরিধিতে নিঃসন্দেহে একটি নতুন ধারার সূচনা করবে।

‘এসব সার্ভিস ডেস্কে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ সদস্যগণ অত্যন্ত সংবেদনশীলতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করবে। ফলে তাদের নিকট নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীগণ নিজেদের সমস্যাগুলোকে নিঃসংকোচে তুলে ধরতে পারবেন। এতে প্রকৃত ঘটনা নিরুপণ করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা সহজতর হবে। আমাদের এই উদ্যোগ মানবিক পুলিশিং কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও ফলপ্রসূ করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ছিল বঙ্গবন্ধুর আত্মার আত্মীয়। তিনি ছিলেন এদেশের মাটিলগ্ন মানুষের একান্ত আপনজন। কায়মনোবাক্যে তিনি জনগণের কল্যাণে সমর্পিত ছিলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানোই ছিলো তাঁর জীবনের ব্রত। তিনি বাংলার মানুষের মৌলিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে। এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন।’এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন নোয়াখালী বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা গ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন, অসহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করেন।

ড. বেনজীর বলেন, “বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবেনা” মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ দৃঢ় প্রত্যয় এবং উদ্যোগ জাতির পিতা সূচিত গৃহায়ন কর্মসূচীরই আধুনিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রীর গৃহীত এ মহতী উদ্যোগের সাথে বাংলাদেশ পুলিশ একাত্ম হয়ে প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনায় মুজিববর্ষে গৃহহীন মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধে উজ্জীবিত হয়ে গৃহনির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে।

প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যয় বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে সারাদেশে ৫২০টি থানায় একটি করে গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ইতোমধ্যে আধুনিক নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারকরে প্রথম পর্যায়ে ৪০০টি দৃষ্টিনন্দন ও পরিবেশ বান্ধব গৃহ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাড়ীগুলো নির্মাণে সাশ্রয়ী ও উন্নতমানের নির্মাণ সমগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, এ ধরণের নির্মাণ সামগ্রী বিশেষকরে ইউরোপের দেশগুলোতে বাড়ী নির্মাণে ব্যবহৃত হয়। বাড়ীগুলো বিদ্যুত সুবিধাসহ গুণগতভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, ভূমিকম্প প্রতিরোধক ও ফায়ার রেজিস্ট্যান্ট। টেকসই ও আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ এই বাড়ীগুলো বুয়েটের আইএটি কর্তৃক অনুমোদিত।

আইজিপি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, মুজিববর্ষে বাংলাদেশের প্রতিটি থানায় নারী-শিশু-বয়স্ক-প্রতিবন্ধীদের জন্য সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন এবং গৃহহীনদের জন্য নির্মিত গৃহ হস্তান্তরের এ মানবিক উদ্যোগ আমাদেরকে বঙ্গবন্ধুর কাঙ্খিত ‘‘জনগণের পুলিশ’’ হয়ে তাঁর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, সুখি-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণের প্রত্যয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে অনুপ্রাণিত করবে।

অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী দেশের ৬৫৯টি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় স্থাপিত সার্ভিস ডেস্কের উদ্বোধন এবং গৃহহীনদের জন্য বানানো ঘর হস্তান্তর করেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম রাজারবাগ প্রান্তে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন বক্তব্য রাখেন। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া সভায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনস প্রান্ত থেকে যুক্ত হয়ে রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ আনোয়ার হোসেন, র়ংপুরের পীরগঞ্জ থানা থেকে রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য, মাগুরা সদর থানা থেকে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি ড. খঃ মুহিদ উদ্দিন বক্তব্য রাখেন। সার্ভিস ডেস্কে কর্মরত নারী পুলিশ সদস্য এবং সার্ভিস ডেস্ক থেকে সেবা পাওয়া সুবিধাভোগী এবং গৃহ পাওয়া উপকারভোগীরা বক্তব্য রাখেন। অতিরিক্ত আইজি ড. মোঃ মইনুর রহমান চৌধুরী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

কালের আলো/এসবি/এমএম