আজান-কেরাতের সুর-ছন্দ; নৈতিকতার স্বর্ণালী পরশমন্ডিত আইজিপির সুন্দর ও কল্যাণের বার্তা

প্রকাশিতঃ 9:21 pm | April 22, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

রাজধানীর রাজারবাগে পুলিশ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। শুক্রবার (২২ এপ্রিল) এখানেই জুম্মার নামাজ আদায় শেষেই সূত্রপাত হলো আজান-কেরাতের সুর-ছন্দে এক নির্মোহ আনন্দিত পরিবেশের। চলতি বছরের বাংলাদেশ পুলিশের বার্ষিক আজান, কেরাত ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণের আনুষ্ঠানিকতায় প্রথমেই ডাক পড়লো মহান আল্লাহ’র ফরজকৃত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান আজানে প্রথম হওয়া নৌ পুলিশ সদর দপ্তরের এএসআই (নিরস্ত্র) এম মহিউদ্দিনের।

ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ’র উপস্থিতিতে তাঁর সুললিত কণ্ঠে আজানের সুমধুর ধ্বনি স্পর্শ করলো সবার হৃদয়কে। মধুর কলতানে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) কনস্টেবল মো.শরীফ উদ্দিনের কেরাত পবিত্র মাহে রমজানে তৈরি করলো নতুন ভাব-আবেগের।

পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদও শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ পুলিশের বার্ষিক আজান, কেরাত ও রচনা প্রতিযোগিতার অনিন্দ্যসুন্দর এই আয়োজনে বিজয়ী থেকে শুরু করে সব প্রতিযোগীদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানালেন। ধর্ম প্রতিপালনের মাধ্যমে মানুষের নৈতিক মনোবল সুদৃঢ় হয় সেই বার্তা দিলেন।

একজন ভালো মুসলমানের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কোরআনের আদর্শ অনুসরণ করা জরুরি এই মর্মবাণীও উচ্চারণ করলেন আইজিপি। একজন মানুষকে সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের দিকে পরিচালিত করার জন্য ইসলামী বিধানের প্রয়োগ ও অনুশীলন অনস্বীকার্য এই কথাটিও বুঝিয়ে দিলেন গুরুত্বের সঙ্গেই।

অতিমারি করোনার ভয়াল থাবায় গত দু’বছর এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে পারেনি পুলিশ সদর দপ্তর। কিন্তু করোনার সংক্রমণ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গেই এবার সাড়ম্বরে আয়োজন করা হয় বাংলাদেশ পুলিশের বার্ষিক এই প্রতিযোগিতার। উৎসবের আবহেই গোটা দেশ থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন।

এই অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) মাজহারুল ইসলাম। এ সময় পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অ্যাডমিন) ড.মঈনুর রহমান চৌধুরী, র‌্যাবপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, ডিএমপি কমিশনার মো.শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজি (এফএন্ডডি) এস এম রুহুল আমিনসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ধর্মীয় মূল্যবোধে সমৃদ্ধ আইজিপির গুরুত্ববহ উচ্চারণের নানা দিক
নৈতিকতার স্বর্ণালী পরশমন্ডিত হয়েই নিজের বক্তব্যের সূচনা করলেন আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। ইসলাম মানবজীবনের একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান, পরিপূর্ণ পথ-পাথেয় এবং ধর্ম প্রতিপালনের মাধ্যমে মানুষের নৈতিক বিশ্বাস সুদৃঢ় হয়। শুধুমাত্র আচরণে নয় বিশ্বাসেও ধর্মীয় মূল্যবোধকে লালন করতে হবে এমন বার্তায় যেন তিনি সুরভিত করলেন সবাইকে।

আধুনিকতায় সমুজ্জ্বল থেকে প্রেম-প্রীতি, সাম্য-মৈত্রী ও সৌভ্রাতৃত্বের শাশ্বত সুন্দর নীতিকে তিনি উদ্ভাসিত করলেন অপূর্ব সুন্দর কল্যাণময়ী বাক্য বা শব্দগুচ্ছে। ড.আহমেদ বলতে থাকলেন ‘আমরা বিশ্বাস করি যে যে ধর্মের চর্চাই করুক না কেন, ধর্ম প্রতিপালনের মাধ্যমে মানুষের নৈতিক বিশ্বাস সুদৃঢ় হয়। কারণ সকল ধর্মেই ভালো কাজের উপদেশ দেওয়া হয়।

অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়। পবিত্র ইসলাম ধর্মে আমাদের নৈতিক জীবন যাপনের জন্য উপদেশ রয়েছে। পবিত্র কোরআন মহান আল্লাহ’র পক্ষ থেকে মানবের জন্য একটি জীবন বিধান বা কোড অব কন্ডাক্ট।

জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে জীবনাচরণের ক্ষেত্রে পবিত্র কোরআনের বিধান একজন ভালো মুসলমান হিসেবে প্রতিপালন জরুরি, উল্লেখ করে পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পুলিশ বাহিনীতে যে যে ধর্ম পালন করে, তাদের প্রত্যেকেই সেই ধর্ম পালনের ক্ষেত্রে আমরা উৎসাহ জুগিয়ে থাকি।

মুসলমানদের ক্ষেত্রে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। আমাদের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে সেই সুযোগ রয়েছে। ভালো কাজ করা, অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা, সুদ, ঘুষ, জুয়া খেলা, মাদক সব ইসলাম ধর্মে বারণ করা হয়েছে। একজন ভালো মুসলমান পবিত্র ধর্মগ্রন্থ যদি অনুসরণ করে তাহলে একজন ভালো মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে যেমন বসবাস করতে পারবে তেমনি পরকালেও আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত হবেন।

আমাদের প্রত্যেক সদস্য, যারা যে ধর্মে আছেন, মুসলমান ধর্মের যারা আছেন তারা তাদের ধর্মের বিধানাবলী, হাদীসের পরামর্শ জীবন ধারণ ও জীবনাচরণের ক্ষেত্রে প্রতিপালনের চেষ্টা করবেন। তাহলে আমাদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং সমাজে উন্নততর জীবন ব্যবস্থা কায়েম করতে আমরা সক্ষম হবো’ যোগ করেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ।

বাংলাদেশ পুলিশের বার্ষিক আজান, কেরাত ও রচনা প্রতিযোগিতায় ঢাকার বাইরে থেকেও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে প্রতিযোগীদের অংশগ্রহণে নিজের সন্তোষ প্রকাশ করে আইজিপি বলেন, ‘আমি খুশি হয়েছি, এক সময় শুধু ঢাকার বিভিন্ন ইউনিট ভালো করতো। আজ দেখলাম বাংলাদেশের বিভিন্ন ইউনিটের লোকজন পুরস্কার পেয়েছে, এটি খুবই ভালো লক্ষণ। আমাদের পুরো বাহিনীতে ধর্মীয় চর্চার প্রতিবেশ এবং পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

আমি সকল সদস্যকে যারা নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন না, তাদেরকেও অনুরোধ করবো মুসলমানের জন্য যে কোড অব কন্ডাক্ট রয়েছে সেটি অনুসরণ করার চেষ্টা করবেন। একজন ভালো মুসলিম হিসেবে সমাজে, পরিবারে ও রাষ্ট্রে তাঁর ভূমিকা পালন করবেন। পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আমাদেরকে ইতিবাচক বিষয়গুলো সম্পর্কে উৎসাহিত করে এবং নেতিবাচক বিষয় থেকে আমাদের দূরে রাখার জন্য কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেন। পরকালেও ইসলাম ধর্ম কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। আমাদের শুধুমাত্র আচরণে নয় বিশ্বাসেও ধর্মীয় মূল্যবোধকে লালন করতে হবে।’

আইজিপির নির্দেশে সারা দেশে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (এইচআরএম) মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘অতিমারি কোভিড-১৯’র কারণে গত দু’বছর আমরা এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করতে পারিনি। কোভিড-১৯’র সংক্রমণ হ্রাস পাওয়াতে মাননীয় আইজিপির নির্দেশে এই বছর আমরা সারাদেশে এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সবগুলো পুলিশ ইউনিটকে পঁচিশটি সেগমেন্টে ভাগ করে এই প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করা হয়েছে। ইভেন্ট ওয়াইজ প্রতিটি সেগমেন্ট থেকে একজন করে অর্থাৎ ২৫ জন যারা প্রথম স্থান অধিকার করেছিল তাদেরকে আমরা ঢাকায় এনে কেন্দ্রীয়ভাবে এই প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন করেছি।

এই প্রতিযোগিতাটি সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে এখানে কেন্দ্রীয়ভাবে তিনজন বিচারক কাজ করেছে। তারা যথেষ্ট সময় নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারকারী নির্বাচন করেছে। আমি যারা বিজয়ী হয়েছেন তাদের সকলকে আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছি। প্রতিযোগীসহ যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল তাদের সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া উইং সূত্র জানায়, এই প্রতিযোগিতায় আজানে প্রথম হয়েছে নৌ পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকার এএসআই (নিরস্ত্র) এম মহিউদ্দিন, দ্বিতীয় নোয়াখালী জেলা পুলিশের কনস্টেবল মোঃ মনিরুল ইসলাম এবং তৃতীয় হয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশের কনস্টেবল মো. মুসলিম উদ্দিন।

কেরাতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), ঢাকার কনস্টেবল মোঃ শরীফ উদ্দিন, দ্বিতীয় হয়েছেন র‌্যাব-১৩, রংপুরের এএসআই (সশস্ত্র) মোঃ ওমর ফারুক এবং তৃতীয় হয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা, রাজশাহীর নায়েক মো. আরিফুর রহমান।

‘জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামের ভূমিকা’ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম নৌ পুলিশ সদর দপ্তর, ঢাকার এএসআই (নিরস্ত্র) এম মহিউদ্দিন, দ্বিতীয় স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), ঢাকার উচ্চমান সহকারী শেখ রেজাউল কবির এবং তৃতীয় হয়েছেন টিঅ্যান্ডআইএম, ঢাকার বেতার কনস্টেবল মোঃ ইব্রাহীম হোসেন। বাংলাদেশ পুলিশের সব ইউনিটের সাব ইন্সপেক্টর থেকে তদনিম্ন পর্যায়ের পুলিশ সদস্য এবং সিভিল স্টাফরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন।

কালের আলো/এমএএএমকে