স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভিন্নধর্মী উদ্যোগ, কেন্দ্র থেকে প্রান্ত বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা

প্রকাশিতঃ 10:47 pm | August 17, 2022

গোলাম কিবরিয়া মন্ডল রাইসুল ইসলাম, কালের আলো:

পদ্মা, মেঘনা, যমুনার অন্তহীন বহমানতার সমান্তরালে পুরোদস্তুর ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দল-মত-ধর্ম-বর্ণ-জাত-পাত-শ্রেণি নির্বিশেষে দেশের মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা পরিপূর্ণ ছিল এই কালোত্তীর্ণ কিংবদন্তির রাজনৈতিক দর্শনে।

ফলত বাঙালি জাতির মহান নেতাকে হারানোর বেদনাবিধুর ও কলঙ্কের কালিমায় কলুষিত বিভীষিকাময় ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর দিনে কেন্দ্র থেকে প্রান্ত সাধারণ মানুষের মাঝে অন্যরকম এক ভালোবাসার সৌরভ ছড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এমপির সরাসরি নির্দেশনা ছিল ‘শুধু আলোচনার মধ্যে দিয়ে নয় কাজের মধ্যে দিয়ে মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে’।

মন্ত্রীর কার্যকর নির্দেশনায় তেপান্তর থেকে তেপান্তরে শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে উজ্জ্বল মানবিকতার প্রোজ্জ্বল আভায় দেশের তৃণমূল জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ সফলভাবেই বাস্তবায়ন করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা: আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

প্রতিটি ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুরু করে সরকারি প্রতিটি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিশেষায়িত হাসপাতালে গত সোমবার (০৮ আগস্ট) থেকে সোমবার (১৫ আগস্ট) সপ্তাহব্যাপী বিশেষ সেবা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

এর মধ্যে জাতীয় শোক দিবসের দিনে সোমবার (১৫ আগস্ট) দেশের সব পর্যায়ের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতালে বহি:বিভাগে ৯০ হাজার ৫৩০ জন ও ২১ হাজার ৬’শ জনকে বিশেষায়িত সেবা প্রদান করা হয়েছে।

এছাড়া ভর্তি থেকে সেবা গ্রহণ করেছেন ১০ হাজার ৩০০ রোগী। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস’র পরিচালক ডা: মো: শাহাদাত হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

সূত্র জানায়, বাঙালি জাতির চির আরাধ্য পুরুষের ভাবনা-চিন্তা, স্বপ্ন ও চেতনায় পরিপূর্ণভাবে লালন করেই দেশপ্রেমের মহানুভবতায় কেন্দ্র থেকে প্রান্ত তৃণমূলে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতের মাধ্যমে নিজেদের আলোকময় উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ডা: আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

হৃদয়ে গভীর রক্তক্ষরণ, অনুভূতি, উপলব্ধি ও মননশীলতার পরতে পরতে অসহ্য ও তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা বয়ে যাওয়া শোকের মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন-সংগ্রাম ও অনি:শেষ দেশপ্রেম নিজেদের মননে, চেতনায় অমর-অব্যয় করে রাখতে সপ্তাহব্যাপী বিশেষ সেবা কার্যক্রম আন্দোলিত করেছে সেবা পাওয়া সাধারণ মানুষকে।

রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে ১৫ দিনব্যাপী চিকিৎসাসেবা কর্মসূচি পালিত হয়। সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে এই কর্মসূচি উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। সেদিন ডিজি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীতে যারা শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে মানুষের সেবা দেবেন, আমি তাদের আমার পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’

বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে বলেন তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘মানুষ বিপদে পড়ে ডাক্তারের কাছে আসে। মানুষকে সেবা দিন।’ ’শোকের মাসের শুরুতে কাজের মাধ্যমে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এক অনন্য উপায়।’

কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল কবির জানান, শোকের মাসে পক্ষকালব্যাপী বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, ব্লাড সুগার পরিমাপ, ব্লাড প্রেসার পরিমাপ, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিভিন্ন সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধক সচেতনতা কর্মসূচি, হৃদরোগ, লিভার রোগ, স্ট্রোক, জরায়ু ক্যানসার ইত্যাদি রোগ স্ক্রিনিং কর্মসূচি সফলতার সঙ্গে পালিত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগ ও ইউনিটে বিভাগ ভিত্তিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচিও পালিত হয়।

দিনাজপুরের হাকিমপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষ স্বাস্থ্য সেবা সপ্তাহে সেবা নিতে আসা গৃহবধূ আলেয়া বেগম বলেন, ‘হাকিমপুর হাসপাতালে ফ্রি’তে ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ পরীক্ষা এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে।

আমার মতো সাধারণ রোগীদের জন্য সুবিধা এবং আমরা খুব খুশি। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে রোগীকে একটি কার্ড দেওয়া হয়েছে সেখানে রোগীর ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ এর সকল তথ্য দেওয়া আছে। আমরা হাসপাতালে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করলাম এবং চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেছি।’

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিশেষ সেবা সপ্তাহে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা জুলফিকার ইসলাম বলেন, ‘বর্হিবিভাগে বিনামূল্যে সেবা দেওয়া, বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ও হাসপাতালের ভেতরে হেল্প ডেস্কসহ নানা ধরণের উদ্যোগ আমাদের অভিভূত করেছে।’

একই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক জানান, ‘শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে এই সেবা সপ্তাহের প্রতিদিন বর্হিবিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে এই সাতদিন সেবা দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগের একজন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন প্রতিদিন। যেটা সাধারণত বর্হিবিভাগে হয় না।একইসঙ্গে হাসপাতালে বিনামূল্যে ব্লাড গ্রুপিং এবং ব্লাড ডোনেশনের ব্যবস্থা করা হয়।’

কালের আলো/বিএস/এমএম