মারা যাননি আমজাদ হোসেন, গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ
প্রকাশিতঃ 5:12 pm | November 27, 2018

শোবিজ ডেস্ক, কালের আলো:
মারা গেছেন কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেন। মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) এমনটাই গুঞ্জন
ছড়িয়েছিলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। তবে বিষয়টি নাকচ করে আমজাদ হোসেনের ছেলে সোহেল আরমান জানান, তার বাবা আমজাদ হোসেন এখন আল্লাহর রহমত ও দেশবাসীর দোয়ায় নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আজ সন্ধ্যা সাতটায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ব্যাংকক নেওয়া হবে তাকে।
সোহেল আরমান আরও বলেছেন ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বাবার চিকিৎসা চলছে। এখন বিভ্রান্তি সৃষ্টির সময় নয়। সবাইকে অনুরোধ করবো, গুজব ছড়াবেন না। আপনারা সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’
সপ্তাহখানেক আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়ায় ঢাকার তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আমজাদ হোসেনকে। হাসপাতালে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়। শুরু থেকেই তাকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের বরেণ্য এই নির্মাতার শারিরীক অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালে ভর্তির তিন দিনের মাথায় তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পরে রোববার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে উন্নত চিকিৎসার জন্য ও এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়ার জন্য মোট ৪২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা একুশে পদকজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক আমজাদ হোসেনের পরিবারের হাতে তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আমজাদ হোসেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট অভিনেতা, লেখক এবং ব্যতিক্রমধর্মী চলচ্চিত্রকার।
আমজাদ হোসেন ১৯৪২ সালের ১৪ই আগস্ট তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) জামালপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। লেখালেখির মাধ্যমেই তার সৃজনশীল জীবন শুরু। ছড়া দিয়ে সাহিত্যের অঙ্গণে তার প্রবেশ। তার প্রথম কবিতা ছাপা হয় বিখ্যাত দেশ (পত্রিকা) পত্রিকায়। ছোটদের জন্যও তিনি লিখেছেন বহু গল্প, ছড়া এবং উপন্যাস। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ও গল্প লিখেছেন।
১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্রে আগমন করেন। পরে তিনি চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন এবং চলচ্চিত্র পরিচালনা করে খ্যাতি অর্জন করেন। একই বছর মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘হারানো দিন’ ছবিতে অভিনয় করেন।
পরিচালক সালাহ্উদ্দিন তার রচিত নাটক ধারাপাত অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৬৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ধারাপাত তার রচিত প্রথম চলচ্চিত্র এবং তিনি এই চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয়ও করেন।
পরবর্তীকালে তিনি জহির রায়হানের দলে যোগ দেন ও তার সহকারী হিসেবে কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- লোককাহিনী নির্ভর বেহুলা (১৯৬৬)।
১৯৬২ সালে ছবিটির কাজ শুরু হয়। তিনি এই ছবির সংলাপ রচনা করেন এবং এতে অভিনয় করেন। এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে তিনি অভিনেতা রাজ্জাকের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়, যে সম্পর্ক রাজ্জাকের মৃত্যু পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এছাড়া তিনি জহির রায়হানের আনোয়ারা চলচ্চিত্রেও রাজ্জাকের সাথে অভিনয় করেন।
তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘আগুন নিয়ে খেলা’ (১৯৬৭)। তিনি এটি নুরুল হক বাচ্চুর সাথে যৌথভাবে নির্মাণ করেন। একক পরিচালক হিসেবে তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘জুলেখা’ (১৯৬৭)। পরের বছর তিনি নুরুল হক বাচ্চু, মুস্তাফা মেহমুদ ও রহীম নওয়াজের সাথে যৌথভাবে দুই ভাই চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। ছবিটির প্রযোজক ও চিত্রনাট্যকার ছিলেন জহির রায়হান। এছাড়া তিনি এককভাবে ‘বাল্যবন্ধু’ (১৯৬৮) চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
১৯৭০ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত তার লেখা চলচ্চিত্র ‘জীবন থেকে নেয়া’, পরবর্তীতে বাংলাদেশের মানুষের কাছে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়।
১৯৭০-এর দশকে তিনি ‘নয়নমনি’ (১৯৭৬), ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ (১৯৭৮), ‘সুন্দরী’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৮০-এর দশকে ‘কসাই’ (১৯৮০),‘ জন্ম থেকে জ্বলছি’ (১৯৮২), ‘দুই পয়সার আলতা’ (১৯৮২), ‘ভাত দে’ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বাংলা চলচ্চিত্র।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক (১৯৯৩) ও স্বাধীনতা পুরস্কার এ ভূষিত করে। এছাড়া সাহিত্য রচনার জন্য তিনি ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে দুইবার অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার ও ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।
এছাড়াও গুণী এই পরিচালক ১৯৭৮ সালে ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ এবং ১৯৮৪ সালে ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
কালের আলো/ওএইচ