ঠিকই সঙ্কট কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ
প্রকাশিতঃ 10:09 am | September 01, 2022

কালের আলো রিপোর্ট :
‘দেশের অর্থনীতি পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে কোনোদিন শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি হবে না’- আবারও দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহেও অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশকেই দৃষ্টান্ত মেনেছেন। পরশু সংসদে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুও বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতীতের সঙ্কট মোকাবিলা করেছেন। সাময়িক সংকট মোকাবিলার ক্ষমতা আমাদের সরকারের আছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আছে।’
বিএনপির রাজনীতিকরা প্রায় সময়েই বলে থাকেন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার পথেই হাঁটছে! সেদিন দলটির এমপি রুমিন ফারহানা এ নিয়ে ছবক বিলিয়েছেন। নেতিবাচক এসব প্রচারণায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে। ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চলছে। পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা হচ্ছে। একদল বিদ্যাজীবী-বুদ্ধিজীবীরাও রসিকতা করতে ছাড়ছেন না। এরই মধ্যে বিদ্যুৎসঙ্কট মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। আশঙ্কা প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে বলেছে, বিদ্যুৎসঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি কমে যেতে পারে।
যদিও চলমান সঙ্কট মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বিভিন্ন নির্দেশনার পাশাপাশি সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদের সবাইকে খরচ কমানোর নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গাড়ির তেল খরচ করে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের ছোটাছুটি না করে ভার্চুয়ালি যোগাযোগ বাড়ানোরও নির্দেশ দেন তিনি।একই সঙ্গে এখনই কম গুরুত্বপূর্ণ জিনিস না কেনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, সরকারি টাকায় বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ রাখতে।
বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এবং জ্বালানি তেল আমদানি কমানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে ডিজেলচালিত সব বিদ্যুৎকেন্দ্রও।
এর আগে বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে গত ১৯ জুলাই থেকে সারা দেশে দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং করা শুরু করে বিদ্যুৎ বিভাগ। শপিং মল, দোকানপাট রাত ৮টার মধ্যে বন্ধেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। সারা দেশে সব ধরনের আলোকসজ্জা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারি অফিসের সূচীতে পরিবর্তন এসেছে। সপ্তাহে দু’দিন বন্ধ থাকছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দামও বেড়েছে। দু’দিন আগে লিটারপ্রতি ৫ টাকা কমানো হয়েছে। নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, খনিজ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সমন্বয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) লোকসান কমানোসহ পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা হবে।
জ্বালানি তেলের দাম এভাবে বাড়ায় নতুন করে আলোচনায় এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ প্রসঙ্গ। অনেকেই বলছেন, আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। তবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সেটি নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, দামবৃদ্ধির সঙ্গে আইএমএফের শর্তের কোনো সম্পর্ক নেই।
এমন বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টিও বাংলাদেশের দিকে। শত উদ্বেগের মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থানকে স্বস্তির বলেই মনে করছেন তারা। গত ১ আগস্ট ‘যে কারণে শ্রীলঙ্কার মতো সংকটে পড়বে না বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাইল্যান্ডভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্যাংকক পোস্ট। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশটির সরকার অর্থনীতির গতি ধরে রাখতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তুলতে, যাতে আমদানির চাহিদা সহজে মেটানো যায়। রফতানি বৃদ্ধি এবং আমদানি কমানোর নীতিও নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
একই দিনে ‘ভূ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রেখেছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস।
এতে বলা হয়, মহামারি-পরবর্তী অর্থনীতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব অস্বীকার করা না গেলেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে বদ্ধপরিকর। তৈরি পোশাক শিল্প এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সকে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি উল্লেখ করে বলা হয়, বিশ্বের উন্নয়নশীল অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
ইকোনমিক টাইমসের এই প্রতিবেদনের পরপরই ২ আগস্ট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে নিবন্ধ প্রকাশ করে পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। ‘টেক অ্যাওয়ে ফ্রম বাংলাদেশ’স লিডারশিপ’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধটির লেখক সাহেবজাদা রিয়াজ নূর।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সরকারি নানা উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এসব উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঠিকই সঙ্কট কাটিয়ে উঠবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মতো আরও অনেক দেশের কাছেই দেশটি হয়ে উঠবে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
কালের আলো/ডিএস/এএএম