‘টাইগার মিলন’র আনন্দের হাসিই যেন অনেক বড় অর্জন পুনাকের!
প্রকাশিতঃ 9:41 pm | May 09, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
দেশের ভেন্যু তো বটেই হাজার মাইল দূরের দেশেও বাংলাদেশের খেলা থাকলেই গ্যালারির গুরুত্বপূর্ণ এক অনুসঙ্গ ফাহিমুল হক মিলন। বেঙ্গল টাইগারের সাজে লাল-সবুজের পতাকা উঁচিয়ে অবিরত উৎসাহ জোগান ‘টিম টাইগার’কে। সারাক্ষণ উজ্জীবিত রাখেন দর্শকদেরও। ছুটে বেড়ান এদেশ-ওদেশে। নিজের নামের পাশে যুতসই হয়ে উঠেছে ‘টাইগার’ শব্দটি। মাঠের মানুষদের কাছে পরিচিত ‘টাইগার মিলন’ নামেই।
‘শাবাশ সাকিব, শাবাশ তামিম…..গর্জে উঠো বাংলাদেশ’ এমন চিৎকারে একাই মাতিয়ে রাখেন গ্যালারি। করোনায় রঙহীন, বিবর্ণ গ্যালারিতে প্রাণ বলতে ছিলেন এই টাইগার মিলনই। তাকে ভাবা হয় বাংলার ক্রিকেটের ‘সোহার্দ্যরে প্রতীক’ হিসেবেও। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই ‘আইকন’ সমর্থক ভালো নেই মোটেও। মাস দু’য়েক আগে রাজধানীর বনশ্রীতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হন। ট্রাকের চাকায় থেতলে যায় তাঁর দু’পা।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুণর্বাসন কেন্দ্রে ছয়বারের বেশি অস্ত্রোপাচার হলেও এখনও দু’পায়ে দাঁড়াতে পারেননি। কিন্তু বাঘের বেশে গ্যালারিতে গর্জন তোলার ভাগ্য কবে সুপ্রসন্ন হবে মিলনের জানা নেই কারও। সুচিকিৎসার জন্য যাদের কাছে আবেগি বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন এগিয়ে আসেননি তাদের কেউই।
কিন্তু মূল্যবোধ আর মানবিকতা হারিয়ে যায়নি। সাকিব-মুশিদের কীর্তির সঙ্গে যার বিচরণ প্রতিনিয়ত সেই ‘টাইগার মিলন’র দিকেই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)। ক্ষণিকের জীবনে এমন মানবিক প্রয়াসেই আবারও নিজেকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন পুনাক সভানেত্রী জীশান মীর্জা।
স্বামী পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদও ক্রীড়াঙ্গণের বন্ধু। মানবতার সত্য এক নিদর্শন। ক্রীড়াপাগল মিসেস বেনজীরও একজন আলোকময় দক্ষ সংগঠক ঠিকই কিন্তু সম্পৃক্ত নন ক্রিকেটের সঙ্গে। অথচ তিনি ছুটে গেছেন শয্যাশায়ী মিলনের সার্বিক খোঁজ খবর নিতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুণর্বাসন কেন্দ্রে।

যন্ত্রণায় কাতরানো গ্যালারির তারকা খ্যাতি পাওয়া ‘দর্শক’ ফাহিমুল হক মিলনকে আর্থিক সহায়তা করেছেন। ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন মায়ের মতোই পরম মমতায়। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে পুনাক সভানেত্রী বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাঠে এগারজন খেলেন, তখন টাইগার মিলন মাঠের বাইরে থেকে সবাইকে উৎসাহ জুগিয়ে থাকেন। বাংলাদেশ হারছে না জিতছে এটা কোন বিষয় নয় মিলনের কাছে; তিনি সবসময় বাংলাদেশকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করেন।’
জীশান মীর্জা বলেন, ‘পুনাক পুলিশ কর্মকর্তাদের স্পাউজদের একটি অরাজনৈতিক, অলাভজনক সামজিক সংগঠন। আমি সভানেত্রী হওয়ার পর চেষ্টা করছি গতানুগতিক ধারার বাইরে কিছু করার জন্য। সবার পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আমাদের খুব সামান্য একটা প্রচেষ্টা আমরা টাইগার মিলনের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশের (আইজিপি) স্ত্রী, পুনাক সভানেত্রীর এমন মানবিক ঔদার্য্যে নির্মল, স্বর্গীয় হাসি ফিরেছে টাইগার মিলনের মুখে। সেই হাসিতে কোনো অভিযোগ নেই, নেই কোনো অনুযোগও। মিলনের আনন্দের এই হাসিটাই বাংলাদেশ পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতির (পুনাক) অনেক বড় এক অর্জন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ব্যক্তিগত অর্জন নয় পুনাকের অর্জন-সাফল্য, স্বীকৃতি, মর্যাদা তুল্যমূল্যের হিসেবের রেখচিত্র আঁকতে সংগঠনটিকে প্রতিনিয়ত গড়েছেন। এক মানবিকতার আনন্দময় পথচলার সিলেবাসে; চিরায়িত এবং প্রথাগত গন্ডি পেরিয়ে। এই আনন্দ ছুঁয়ে যায় অলিন্দের প্রতিটি শিরায় শিরায়।

পুনাক সভানেত্রীর এমন মানবিক কর্মযজ্ঞে ভারতের প্রয়াত অধিনায়ক ক্রিকেট মনসুর আলী খান পাতৌদির একটি বিখ্যাত ক্রিকেট উক্তিকেই যেন আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে। তিনি বলেছিলেন-‘অধিনায়ক সাধারণত দুই ধরনের। অধিনায়ক হয় পেছন থেকে দলকে ধাক্কা দিয়ে সামনে বাড়াবেন, নয়তো সামনে থেকে লড়ে টেনে তুলবেন।’
ঠিক তেমনিই মানুষের বিপদে পাশে থেকে, অসহায়ের মুখে হাসি ফুটিয়ে অন্যের কল্যাণে পুনাককে উৎসর্গ করেই যেন নশ্বর জীবনকে অবিনশ্বর করে তুলেছেন মানবিকতার মুক্তদানার বিচ্ছুরণে। দেশের জন্য গ্যালারিতে গর্জন করা যোদ্ধা টাইগার মিলনকেও আচ্ছন্ন করেছেন স্বপ্নময়তায়।
এই স্বপ্নের ভেতরই ঘুরে দাঁড়ানোর অদম্য এক স্পৃহা রয়েছে। আছে হতাশার কাছে পরাজিত না হয়ে আত্নবিশ্বাসী হয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। এসবের মাধ্যমেই জীবনের অপূর্ব বিন্যাসে পুনাক অঙ্কন করছে মানবিকতার অনন্য রেখাচিত্র-কাব্যগাঁথার।

কালের আলো/এমএএএমকে