শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস, যেদিন অবরুদ্ধ হয়েছিল গণতন্ত্র
প্রকাশিতঃ 9:54 am | July 16, 2022
বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই বদলে যেতে শুরু করে দৃশ্যপট। সুধা সদনে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রবেশে বাধা, শেখ হাসিনার চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ-ইত্যাদি কারণেই সবার মনেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল ‘প্রিয় আপা’ গ্রেফতার হতে পারেন। নিজেদের ছক বাস্তবায়নে মিথ্যা-বানোয়াট দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির সাজানো মামলা দেওয়া হয়েছিল আগেই।
আরও পড়ুন: অফুরান দেশপ্রেমেই অনন্য উচ্চতায় মুজিব কন্যা
অত:পর এক ঘনঘোর অমানিশা নেমে এলো সুধা সদনে, প্রকারান্তরে বাঙালি জাতির ভাগ্যকাশেও। সময়টা ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই। সেদিন ভোরেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় দুই সহস্রাধিক সদস্য পুরোপুরি বে-আইনীভাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডিস্থ বাসভবন সুধা সদন ঘেরাও করে। চরম বৈরী সেই মুহুর্তে তিনি ফজরের নামাজ আদায় করেন।
আরও পড়ুন: সেই কুশীলবদের ‘টার্গেট’ ছিল ‘মাইনাস শেখ হাসিনা’
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা শেখ হাসিনাকে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে সুধা সদন থেকে বের করে নিয়ে আসে। যৌথবাহিনীর সদস্যরা বন্দি অবস্থায় তাঁকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে। তৎকালীন অবৈধ ও অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নীলনকশা চলতে থাকে।
ওইদিন আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়ের প্রায় দুই ঘণ্টা আগেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জামিন আবেদন আইন বহির্ভূতভাবে না মঞ্জুর করে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকে ফ্রাঙ্কেনস্টাইন কায়দায় ‘অবরুদ্ধ’ করা হয়েছিল।
কিন্তু বাঙালি জাতির গণতান্ত্রিক-অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া আপোসহীন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী সেদিন আদালতের গেটে দাঁড়িয়ে প্রায় ৩৬ মিনিটের এক অগ্নিঝরা বক্তব্যের মাধ্যমে তৎকালীন অবৈধ সরকারের হীন-রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন।
আরও পড়ুন: শেখ হাসিনার আবেগময় সেই চিঠিই তরান্বিত করে মুক্তি আন্দোলনকে!
পরে অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুগত আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়ার পরপরই শেখ হাসিনাকে সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগারে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়।
বিভিন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় দীর্ঘ ১১ মাস তাঁকে কারাগারে আটক রাখা হয়। ওই বিশেষ কারাগারের পাশেই সংসদ ভবন চত্বরে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করে তাঁর বিচার প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়।
গ্রেফতার হওয়ার আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিক সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে যান।
সেই সময় জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার মুক্তি এবং নির্বাচনের দাবিতে সংগঠিত হতে থাকে। সরকার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে দলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংগঠিত প্রতিবাদ ও ধীরে ধীরে আন্দোলন গড়ে তোলে।
দলের সভাপতির অনুপস্থিতি ও প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমান নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ রাখেন এবং নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। আবার কারাবন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নিজেও বারবার দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তাঁর আইনজীবী ও চিকিৎসকরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদের মাধ্যমে তিনি দলকে এ ব্যাপারে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে নেতাদের কাছে বার্তা পাঠান।
কারান্তরীণ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তাঁর উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি অবস্থার মধ্যে আওয়ামী লীগ ও এর সব সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষের পক্ষ থেকে তাঁকে বিদেশে পাঠানোর দাবি ওঠে।
আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ক্রমাগত চাপ, জনগণের আপসহীন মনোভাব ও অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৮ সালের ১১ জুন শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১১ মাস দীর্ঘ কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েই তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান।
সেই থেকেই প্রতি বছরের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন দিনটি ‘শেখ হাসিনা’র কারাবন্দি দিবস’ হিসাবে পালন করে থাকে। এবারও দিবসটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন এবং বিভিন্ন সংগঠন স্বাস্থ্য বিধি মেনে আলোচনা সভা ও সমাবেশসহ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
দিবসটি উপলক্ষে শনিবার (১৬ জুলাই) ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা করবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ।
কারাবন্দি দিবসে যার যার অবস্থান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দেশবাসীকে প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একই সঙ্গে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল বাঙালির হৃদয়ে দেশপ্রেমের বহ্নিশিখা প্রজ্বলিত করে সংকট জয়ের ঐক্যবদ্ধ সুরক্ষাব্যুহ সৃষ্টি করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানান।
কালের আলো/জিকেএম/এমএএএমকে