আইজিপির জবানীতে মহাকাব্যের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু
প্রকাশিতঃ 2:52 pm | August 15, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো :
বাংলা ও বাঙালির স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিজের স্বত:স্ফূর্ত আবেগ আর শ্রদ্ধাবনত চিত্তে বরাবরই নিজের জবানীতে তুলে আনেন বাংলাদেশ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। বাঙালি ও বিশ্ববাসীর মানসপটে স্বমহিমায় উজ্জ্বল, চিরভাস্বর, মৃত্যুঞ্জয়ী ও শৃঙ্খলমুক্তির চির আরাধ্য পুরুষকে তিনি কখনও উচ্চারিত করেন ইতিহাসের বজ্রকন্ঠের আলোকে, তারুণ্যের দীপ্তিতে, কর্মের চাঞ্চল্যে এবং স্বপ্নের অভিলাষে।
স্বপ্নবাজ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, আধুনিক, তেজোদীপ্ত ও কর্মঠ পুলিশপ্রধান মনে করেন-‘বঙ্গবন্ধু তাঁর নাতিদীর্ঘ সময়ে বাঙালি জাতিকে জাতি হিসেবে গঠন করে তার সত্তার স্বীকৃতির ব্যবস্থা করেছেন, সেটা বিস্ময়কর।’
তিনি নিজের প্রতিটি বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেওয়ার চূড়ান্ত সংগ্রাম, পরাধীনতার গ্লানি থেকে নিজেদের মুক্ত করার সোপান, ঐতিহাসিক সেই ৭ মার্চে গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের বাণী, বাঙালি জাতির ৪ হাজার বছরের দু:খ-বঞ্চনা- বাদ যায়না কোন কিছুই। দেশপ্রেমকে সুসংহত করতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চর্চার গুরুত্বও উপস্থাপন করেন সুনিপুণ দক্ষতায়। আগামী প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুকে যত বেশী চর্চা করবে তাতে পারস্পরিক ঐক্য ও দেশপ্রেম তত বেশী সুদৃঢ় হবে বলেও মনে করেন তিনি।
গত সোমবার (৮ আগস্ট) বিকেলে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়াম রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এ আলোচনা সভা ও কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, ‘আমাদের চার হাজার বছরের ইতিহাস। আমরা পূর্ণাঙ্গ জাতিসত্তা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারিনি বিধায় বিশ্ব পরিমণ্ডলে নিজেদেরকেও আবির্ভূত করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধু তাঁর নাতিদীর্ঘ সময়ে বাঙালি জাতিকে জাতি হিসেবে গঠন করে তার সত্তার স্বীকৃতির ব্যবস্থা করেছেন, সেটা বিস্ময়কর।’
তিনি সেদিন আরও বলেন, ‘যারা অবয়বে বাঙালি জাতিসত্তার অংশ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নয়, তারা ভিতর থেকে ঘুণে পোকার মতো আমাদের খেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ যেমন আগেও ছিল এখনও আছে। এই চ্যালেঞ্জের কারণে আমরা বঙ্গবন্ধুকে হারিয়েছি আমাদের যে মুক্তির কান্ডারী তাদেরকেও হারিয়েছি। আমাদের সবাইকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এই জাতিকেই সোচ্চার হতে হবে, সতর্ক হতে হবে। আমাদের প্রহরীর মতো দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
চলতি বছরের বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর ফার্মগেটস্থ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘এসো বই পড়ি, পুরস্কার জিতি’ স্লোগানে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ বইয়ের ওপর কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম (বার) বলেন, ‘আমাদেরকে স্বাধীনতার জন্য হাজার বছর ধরে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, অপমানের ক্ষত নিয়ে অপেক্ষা করতে হয়েছে একজন বঙ্গবন্ধুর জন্য। বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে হাজার বছরের ক্ষত থেকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের মুক্তিদাতা, ত্রাণকর্তা। তিনি আমাদেরকে স্বল্প সময়ে একটি পতাকা, একটি দেশ, একটি মানচিত্র উপহার দিয়েছেন।’
স্বাধীনতার অভিযাত্রার মহান সোপান বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে রাজনীতির ‘ম্যাগনিফায়িং গ্লাস’ দিয়ে না দেখে দেশপ্রেমের ‘ম্যাগনিফায়িং গ্লাস’ দিয়ে দেখারও আহ্বান জানিয়েছেন বেশ কয়েকবার। ২০৪১ সালের উন্নত দেশের উপযোগী পুলিশ বাহিনী বিনির্মাণের প্রেরণা ও প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এই পুলিশের আইজি কেবল মুখ:নিসৃত শব্দরাজি নয়, দেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের বিরুদ্ধে বজ্রবৃষ্টির মতো তীব্রভাবে যেন অভিঘাত করেছেন নিজের প্রতিটি প্রাঞ্জল বক্তব্যে।
পুলিশ মহাপরিদর্শকের মুখে উচ্চারিত প্রতিটি শব্দই যেন অব্যর্থ ও পাকিপ্রেমে হাবুডুবু খাওয়া অপশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামী ও সাহসে দেশপ্রেমিক নিজ বাহিনীর সদস্যদের আত্নশক্তিতে বলীয়ান করে তোলার জন্য যথেষ্ট। তিনি ইতিহাসের ধারাপাতের মধ্যে দিয়ে নিজের সুচিন্তিত মতামতের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কেবল যুগের সৃষ্টি নয়। মহান জাতির পিতা ইতিহাসের পাললিক স্রষ্টাও।
বাঙালির চার হাজার বছরের অস্তিত্বের ইতিহাস
২০২০ সালের বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত মহান বিজয় দিবস-২০২০ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা শীষর্ক আলোচনা সভা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা বই ‘দিশারী’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ নিজের দীর্ঘ বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে বাঙালির ৪ হাজার বছরের অস্তিত্বের ইতিহাস হিসেবেই উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ২৩ মিনিটের ভাষণ থেকে চার হাজার বছরের পটভূমি পাওয়া যায়। এই পটভূমি নির্দেশ করে, আমরা কিভাবে শুরু থেকে অতিক্রম করে জাতিসত্তা ও স্বাধীনতা অর্জন করেছি।’
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন আজ আমি দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। তখন তিনি কিন্ত বাঙালি জাতির ৪ হাজার বছরের অস্তিত্ব হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। তার এই দুঃখ ও ভারাক্রান্ত মন ছিল, ৪ হাজার বছরের বঞ্চনার দুঃখ, অপমানের দুঃখ, বৈষম্যের দুঃখ। যে বৈষম্য কারণে মানুষকে মনে করতে হয়েছে, শুধু দুধভাত হলেই তাদের জন্য যথেষ্ট।’
‘বাঙালি জাতি কখনো নিজেরা শাসন করেননি, শাসিত হয়েছেন’ মন্তব্য করে পুলিশপ্রধান বলেন, ‘চার হাজার বছরের ঘাত-প্রতিঘাতের পর নানা চড়াই উৎরাইয়ের ভেতর দিয়ে আমাদেরকে স্বাধীনতার দিকে নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।’
গত বছরের বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) রাজধানীর রমনায় পুলিশ কনভেনশন হলে জাতীয় শোক দিবস ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৬তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ইতিহাসের মহানায়ককে শোক-শ্রদ্ধার পাশাপাশি তাঁর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বকেও ইতিহাসের আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বলভাবেই উপস্থাপন করেন আইজিপি ড.বেনজীর আহমেদ।
ওই অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ জনপ্রিয় গণমাধ্যম গার্ডিয়ানের একটি নিউজের হেডলাইন উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘যখন বঙ্গবন্ধু হেঁটে বিমান থেকে নেমে আসেন তখনই বাংলাদেশ রিয়েল্যাটি। তার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ রিয়াল্যাটি ছিলো না।’
জাতি হিসেবে আমরা সৌভাগ্যবান তার কন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সেবা করার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি আজকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করছেন’ যোগ করেন আইজিপি।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমার কাছে মনে হয় ঈশ্বর প্রেরিত। তা না হলে আই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি আমাদের জাতি সত্তার বিকাশ ঘটিয়ে অশিক্ষিত, দারিদ্র্য, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে তিনি যেভাবে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছেন এটি একটি অলৌকিক মহোময় কর্মকান্ড হিসেবে প্রতিপাদ্য হয়। কারণ একটা স্বাধীনতার জন্যে সুদৃঢ় সংস্কৃতির প্রয়োজন আছে। সেই সংস্কৃতি কখনো অল্প সময়ে বিকাশ লাভ করে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সম্ভবত ঈশ্বর প্রেরিত ছিলেন- যে কারণে এই মাত্র ২৪ বছরে মধ্যেই তিনি এটি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।’
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারিত হবে এবং বঙ্গবন্ধু যেটি চেয়েছিলেন ক্ষুধা, দারিদ্র্যতামুক্ত আত্মমর্যাশীল একটি জাতি গঠন। আমরা ক্ষুধাকে অলমোস্ট পরাজিত করেছি, আমরা দারিদ্রকে পরাজিত করার একদম দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছি। আজকে বাংলাদেশ আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে বিশ্বে জানান দিতে সক্ষম হচ্ছে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম স্বপ্নের সেই বাংলাদেশে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সেই সাথে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের প্রতি তার যে ভালোবাসা, তার যে আত্মত্যাগ সেই বিষয়টিও এই অঞ্চলের মানুষ হাজার বছর ধরে স্মরণ করবে।
কালের আলো/বিএস/এমএম