ঝুঁকিপূর্ণ হলি আর্টিজান অপারেশনে আইজিপি’র সঙ্গে ছিলেন সন্তানও!

প্রকাশিতঃ 9:45 am | November 24, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক, কালের আলো :
দিনটি ছিলো শুক্রবার। ২০১৬ সালের পহেলা জুলাই; ২৫ রমজান। রমজানের একটি অনুষ্ঠান থেকে বাসায় ফিরছিলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। পথেই খবর আসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফলে আর বাড়ি ফেরা হয়নি।

কঠিন পরিস্থিতিতে নিজের সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের হলি আর্টিজান বেকারিতে অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন জাবেদ পাটোয়ারী। উদ্বেগ, উৎকন্ঠা নিয়েই ঘন্টার পর ঘন্টা ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিলেন সড়কে। পরিস্থিতির কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ সেই অভিযানে পুলিশ কর্মকর্তা বাবা’র সঙ্গী হয়েছিলেন আদরে বড় সন্তানও।

সম্প্রতি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাতকারে পেশাগত জীবনের নানা স্মৃতির কথা বলেন বর্তমান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, বিপিএম (বার)। এই প্রসঙ্গে প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের উত্তরে গোটা দেশ ও বিশ্বকে স্তব্ধ করে দেওয়া সেই রাতের কথা বলতে গিয়ে এমন তথ্য জানান পুলিশ প্রধান।

জঙ্গিদের ভয়ঙ্কর, নৃশংসতা ও বর্বরতার মধ্যেও সেই অভিযানে বড় রকমের সফলতা দেখিয়েছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টের’ আগে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিলেন দেশি-বিদেশী নাগরিক ও রেস্তোরাটি’র কর্মীসহ ৩২ জন।

টিভি চ্যানেলটির প্রতিবেদক বর্তমান পুলিশ প্রধান ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী’র ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনে স্বশরীরে উপস্থিত হওয়ার বিষয়টির প্রশংসা করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে তিনি জাবেদ পাটোয়ারী’র সঙ্গে নিজের এই সংক্রান্ত অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন।

পাশাপাশি জানতে চান ঝুঁকিপূর্ণ এসব অভিযানের ক্ষেত্রে পরিবারের পক্ষ থেকে কতটুকু সহায়তা পাওয়া যায়, তারা কতটুকু শঙ্কিত থাকে এবং তাদেরকে কীভাবে স্বান্তনা দেন পুলিশের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা।

আইজিপি ড.মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী উত্তর দেন এভাবে- ‘তারা সব বিষয়ে আমার পাশে থাকে। আমার কষ্টটা বুঝার চেষ্টা করেন। ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনের কথা যদি বলেন। হলি আর্টিজানের সেই সময় রোজার সময়।

রোজার অনুষ্ঠান থেকে রাতে ফিরছিলাম। সাথে আমার বড় সন্তান ছিলো। সেও কিন্তু আমার সাথে সেদিন সারা রাত ঘটনাস্থলে ছিলো।’

আইজিপি’র কথার ফাঁকেই প্রতিবেদক যোগ করে বলেন, ‘আপনি একটি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকক্ষণ। আমি আপনার পাশে ছিলাম। ঘন্টার পর ঘন্টা আপনি দাঁড়িয়ে ছিলেন।’ এরপর আইজিপি বলেন, ‘আমি সারা রাত ছিলাম। সকাল বেলা ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত ছিলাম।

পুরো অপারেশন শেষ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট পেশ করে ওই স্থান থেকে বাসায় ফিরি। আমি মনে করি আমার পরিবার আমাকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করে থাকে।’

বাংলাদেশ পুলিশের এই মহাপরিদর্শক প্রায় সময়েই বলেন, ‘হলি আর্টিজানে হামলার খুব অল্প সময়ে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। ঠিক যেভাবে ১৯৭১ সালে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম।

এরপর থেকে দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশ যে ভূমিকা পালন করেছে, তা বিশ্বের কাছে বিস্ময়। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।’

কালের আলো/এমএইচএ/এএ