পবিত্র জুমার দিনের ফজিলত
প্রকাশিতঃ 10:53 am | July 29, 2022
মাহমুদ আহমদ :
সপ্তাহের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ফজিলতপূর্ণ ও সেরা দিন পবিত্র জুমার দিন। আল্লাহতায়ালার কাছে অন্য সব দিনের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত দিন জুমার দিন। এ দিনকে আল্লাহতায়ালা সীমাহীন বরকত দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন।
এদিনের গুরুত্ব ও ফজিলত তুলে ধরে পবিত্র কোরআনে সূরা জুমা নামে একটি সূরাও বিশ্বনবি ও শ্রেষ্ঠনবি হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর আল্লাহতায়ালা নাজিল করেছেন।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-‘হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সূরা জুমুআ : আয়াত ৯) জুমার নামাজের তাগিদ শুধু কুরআনেই নয়, হাদিসেও এসেছে। হজরত তারিক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি এ চার প্রকার মানুষ ছাড়া সব মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য।’ (আবু দাউদ) হাদিস শরিফে আরো এসেছে, মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, আগে আগে মসজিদে গমন করল, হেঁটে মসজিদে গেল, ইমামের কাছাকাছি বসল, মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনল, কোনো কথা বলল না, আল্লাহতায়ালা তাকে প্রতি কদমে এক বছরের নফল ইবাদতের সওয়াব দান করবেন। (মুসনাদে আহমাদ) নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে জানাবত তথা অপবিত্র অবস্থা থেকে পবিত্র হওয়ার মতো গোসল করবে, এরপর (প্রথম সময়ে) মসজিদে হাজির হবে সে যেন একটি উট কোরবানি করলো। আর যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময়ে মসজিদে গেল সে যেন একটি গরু কোরবানি করলো। যে তৃতীয় সময়ে গেল সে যেন শিংওয়ালা ছাগল কোরবানি করলো। যে চতুর্থ সময়ে গেল সে যেন একটি মুরগী উৎসর্গ করলো। যে পঞ্চম সময়ে গেল সে যেন ডিম উৎসর্গ করলো। এরপর যখন ইমাম বের হয়ে যায় তখন ফেরেশতারা (লেখা বন্ধ করে) ইমামের কাছে হাজির হয়ে জিকির (খুতবা) শুনতে থাকে।’ (বুখারি) এছাড়া জুমার দিনগুলোতে এমন বিশেষ মুহূর্ত আসে যখন বান্দার দোয়া আল্লাহ গ্রহণ করে নেন।
জুমার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যার ওপর সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে’ (সহিহ মুসলিম)। জুমার ফজিলত সম্পর্কে মহানবি (সা.) আরো বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন’ (ইবনে মাজাহ)। হাদিসে আরো উল্লেখ আছে মহানবি (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন’ (ইবনে মাজাহ)।
একটু ভেবে দেখুন, মহান আল্লাহপাক পবিত্র জুমার দিনকে আমাদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে গোষণা করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি এই দিনের যথাযথ মূল্যায়ন করছি? আমরা কি আমাদের জাগতিক কাজকর্ম বন্ধ করে আজানের সাথে সাথে মসজিদে গিয়ে খুতবা, নামাজ আদায় এবং দিনের অন্যান্য সময় আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করি?
তাই এদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। বিশ্বনবি (সা.) আরো বলেছেন, ‘হে মুসলমানগণ, তোমরা এ দিন মিসওয়াক করো, গোসল করো ও সুগন্ধি লাগাও’ (মিশকাত)। পবিত্র জুমার দিনের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তাকে কবরের ফিতনা হতে নিরাপদ রাখেন’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, বাইহাকি, মিশকাত) মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমরা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান, কেননা আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে সপ্তাহে বিশেষ একটি দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন, আমরা যেন এই দিনে বিশেষভাবে তার ইবাদতে রত হই। এছাড়া এ দিনে আমরা যেন বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ করি।
হাদিসে উল্লেখ আছে, হজরত আওস ইবনে আওস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম একটি দিন হচ্ছে জুমার দিন। সুতরাং ঐ দিনে তোমরা আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ কর। কেননা, তোমাদের পাঠ করা দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়’ (আবু দাউদ)।
জুমার দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনা করে প্রতিটি মুসলিমের উচিত দিনটিকে কাজে লাগানো। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে জুমার গুরুত্ব অনুধাবন করার এবং সে অনুযায়ী আমল করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট