স্বাধীন ‘কুর্দিস্তান’ কত দূর?

প্রকাশিতঃ 11:26 am | January 27, 2018

সোহেল রানা:

ইরাকের আধা স্বায়ত্ত্বশাসিত এলাকা কুর্দিস্তানের স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোটের পর নড়াচড়া শুরু হয়েছে ইরাক’সহ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে। তুরস্ক আর ইরান ধমকের সুরেই এমন উদ্যোগের বিরোধিতা করেছে, ইরাকের কেন্দ্রীয় সরকারও বেজায় চটেছে। পাশাপাশি কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কুর্দিরা বহুদিন ধরেই একটি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখে আসছে; যদিও বিভিন্ন ভাবে তাদের দমিয়ে রাখা হয়েছে। বিশেষ করে তুরস্ক ও ইরাকে ব্যাপক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সালাউদ্দিন আইয়ূবীর এই বংশধররা।

ইরাকি কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার প্রশ্নে সেখানে গত ২৫ সেপ্টেম্বর এক গণভোটের আয়োজন করা হয়। গণভোটে বেশিরভাগ কুর্দি স্বাধীনতার পক্ষেই মত দেন। কিন্তু গনভোটের ফলাফল নতুন করে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে প্রতিবেশী দেশগুলোকে। যেহেতু ইরাক ছাড়াও আশপাশের কয়েকটি দেশে কুর্দিরা ছড়িয়ে আছে – তাই এনিয়ে তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা তৈরি হয়েছে। কুর্দিরা কেন আলাদা রাষ্ট্রের দাবি তুলছে? আসুন কারনগুলো খুঁজে বের করা যাক।

মূলত ইরাক,ইরান,সিরিয়া, তুরস্ক ও আর্মেনিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে কুর্দিরা বাস করে। নিচে সিআইয়ের মানচিত্রটিতে কুর্দি অধ্যুষিত এলাকাটি স্পষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে কুর্দিদের সংখ্যা সাড়ে তিন কোটির মত। তারা মধ্যপ্রাচ্যের চতুর্থ বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী হলেও এ যাবৎ একটি স্বাধীন ভ’খন্ড পায়নি। এরা মেসোপোটেমিয়া সমভূমি আর পার্বত্য এলাকাগুলোর আদি বাসিন্দা; তাদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষা। বেশিরভাগ কুর্দি সুন্নি মুসলিম হলেও তাদের মধ্যে অন্য ধর্মের লোকও আছে।

এবিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী একটি প্রতিবেদন প্রচার করেছে বিবিসি বাংলা। এতে বলা হয়,”বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকেই স্বাধীন কুর্দিস্তানের দাবি উঠতে শুরু করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অটোমান সাম্রাজ্যের পতন হলে পশ্চিমা দেশগুলোর করা ১৯২০ সালে সেভরেস চুক্তিতে কুর্দি রাষ্ট্রের কথা ছিল।কিন্তু তিন বছর পর লুজান চুক্তিতে যে আধুনিক তুরস্কের মানচিত্র তৈরি হলো,তাতে কুর্দি রাষ্ট্রের ধারণা বাদ পড়ে যায়। কুর্দি এলাকাগুলো একাধিক দেশে ভাগ হয়ে গেল এবং কুর্দিরা হয়ে গেল সংখ্যালঘু। এরপর কুর্দিরা যখনই কোথাও স্বাধীনতার চেষ্টা করেছে, তাদের সেই আন্দোলন নির্মমভাবে দমন করা হয়েছে। সিরিয়ার কুর্দি সংগঠনগুলো ইসলামিক স্টেটের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত। কিন্তু আইএস বিরোধী যুদ্ধে তুরস্ক তাদের সহযোগিতা করছে না। কারণ তুরস্ক রাষ্ট্র এবং সেদেশের ১৫-২০ শতাংশ কুর্দিদের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস ও বৈরিতা রয়েছে। ১৯৭৮ সালের আবদুল্লা ওচালান পিকেকে প্রতিষ্ঠা করেন। তার লক্ষ্য ছিল তুরস্কের কুর্দিদের জন্যএকটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ছয় বছর পর সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হলে তাতে ৪০ হাজার লোক নিহত এবং লক্ষ লক্ষ লোক গৃহচ্যুত হয়। তবে এখন পিকেকে স্বাধীনতার পরিবর্তে স্বায়ত্বশাসন চাইছে। তবে যুদ্ধবিরতি হলেও লড়াই পুরোপুরি থামেনি। তুরস্কে ১৯২০ এবং ১৯৩০ দু’বার কুর্দি অভ্যুত্থানের পর এখন সেখানে কুর্দি নাম ও পোশাক নিষিদ্ধ, কুর্দি ভাষার ব্যবহার সীমিত করা হয়। এমনকি কুর্দিদের আর কুর্দি বলে ডাকা হয়না তাদের বলা হয় ‘পাহাড়ি তুর্কি’।কুর্দিরা মনে করে তুরস্ক তাদেরকেই আসল শত্রু বলে মনে করে, ইসলামিক স্টেটকে নয়।সিরিয়ায় কুর্দিদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৭ থেকে ১০ শতাংশ। এখানকার কুর্দি নেতাদের কথা হলো সিরিয়া সমস্যার সমাধান করতে হলে তাতে কুর্দিদের অধিকার এবং স্বীকৃতি থাকতে হবে।ইরাকেও কুর্দিদের সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মতো। সেখানে কুর্দিদের সশস্ত্র লড়াই প্রথম শুরু হয় ১৯৬১ সালে । এর পর ১৯৭০ সালে তাদের কার্যত স্বায়ত্বশাসন দেয়া হয়, কিন্তু তা অচিরেই ভেঙে পড়ে। সত্তরের দশকে কুর্দিদের বিভিন্ন এলাকা থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে আরবদের বসতি স্থাপন করানো শুর হয়। ১৯৭৯ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় কুর্দিরা ইরানকে সমর্থন দেয়।আর তার পর সাদ্দাম হোসেন তার প্রতিশোধ নেন নির্মম অভিযান চালিয়ে। দুটি কুর্দি বিদ্রোহ দমন করা হয় ১৯৮৮ এবং ১৯৯১ সালে, এর পর মার্কিন মিত্ররা সেখানে নো-ফ্লাই জোন প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু তার পরও ১৯৯৪ সাল থেকে অভ্যন্তরীণ সংঘাত চলতেই থাকে। তবে ২০০৩ সালে সাদ্দামের পতনের পর ইরাকের তিনটি প্রদেশ – ইরবিল, ডোহুক ও সুলাইমানিয়ায় – কুর্দিরা আঞ্চলিক সরকার গঠন করে সর্বোচ্চ স্বায়ত্বশাসন ভোগ করছে। ইসলামিক স্টেট ২০১৪ সালে উত্তর ইরাকের বিস্তৃীর্ণ এলাকা দখল করে নিলে কুর্দি আঞ্চলিক সরকার পেশমার্গা যোদ্ধাদের কুর্দি এলাকাগুলোয় সৈন্য পাঠায়। সে সময় থেকেই কুর্দিস্তানের স্বাধীনতার গণভোটের কথা ওঠে কুর্দি পার্লামেন্টে। ২০০৫ সাল থেকে ইরাকি কুর্দিস্তানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারাজানি বলছেন, এ গণভোটের ফল মানতেই হবে তা নয়।ইরাকি কুর্দিস্তানের নিজস্ব পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, এবং সেনাবাহিনী আছে। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের আছে তেল। তবে আশপাশের দেশে থাকা সব কুর্দিদের নিজেদের একটি দেশ গঠনের স্বপ্ন অনেক কুর্দিই দেখে থাকেন, তবে সেরকম কিছু কার্যক্রম করার বাস্তবতা যে এখন নেই এটাও বোঝেন তারা।”

ইরাকি সরকার বলছে, কুর্দি নেতা মাসুদ বারাজানি বিপজ্জনক খেলায় মেতেছেন।দেশটির গণমাধ্যমগুলো বলছে, স্বাধীনতা প্রশ্নে কুর্দিস্তানের কর্মকর্তারা নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতারণা মূলক প্রচারণার মাধ্যমে গণভোটে বিপুল সংখ্যক মানুষকে অংশগ্রহণ করাতে সক্ষম হয়েছে। দেশটিতে যেসব খবরাখবর বের হয়, তাতে দাবি করা হয় কুর্দিস্তানের কয়েকটি এলাকায় তৎপর পেশমার্গা বাহিনী ওই এলাকার জনগণকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল তারা যদি গণভোটে অংশ না নেয় তাহলে তাদেরকে উৎখাত করা হবে। মুনায়ের হাদ্দাদ নামে ইরাকের সাবেক স্বৈরশাসক সাদ্দাম আমলের এক বিচারক বলেছেন, কিরকুক ও সুলাইমানিয়া প্রদেশে অনুষ্ঠিত গণভোটে ২০ শতাংশ ভোটও পড়েনি। ইরাকের সরকার,সংসদ ও প্রতিবেশী দেশগুলো কুর্দিস্তানে গণভোটের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, মাসুদ বারাজানির এ পদক্ষেপ ইরাকের সংবিধানের পরিপন্থী। একই সঙ্গে এ দেশগুলো গণভোটের ফলাফল যাইহোক না কেন তা প্রত্যাখ্যান করে ইরাকের ভৌগোলিক অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

ইরাকি গণমাধ্যমের ভাষায়, মাসুদ বারাজানি নানা রকম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মানুষকে ভোটদানে উৎসাহিত করেছেন যার সঙ্গে সাদ্দামের লোক দেখানো নির্বাচনের তুলনা করা যায়। ইরাকের কোনো কোনো রাজনৈতিক মহল ও ব্যক্তিত্বের মতে সবার আপত্তি ও প্রতিবাদ উপেক্ষা করে মাসুদ বারজানির এ পদক্ষেপ তার রাজনৈতিক আত্মহত্যার শামিল এবং সাদ্দামের পরিণতি তার জন্যও অপেক্ষা করছে। তাদের মতে, বারাজানির বেআইনি গণভোট খোদ কুর্দি জনগোষ্ঠীর জন্যই ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে।

ইরানি গণমাধ্যম পার্সটুডে এ বিষয়ে এক নিবন্ধ ছাপিয়েছে। সেখানে যেসব কারণে বারাজানি কুর্দিস্তানকে ইরাক থেকে আলাদা করতে চান তা সবিস্তারে তুলে ধরা হয়ছে। নিবন্ধে বলা হয়, “কুর্দিস্তানের প্রেসিডেন্ট কেন ওই এলাকাকে আলাদা করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ইরানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাদি সাইদ আফকাহি কুর্দিস্তানের গণভোটকে আগুন নিয়ে খেলার সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, বারাজানি এমন এক বৃহৎ খেলায় লিপ্ত হয়েছেন যা তার ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে মানায় না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মাসুদ বারাজানি কুর্দিস্তান প্রদেশকে ইরাক থেকে আলাদা করার মাধ্যমে তিনটি লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন। প্রথমত, তিনি কুর্দিদেরকে এ অঞ্চলে বীর জাতি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজেকে এ অঞ্চলের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি এটাও প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে, বেআইনিভাবে কুর্দিস্তানের প্রেসিডেন্টের পদ হস্তগত করা এবং গত চার বছরে তার পদত্যাগ না করার পেছনে যৌক্তিক কারণ ছিল। তিনি কুর্দিস্তানকে আলাদা করার চেষ্টার মাধ্যমে নিজেকে কুর্দি জাতির ইতিহাসে অমর করে রাখতে চাইছেন।

কুর্দিস্তানকে ইরাক থেকে আলাদা করার পেছনে মাসুদ বারাজানির দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, ইরাক সরকারকে এটা বুঝিয়ে দেয়া যে এটা তাদের অধিকার ছিল। অর্থাৎ গণভোটের মাধ্যমে তিনি এটা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যে, ইরাক থেকে আলাদা হওয়াটা কুর্দি জনগোষ্ঠীর প্রাণের দাবি। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা যদি ওই এলাকার মানুষের দাবিও হয়ে থাকে এটা মনে রাখতে হবে কুর্দিস্তান ইরাক ভূখন্ডের অংশ। বিশ্বের সব দেশেই একাধিক জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। কুর্দিস্তানের মতো সব জাতির মানুষ যদি আলাদা হতে চায় তাহলে নিঃসন্দেহে সব দেশেই গোলযোগ সৃষ্টি হবে।

গণভোটের পেছনে মাসুদ বারাজানির তৃতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, এ অঞ্চলের অন্যান্য প্রভাবশালী নেতাদের ক্ষমতা মেপে দেখা। তিনি গণভোটের মাধ্যমে দেখতে চেয়েছেন, এ অঞ্চলের নেতারা বারাজানির বিরুদ্ধে যে হুমকি দিয়েছেন তা আদৌ তারা বাস্তবায়ন করেন কিনা। এ অঞ্চলের দেশগুলো যদি কুর্দিস্তান আলাদা হয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় তাহলে নিশ্চিতভাবে ব্যাপক রক্তপাতের সূচনা হবে এবং সবার আগে মাসুদ বারাজানিকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। এ ছাড়া, ইরান, তুরস্ক, ইরাক ও সিরিয়া যদি সামরিক পদক্ষেপ নাও নেয় তাহলেও কুর্দিস্তান কঠিন অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটে পতিত হবে।”

কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানও। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, কুর্দিস্তান স্বাধীনতার পথে এগিয়ে গেলে ওই অঞ্চলে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার হুমকি তৈরি হবে। এ পথ নিলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার হুমকিও দেন তিনি। এরদোগান বলেন, তুরস্ক যদি সীমান্ত দিয়ে পণ্যের সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে কুর্দিদের না খেয়ে থাকতে হবে।

তুরস্কের ভয় তাদের সীমান্তের ওপারে একটি স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্র কায়েম হলে তাদের নিজেদের ভুখন্ডে যে সংখ্যালঘু কুর্দিরা থাকে তাদের ভেতরে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব জেগে উঠতে পারে। এদিকে, গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে মতামত আসায় ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে কুর্দি অধ্যুষিত এলাকায় থাকা বিমানবন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রন কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ছেড়ে দিতে বলেছেন। তিনি কুর্দি অঞ্চলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিলের আহবান জানিয়েছেন। ইরানের সংসদ মজলিশে শূরায়ে ইসলামির প্রতিনিধিরা এক বিবৃতিতে কুর্দিস্তানকে ইরাক থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এ ধরণের পদক্ষেপ ইরাকসহ ওই অঞ্চলের জন্য ক্ষতিকর।

ইরানের সংসদের ২১০ জন সদস্য এই বিবৃতিতে সই করেন। বিবৃতিতে তারা ইরাক সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রাখতে এবং এ অঞ্চলে দখলদার ইসরাইলের আগ্রাসন ও ষড়যন্ত্রের কোনো সুযোগ না দেয়ার জন্য কুর্দিস্তানের কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অখন্ড ইরাকের অস্তিত্ব কখনোই এ অঞ্চলে আমেরিকা ও ইসরাইলের আশা পূরণ ও ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতে দেবে না। আমেরিকা লোক দেখানোর জন্য অখন্ড ইরাকের কথা বলছে অথচ বাস্তবতা হচ্ছে তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা দখলদার ইসরাইল ইরাক থেকে কুর্দিস্তানের বিচ্ছিন্নতার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, তেলআবিব ও ওয়াশিংটন এ অঞ্চলের দেশগুলোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিয়েছে। ইরাক ও ইরানি গনমাধ্যম গুলো বলছে, ইরাকে অস্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকলে নিষিদ্ধ ঘোষিত (সাদ্দামপন্থী)বাথিষ্টরা আবারো শক্তি সঞ্চয় করতে পারে। এ ছাড়া, গণভোটের পর ওয়াহাবিদের মাধ্যমে সৌদি আরব ইরাকে হস্তক্ষেপের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে! অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়বে ইরাক। বিশৃঙ্খলার সুযোগে ইরাকের খনিজ সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহণ রুটের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য সুযোগ সন্ধানীদের মধ্যে ভয়াবহ প্রতিযোগিতা শুরু হবে।

(এটি গত সেপ্টেম্বরে লিখা। সবশেষ কুর্দিস্তানে ইরাকি বাহিনী অভিযান চালিয়েছে। সেখানকার বিমানবন্দর ও তেলের খনিগুলো এখন কেন্দ্রীয় সরকারের দখলে)

 

লেখক: সাংবাদিক, রেডিও টুডে