বঙ্গবন্ধু কন্যার উদারতায় আপ্লুত রওশন এরশাদ

প্রকাশিতঃ 9:09 pm | June 29, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর চলছে সাধারণ আলোচনা। এই আলোচনায় অংশ নিতে প্রায় এক বছর পর সংসদে যোগ দিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ। উন্নত চিকিৎসা শেষে প্রায় সাত মাস পর গত সোমবার (২৭ জুন) থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফেরেন তিনি।

সংসদ অধিবেশন শুরুর আগে বুধবার (২৯ জুন) বিকেলেই সেখানে উপস্থিত হন বিরোধী দলীয় নেতা। নির্ধারিত আসনের পরিবর্তে তিনি বসেছিলেন হুইল চেয়ারে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে এসে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিরোধী দলীয় নেতা রওশনের সংসদে উপস্থিতি তার নজরে আসে। আর এ সময়েই বিরল এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

প্রধানমন্ত্রী সংসদের অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেই বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের কাছে ছুটে যান। এ সময় তার পাশেই ছিলেন সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার সার্বিক খোঁজ খবর নেন এবং তার সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করেন।

এ ঘটনায় অনেকেই অবাক হলেও একজন বিরোধী দলীয় নেতার প্রতি তার অনন্য উদারতা ও সহমর্মিতা দৃষ্টি কাড়ে সবার। স্বভাবতই তখন আবেগ আপ্লুত ছিলেন রওশন এরশাদ নিজেও।

একজন বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও বিরোধী দলীয় নেতার প্রতি প্রধানমন্ত্রীর এমন হৃদয়গ্রোথিত ভালোবাসা ও ঔদার্য্য আরও একবার দেখলেন সংসদের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিরাও।

অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর মানুষকে সম্মান জানানোর নজির এবারই প্রথম নয়। অতীতেও বহুবার একই চেহারায় দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীকে।

আদতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনই; একেবারেই সাদামাটা। কখনোই দামি ব্র্যান্ডের কাপড় পরেন না। প্রসাধনীও ব্যবহার করেন একেবারেই সাধারণ। পাটের জুতা ও ব্যাগ ব্যবহার করেন। জামদানির মতো দামি শাড়ি পরলেও সেটার দাম ছয় হাজারের মধ্যে। যা স্পর্শ করেন তাই তাঁর হাতের ছোঁয়ায় সোনা হয়ে যায়।

রওশন এরশাদ এদিন সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা উচ্চারণ করেছেন দৃঢ়চিত্তেই। বিরোধী দলীয় নেতা বলেছেন, ‘গত বছরের আগস্ট থেকে আমি অসুস্থ। সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছি। আপনারা সবাই দোয়া করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় স্পিকার আপনি, সার্বক্ষণিক আমার খোঁজ নিয়েছেন। সংসদে কথা হয়েছে।’

পরে অর্থ বিলের ওপর দেয়া সংশোধনীতে বক্তব্য দেওয়ার সময় বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও সরকারী দলের এমপিরা প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন।

তারা বলেন, সংসদ নেতা বিরোধী দলীয় নেতার আসনের পাশে এসে খোঁজখবর নিয়েছেন। এটাই হচ্ছে সংসদ ও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের মাঝে গভীর হৃদ্যতা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বহুবার নিজের পাশেই রওশন এরশাদকে বসিয়ে এক সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতার মধ্যকার এমন মধুর সম্পর্ক দেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসকে করেছে মাধুর্যমন্ডিত, দিয়েছে নব উচ্চতা।

এক বাক্যে সবাই বলছেন, দেশের মানুষের প্রতি পিতা মুজিবের মতোই গভীর মমত্ববোধ ও অফুরান ভালোবাসার কারণেই আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তার অধিকারী হয়েছেন শেখ হাসিনা। গড়েছেন হ্যাটট্রিক প্রধানমন্ত্রীর ইতিহাসও। জয়তু বঙ্গবন্ধু কন্যা, গণতন্ত্রের রাজনীতির বাতিঘর শেখ হাসিনা।

কালের আলো/এসবি/এমএম