‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ রূপকল্প বাস্তবায়নে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ৬ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 7:38 pm | August 25, 2022

কালের আলো রিপোর্ট:

‘রূপকল্প ২০২১’ বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ পর্ব শেষে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। মাস চারেক আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে তৃতীয় বৈঠকে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের নাম পরিবর্তন করে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’ করার সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকেই নির্ধারণ হয় কেমন হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের ৩০ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এটি বাস্তবায়ন করলেও ৩০ সদস্যের এই কমিটিতে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ৬ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী জায়গা পেয়েছেন। তারা হলেন- অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক। এর মধ্যে ডা. দীপু মনি আওয়ামী লীগের টানা চারবারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

সরকারের দায়িত্বশীল এই ৬ জন মন্ত্রীই স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবেন বলে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।

এই কমিটিতে অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, বাণিজ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব, কারিগরি মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব, মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ আরো বেশ কয়েকজন।

জানা যায়, ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ডিজিটাল বাংলাদেশের ঘোষণা দিয়েছিল এবং সেই সময় সকলেই এটিকে অবাস্তব একটি পরিকল্পনা হিসেবে মনে করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ ঘোষিত সময়ের আগেই ডিজিটাল হয়ে যায়। এখন স্মার্ট বাংলাদেশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগের সঙ্গে মূলত জড়িত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। এছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে আওয়ামী লীগ বড় রকমের সফলতা অর্জন করেছে। এবার গড়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ।

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে শক্তি, সাহস ও প্রেরণা জোগাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। আর তাই দেখা যাচ্ছে, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অব থিংসের মতো প্রাগ্রসর (ফ্রন্টিয়ার) বা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যা ইতোমধ্যে অর্থনীতির দ্রুত বিকাশে অবদান রাখতে শুরু করেছে। তার ব্যাপক ব্যবহারকে গুরুত্ব দিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ রূপকল্প।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ রূপকল্প প্রেক্ষিত পরিকল্পনার ভিত্তিমূলে রয়েছে দুটি প্রধান অভীষ্ট। প্রথমত, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি উন্নত দেশ, যেখানে বর্তমান মূল্যে মাথাপিছু আয় হবে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার এবং যা হবে ডিজিটাল বিশ্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা, যেখানে দারিদ্র্য হবে সুদূর অতীতের ঘটনা। প্রেক্ষিত পরিকল্পনার এই লক্ষ্য অর্জনে সহযোগিতা করতেই ‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ রূপকল্পে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগানো হচ্ছে।

কারণ, আগের তিনটি শিল্পবিপ্লবের চেয়ে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বিশ্বে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। সরকার এসব প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার করে ২০৪১ সালের মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আইসিটি খাতের অবদান ২০ শতাংশের বেশি নিশ্চিত করতে চায়। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) তথ্যমতে, জ্বালানি, পরিবহন, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এবং ডিজিটাল উৎপাদন- এই পাঁচটি প্রধান ক্ষেত্র দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হবে।

‘স্মার্ট বাংলাদেশ ২০৪১’ রূপকল্পে এর চেয়েও বেশি ক্ষেত্রগুলোকে দক্ষতার দ্বারা পরিচালনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর আওতায় কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বাণিজ্য, পরিবহন, পরিবেশ, শক্তি ও সম্পদ, অবকাঠামো, বাণিজ্য, গভর্ন্যান্স, আর্থিক লেনদেন, সাপ্লাই চেইন, নিরাপত্তা, এন্টারপ্রেনিউরশিপ, কমিউনিটির মতো খাত প্রযুক্তি দ্বারা পরিচালিত হবে এবং শিক্ষা, কৃষিসহ প্রতিটি খাত হবে স্মার্ট।

কালের আলো/বিএসবি/এএম