বিশ্ব দেখছে সক্ষমতার দাপুটে বাংলাদেশ : শেখ হাসিনার শ্রেষ্ঠ কীর্তি পদ্মা সেতু

প্রকাশিতঃ 7:29 am | June 25, 2022

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর :

গণতন্ত্রের রাজনীতির বাতিঘর। চারবারের প্রধানমন্ত্রী। সংগ্রামের জীবনই তাঁর ইতিহাস। ছাত্রজীবনেই শাণিত করেছেন নেতৃত্বগুণ। এক অন্ধকার রাতে পরিবারের সবাইকে হারিয়েছেন। মৃত্যুকে পায়ের সঙ্গে রেখেছেন। হেঁটে চলেছেন অমিত সাহসে। বিরামহীন ৪১ বছর। থেকেছেন অবিচল, ভাত-ভোট আর সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ে। দীর্ঘ সময় ক্ষমতার কেন্দ্রে থেকেও একেবারেই মাটির কাছাকাছি।

নৌকায়, ভ্যান-রিকশায় বা কখনও কাদামাটির পথ ভেঙে ছুটেছেন। দেশের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে। প্রজ্ঞা, মেধা, দূরদর্শিতায় দেশকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন বিশ্বসভায়। প্রকৃত অর্থেই একজন ‘স্টেটসম্যান’ শেখ হাসিনা। সক্ষমতা ও নৈতিক জোরের আরও একবার প্রমাণ রেখেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। অসীম সাহস আর আত্মমর্যাদার সেতুবন্ধনে প্রমত্ত পদ্মার বুকে সগৌরবে গড়েছেন ‘পদ্মা সেতু’।

অভাবিত বিজয় স্মারক মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে। যেন বিস্ময়ের বিস্ময়। নিজেদের অর্থে স্বপ্নের পূর্ণতা দিয়ে দেখিয়েছেন বিশ্বকে। আজ উদ্বোধন করবেন বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণে তৈরি ছয় দশমিক এক পাঁচ কিলোমিটারের এই সেতু। যে সেতু কীর্তিনাশা পদ্মাকে করেছে কীর্তিমান।

বিনাসুতি মালায় ঘটিয়েছে সুতার সংযোগ। গেঁথেছেন সফলতার নতুন ইতিহাস। ‘শেখ হাসিনা-বাংলাদেশ-পদ্মা সেত’ু ইতিহাসে এই তিনটি নাম অমলিন, অবিনশ্বর। পদ্মা সেতু নির্মাণ বঙ্গবন্ধুকন্যার জীবনের শ্রেষ্ঠ কীর্তি হয়েই জ্বলজ্বল করবে যুগ যুগ ধরে। সেতুগত অর্জনে শিহরিত আমরা। আর এই শিহরণে কম্পিত গোটা দুনিয়া।

একটি সেতু ঘিরে একটি দেশ আর কবে কোথায় এমন একীভূত হয়েছে জানা নেই আমার। পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচনের মধ্যে দিয়ে সম্ভাবনা ও সক্ষমতার দাপুটে যুগে প্রধানমন্ত্রী প্রবেশ করিয়েছেন বাংলাদেশকে। এমন দেশকে চিন্তা করেই কী সুকান্ত লিখেছিলেন ‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী/অবাক তাকিয়ে রয়ঃ/জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/তবু মাথা নোয়াবার নয়।’

সত্যিই শেখ হাসিনা মাথা নত করেননি। নিজেও বলেছেন, ‘আমি শেখ মুজিবের মেয়ে। অন্যায়ের কাছে কখনও মাথা নত করিনি, করবো না।’ ঠিকই উন্নয়নের মহিসোপান দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অপ্রতিরোধ্য গতিতেই। তাই সুকান্তের ওই কবিতার কাঠামোগত দৃশ্যমান রূপই পদ্মা সেতু প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই সেটি বলতে পারি আমরা।

নিজের প্রথম মেয়াদের প্রধানমন্ত্রীত্বের সময়ে ২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন তিনিই। স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বীরের জাতি। কিন্তু রাজনীতির মারপ্যাঁচে পদ্মায় অনেক পানি গড়ালেও মাথা তুলে দাঁড়ায়নি সেতু। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে বাঙালির স্বপ্নকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। কিন্তু প্রথমেই খোঁড়া অজুহাত আর অলীক অভিযোগ বিশ্বব্যাংকের। সেতু নির্মাণকে ষড়যন্ত্রের ফাঁকে আটকানোর চেষ্টা। বন্ধ অর্থায়ন।

নানা বাহানায় দুর্নীতির কলঙ্কতিলক এঁটে দিতে খিস্তিখেউরও কম হয়নি। বারবার দেখা গেছে, পেছন থেকে টেনে ধরার চেষ্টা। সারবত্তা না থাকায় বিশ্বব্যাংকের মামলা বাতিল করে দিয়েছিল কানাডার আদালত। পরনির্ভরতার বদলে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করার ঘোষণা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। অবাক বিশ্ব অথচ আশাবাদী, আত্মবিশ্বাসী শেখ হাসিনা। বাঙালি জাতি যে এক হলে অসাধ্য সাধন করতে পারে। সকল কাঁটা ধন্য করে দৃঢ়, সাহসী নেতৃত্বে এগিয়ে গেলেন।

কালো মেঘের অবগুন্ঠন সরিয়ে দিলেন। সূর্যের মতো হেসে উঠলেন। পদ্মা সেতু নিয়ে অসাধ্যকে আরেকবার সাধন করে দেখিয়ে দিলেন পিতা মুজিবের কন্যা। অর্বাচীন রাজনীতিক, পণ্ডিতদের ভবিষ্যদ্বাণী তিনি মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। একা লড়াই করে এই অভাবিত বিজয় অর্জন করেছেন। সে কথা বুঝতে এখনও পণ্ডিতেরা মাথা চুলকাচ্ছেন।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী পদ্মা সেতুর যুগান্তকারী বিজয়কে দেখেন, বাঙালি জাতির হার না মানার প্রতীক হিসেবে। তাঁর মতে, ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ ইট-পাথরের তৈরি নয়, এর সঙ্গে কোটি মানুষের ভালোবাসা, আবেগ, গৌরব মিশে আছে। বাঙালি জাতি যেকোনও প্রতিকূল পরিবেশে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, এই সেতু তার প্রমাণ।’

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পদ্মা সেতুর বিজয়গাঁথাকে দেখেন বাঙালির সক্ষমতা এবং অপমানের প্রতিশোধ হিসেবে। তিনি জাতি হিসেবে অকৃতজ্ঞ না হতেই বারবার প্রধানমন্ত্রীর নামেই পদ্মা সেতুর নামকরণের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ জনপদের সঙ্গে সরাসরি রাজধানীর যোগাযোগ স্থাপনের এই সেতুকে নিজের নামে নয় নদীর নামে হওয়াকেই যুক্তিযুক্ত মনে করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দাবিতে তিনি সায় দেননি। পরে সেতু বিভাগ এই সেতুর নাম ‘পদ্মা সেতু’ ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। ‘যদি কাগজে লেখো নাম কাগজ ছিঁড়ে যাবে/পাথরে লেখো নাম পাথর ক্ষয়ে যাবে/হৃদয়ে লেখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে’ মান্না দে’র গানের শরণে এভাবেই সংসদে দু:খবোধ করেছিলেন ওবায়দুল কাদের।

শিক্ষামন্ত্রী, আওয়ামী লীগের চারবারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: দীপু মনি এমপি’র কাছে স্বপ্নপূরণের এই সেতু আত্মবিশ্বাস আর আত্মমর্যাদার প্রতীক। বিশ্বব্যাংকের নয়-ছয়, দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রের ওই সময়টিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। ফলত বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিলেন দীপু মনিও।

সব দোলাচল, অনিশ্চয়তা এবং ষড়যন্ত্রের কুয়াশা ভেদ করে পদ্মা সেতু বানানোর লড়াইয়ে শেখ হাসিনার বিজয় অর্জন স্বভাবতই হৃদয়ের মর্মমূল থেকে আবেগ-আনন্দ উদ্দীপ্ত ও গর্বিত করে তাকেও। সপ্তাহ দুয়েক আগে সংসদে নানা ষড়যন্ত্রকে পায়ে মাড়িয়ে পদ্মা সেতুর অভ্যুদয়ের ইতিহাস আবেগ-বাস্তবতার বিচ্ছুরণে উপস্থাপন করেন সরকারের প্রভাবশালী ও অভিজ্ঞ এই মন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সততা, সাহস, দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতার কাছে সব ষড়যন্ত্র পরাজিত হয়েছে বলেই পদ্মা সেতু তাঁর কাছে ‘আত্মবিশ্বাস আর আত্মমর্যাদার প্রতীক’। শত প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এই মহাকাব্যিক অর্জন বুঝিয়ে দিয়েছে পদ্মা নদী বাঙালির শুন্য হৃদয়ের বাহন নয় মোটেও। বরং বুকভরা গর্ব আর নয়নজোড়া স্বপ্নের সাক্ষী।

‘বাঙালি জাতির গর্বের সম্পদ পদ্মা সেতু। এই সেতু আমাদের আত্মমর্যাদা, দৃঢ়তা ও অর্থনৈতিক শক্তিমত্তার প্রতীক’ বলছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান এমপি। তিনি বলেন, ‘শত প্রতিকূলতা, বাধা-বিপত্তি, বিশ্বব্যাংকের ভিত্তিহীন অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু নির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতোই আপসহীন, অটল ও অবিচল।

তিনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। অনেক গুজব রটিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন। এই সেতু জিডিপিতে ১ দশমিক ৩ থেকে ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বেশি হবে, অর্থনৈতিকভাবে দেশ আরও মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে।’

পদ্মার সংকীর্ণতাশূন্য নীল আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে মহাগৌরবের নিদর্শন, ইতিহাসের বিস্ময় পদ্মা সেতুর অবকাঠামো। পদ্মা সেতুর কথা ছড়িয়ে পড়েছে দেশ দেশান্তরে। পদ্মার এপাড় থেকে ওপাড় দেখা যায় না। কিন্তু প্রত্যয়ের দীপ্ত শিখা এই সেতু দিয়ে এখন পদ্মার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছোঁয়া যাবে হাওয়ার বেগে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অংশ হতে চলা এই সেতু নিয়ে হৃদয়গ্রোথিত আবেগ-উচ্ছ্বাসের বাতাবরণে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা: এনামুর রহমান এমপি বলছিলেন ঠিক এমন ‘স্বপ্ন দেখতে সাহস লাগে। বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই সাহস আছে। তিনি সেই সাহসীযাত্রায় সঙ্গী করেছেন আঠার কোটির বাংলাদেশকে। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন তাঁরই হাত ধরে বাংলাদেশের সাফল্যের ইতিহাসে রচনা করবে আরেকটি বড় ইতিহাস।’

২০০৮ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করেন। শুরু করেন মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার। এই দু’বিচারের মাধ্যমে গোটা জাতিকে পূর্ণ কলঙ্কমুক্ত করেছেন, কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করেছেন। মুক্তি দিয়েছেন বিচারহীনতার সংস্কৃতির গ্লানি থেকেও।

ঠিক তেমনি বিশ্বব্যাংকের চলে যাওয়াকে ফুৎকারে উড়িয়ে মেরুদন্ড সোজা করে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করে সবার টনক নড়িয়ে দিয়েছেন। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন বদলে যাওয়া বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। অটল পণে শক্ত হাতে হাল ধরেছিলেন বলেই পদ্মা সেতু আজ আনন্দময় বাস্তব। এই তিনটি কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিহাসে চিরকালের জন্য বেঁচে থাকবেন এবং মানুষ তাকে শ্রদ্ধাবনতচিত্তেই স্মরণ করবে।

শিল্প সুষমামন্ডিত কন্ঠে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম’র উচ্চারণ ‘পদ্মা সেতু শুধু সেতু নয়, এটি আমাদের বঞ্চনার পরিসমাপ্তির উপাখ্যান।’ পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে অর্থনীতির নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সুখের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। এই সেতুর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল হবে। দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প গড়ে উঠেবে, শিল্পের সাথে সাথে টাউনশিপ গড়ে উঠেবে। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপন এ অঞ্চলে রেল যোগাযোগ না থাকার বিদ্রুপের পরিসমাপ্তি।’

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের অর্থনীতির শক্তিমত্তার দৃষ্টান্ত। ইতিহাসের বহু কাক্সিক্ষত সর্ববৃহৎ অবকাঠামো। বাঙালি জাতির জীবনে আজ সেই গৌরবোজ্জ্বল দিন। বিশ্ব মানচিত্রে আজ অভ্যুদয় ঘটতে যাচ্ছে নতুন এক বাংলাদেশের। অহঙ্কারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর এই দিনেই গর্বিত বাঙালি জাতির নেতা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে দিচ্ছেন।

পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তুলনামূলক আর্থিক চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘১৯১০ থেকে ১৯১৫ সালের মধ্যে নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ আজকে নির্মাণ করতে স্বর্ণমূল্য হিসেবে লাগতো ১৭ হাজার ৩৫ কোটি টাকা।

হার্ডিঞ্জ ব্রিজের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ১.৮ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু তার চেয়ে সাড়ে তিন গুণ বড় অর্থাৎ ৬.১৫ কিলোমিটার। সে হিসেবে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে লাগতো ৫৮ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা। আর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ হচ্ছে শুধু রেল সেতু। পদ্মা সেতুর ওপরে চার লেনের সড়ক, নিচে রেল। অর্থাৎ এই সেতু নির্মাণে এক লাখ হাজার কোটি টাকা লাগার কথা ছিল। সেখানে পদ্মা সেতু নির্মাণে শেখ হাসিনা কমপক্ষে ২০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করেছেন।’

উদ্বোধনের পর যান চলাচল শুরু হওয়ার মধ্যে দিয়ে একলাফে অনেক দূর এগিয়ে যাবে অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চল। বদলে যাবে চেহারা। গতির ঝড় উঠবে সড়কে। দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ কমে যাবে ২ থেকে ৪ ঘণ্টা। এই সেতু দেশে সৃষ্টি করবে বহুমাত্রিক ক্ষেত্র।

বাড়বে আমদানি-রপ্তানির সম্ভাবনা। ইতিবাচক প্রভাব রাখবে কৃষি অর্থনীতিতেও। আসলে এই সেতু বদলে দিবে গোটা বাংলাদেশকেই। দক্ষিণের জেলাসমূহের বার্ষিক জিডিপি ২ শতাংশ এবং দেশের সামগ্রিক জিডিপি ১.২ শতাংশের বেশি বাড়বে। পদ্মা সেতুর সড়ক ও রেল সংযোগের কারণে প্রথমবারের মতো সমগ্র দেশ একটি সমন্বিত যোগাযোগ কাঠামোর আওতায় আসবে।

বিশ্বে উদীয়মান অর্থনীতির শক্তি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে আরও দুর্বার গতিতে। সেই নিন্দুকেরাও হয়তো যখন গাড়িতে চড়ে পদ্মা পাড়ি দিবেন তখন সেতুর জন্য শেখ হাসিনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসাই করবেন। এই পদ্মা সেতুই যে বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রার স্বাক্ষর। নদীর স্রোতে না কী সব ভেসে যায়।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীর বুকে স্তম্ভ তৈরি করে দিয়েছেন ভালোবাসার। অবাধ্য পানিও পোষ মেনেছে তাঁর স্বপ্নের শক্তিতে। দুরন্ত পদ্মার এলোচুলে গেঁথে দিয়েছেন বেণি। পদ্মাকে ভালোবাসার অলংকারে ভরিয়ে নদী, সেতু আর মানুষে মিলে করেছেন আকাশছোঁয়া যাত্রা। সত্যিই ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন শেখ হাসিনা। আর থাকবেনই বা না কেন? এ কেবল নিছক এক সেতু নয়, মাথা না নোয়াবার এক মূর্তিমান প্রতীক যে পদ্মা সেতু।
পিতা মুজিবের কন্যা দেখিয়ে দিলেন- পদ্মা সেতু কারও দানে নয়।

কালের আলো/এসবি/এমএম