এখনও ‘অনির্ধারিত’ সিটি করপোরেশনের মেয়রদের ‘মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী’ পদমর্যাদা
প্রকাশিতঃ 10:00 pm | June 04, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
উপ-নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার তিন মাসের মাথায় মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন আতিকুল ইসলাম। পুননির্বাচিত হয়ে ২০২০ সালের মে মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর মেয়র হিসেবে ইতোমধ্যেই দু’বছর পূর্তি হয়েছে তার। কিন্তু সেই পদমর্যাদা আর দেওয়া হয়নি তাকে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসেরও একই অবস্থা। দু’বছর সময় মেয়র হিসেবে অতিবাহিত করলেও এই বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেই। অথচ তার পূর্বসূরী মোহাম্মদ সাঈদ খোকন মন্ত্রী পদমর্যাদায় ছিলেন। ঢাকার উত্তর দক্ষিণের দুই মেয়র মন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করেন এমন রেওয়াজই ছিল অতীতে। অবশ্য হাল সময়ে ছন্দপতন ঘটেছে। তাদের গাড়িতে উড়েনি জাতীয় পতাকা।
রাজধানীর বাইরে দশটি সিটি করপোরেশনের মধ্যে সাতটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ভোটে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন- রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, খুলনা সিটি করপোরেশনের তালুকদার আব্দুল খালেক, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু, বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম (বরখাস্ত) সেখানে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে আসাদুর রহমান কিরণ দায়িত্ব পালন করছেন।
বাদ বাকী তিনটির মধ্যে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিনক্ষণ এগিয়ে এসেছে। ভোটের লড়াই জমে উঠেছে। এখানে গত নির্বাচনে বিএনপির মনিরুল হক সাক্কু মেয়র ছিলেন। সিলেটে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও বিএনপির। রংপুর সিটি মেয়র হিসেবে দায়িত্বে আছেন জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
জানা যায়, শুধুমাত্র রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, খুলনা সিটি করপোরেশনের তালুকদার আব্দুল খালেককে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে সরকার। আগের টার্মে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীও উপমন্ত্রীর মর্যাদা ভোগ করেছেন। কিন্তু নিজ দলীয় অন্যান্য এলাকার সিটি করপোরেশনের মেয়রদেরও পদমর্যাদার বিষয়টি সুরাহা হয়নি। ডিএনসিসি, ডিএসসসিসি ও অন্যান্য মেয়রদের মর্যাদার অমীমাংসিত বিষয়টির নিষ্পত্তি হলে প্রটোকলসহ সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বাড়তি গতির সঞ্চার হবে। এতে আরও বেশি উপকৃত হবেন নিজ নিজ এলাকার বাসিন্দারাই।
যদিও সরকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়ররা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা পাবেন কি না সেটা পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সিদ্ধান্ত। কখন কাকে কোন পদমর্যাদা দেওয়া হবে সেটি নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছার ওপর।
তবে সংশ্লিষ্ট মেয়রদের বিশেষ মর্যাদা নির্ধারিত হলে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে প্রটোকল নিয়ে সমস্যারও সমাধান হবে বলে মনে করেন মেয়রদের ঘনিষ্ঠরা। তারা বলছেন, সরকারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বা মন্ত্রী পর্যায়ের কোনো কমিটির ডাকে মেয়রদের আসন বিন্যাস নিয়ে যথেষ্ট বেকায়দায় থাকেন সরকারি কর্মকর্তারা। ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্স মানলে সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে অতিরিক্ত সচিবের ‘উপরে’ মর্যাদায় তাদের গণ্য করতে হয়। আবার ব্যক্তিত্ব, পূর্ববর্তি পদ, রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনায় তাদের বাড়তি গুরুত্ব না দিয়েও উপায় নেই। সব মিলিয়ে বিভিন্ন সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় সরকারি কর্মকর্তাদের। বিব্রত হতে হয় মেয়রদেরও। তাদের ঘনিষ্ঠরা দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত মেয়রদের পদমর্যাদা সংসদ সদস্যদের ‘উপরে’ রাখার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন। ওই সময় অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ঢাকা ছাড়া অন্যান্য মহানগরের সাবেক মেয়ররা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিলেন। নতুন মেয়রদের সে রকম কোনো মর্যাদা নেই। এর ফলে তাঁরা সাংসদ ও সচিবদের নিচে অবস্থান পেয়েছেন। তাঁদের কিছুটা উচ্চতর পদমর্যাদা দেওয়া উচিত।’
একই সূত্র বলছে, দেশের মোট ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়রদের পদমর্যাদা দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তও হয়েছিল। পরে কয়েকজন মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করেন। কিন্তু করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত ঝুলে যায়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মেয়রদের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর পদমর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের স্থায়ী কোনো নীতিমালা নেই। সিটি করপোরেশন আইনে মেয়রদের পদমর্যাদার বিষয়ে কিছু বলা নেই। সরকার কোনো কোনো মেয়রের পদমর্যাদা নির্ধারণ করে দেয়। তবে যখন দেয়া হয়, তখন কিছু নীতিমালার ভিত্তিতে দেয়া হয়।
একাধিক সিটি করপোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বৈঠকে কাউন্সিলররা বিষয়টি নিয়ে মেয়রদের সামনে প্রায়ই আলোচনা তোলেন। তবে মেয়ররা এই বিষয়ে কোন কথা না বলে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয় বলে জানিয়ে দেন। যদিও তাদের ঘনিষ্ঠজনরা চান দ্রুত এ ব্যাপারে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্তের।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশের ১২টি সিটি করপোরেশন রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীর পদমর্যাদা ভোগ করছেন। কে এই মর্যাদা পাবেন বা পাবেন না তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় নির্ধারণ করে। এখানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকে না।’
কালের আলো/ডিএসবি/এমএম