নেত্রীকে নিয়ে কটুক্তিকারী ছাত্রলীগের নেতৃত্বে, বিতর্কে সোহাগ-জাকির!

প্রকাশিতঃ 12:07 am | January 29, 2018

বিশেষ প্রতিবেদক | কালের আলো:

বছর চারেক আগে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত স্ট্যাটাসে রীতিমতো কটুক্তি ও আস্ফালন করেছিলেন মতিউর রহমান মতিন। উদ্ধতপূর্ণ এমন আচরণের জন্য যেখানে তাকে তিরস্কার ও শাস্তির মুখে পড়ার কথা সেখানে তাকে আনা হয়েছে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে। পুরস্কৃত করা হয়েছে শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের নব গঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক করে।  এমন অভিযোগ করেছেন দলটির পদবঞ্চিত নেতারা।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইন অনুমোদিত এ কমিটি প্রকাশের পর পরই মতিউর রহমান মতিনের বিতর্কিত সেইসব স্ট্যাটাস ও নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনা ভাইরাল হয়ে পড়েছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।

আর এ ঘটনার মধ্যে দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে রহস্যজনক কারণে মতিনের সেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ রয়েছে। যদিও পুরনো সেই স্ট্যাটাস ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি রাজপথেও তাকে ধিক্কার জানিয়ে সরব হয়ে উঠেছে দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা। অবিলম্বে বিতর্কিত এ কমিটি বাতিলের দাবিতে আগামী সোমবার (২৯ জানুয়ারি) শেরপুরে হরতালের ডাক দিয়েছেন তাঁরা।

তবে অভিযুক্ত মতিউর রহমান মতিন এসব তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করেছেন। একই রকম কথা বলেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইনও।

দৈনিক কালের আলো’র হাতে এসেছে মতিউর রহমান মতিন নামের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করে দেয়া স্ট্যাটাসের বেশ কয়েকটি স্ক্রিনশট। এর একটি ২০১৩ সালের ২৩ নভেম্বরের। মতিউর রহমান মতিন নামের সেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লেখা হয়েছে-‘শেখ হাসিনা উদ্ভট সরকারের উদ্ভট প্রশাসন যে চালাচ্ছে কিছু বিকৃত মস্তিষ্কের জনবিচ্ছিন্ন দলীয় লোক, তা বহি:প্রকাশ হচ্ছে ঢাকার অবিবাহিত বাসিন্দাদের বাড়ি ছাড়ার পুলিশী নির্দেশ।

এর আদেশদাতা ও পরামর্শদাতারা যে আসলে কতটা অপদার্থ ও নির্বুদ্ধি, তা সকল বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার ঊর্ধ্বে। শুধু এটুকুই বলার আছে এসব নির্বুদ্ধিতা ও অপদার্থতা হচ্ছে নির্মম পতনের লক্ষণ, যেমন অনেক লক্ষন শেখ হাসিনা আর তার খুনিয়া অনুসারীরা দীর্ঘদিন যাবৎ দেখিয়ে আসছে।’

একই দিন আরেকটি স্ট্যাটাসে তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মিশন নিয়েও কটুক্তি করেন। এমনকি মহান জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও কটুক্তি করতে ছাড়েননি। এসব স্ট্যাটাসের ঠিক ৫ দিন আগে জঙ্গিবাদ দমন করা আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য ম্লান করতেও প্রপাগান্ডা চালান।

বিএনপি’র পোস্ট শেয়ার করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকার প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে নিয়েও নেতিবাচক নানা প্রচারণা চালান।

বিএনপি-জামায়াতপন্থী এ নেতার হাতে ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দেয়ার ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে আমিনুল ইসলাম বুলবুল নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন- ‘টাকার বিনিময়ে তোরা প্রাণের সংগঠনটাকে বিক্রি করে দিবি? ……শেরপুরে শিবির নেতাকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে দিলি?….’।

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নব গঠিত শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতিন রোববার (২৮ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১০ টায় দৈনিক কালের আলোকে বলেন, ‘ফেসবুকে যেসব স্ক্রিনশট ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। আমার বাবা শহর আ’লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক। শেরপুরের প্রতিটি মানুষের ঘরে যান। আমার ফ্যামিলির ব্যাক গ্রাউন্ড সবাই জানে। এগুলো মিথ্যা, বানোয়াট। পারসোনালী সবার সঙ্গে আপনি যোগাযোগ করতে পারেন। ফটোশপের কারসাজির মাধ্যমে এসব স্ক্রিনশট করা হয়েছে।’ একদমে এসব কথা বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন আলোচিত ও অভিযুক্ত এ নেতা।

চাঞ্চল্যকর এসব অভিযোগের বিষয়ে শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জুনায়েদ নুরানী মনির একই সময়ে মোবাইল ফোনে দৈনিক কালের আলোকে বলেন, ‘আমিও শুনতেছি নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শিবির নেতা। এ নিয়ে আমি নিজেও বিভ্রান্তির মধ্যে আছি। সত্য-মিথ্যা যাচাই করবে সেন্ট্রাল নেতারা। আমাকে প্রশ্ন করলে আমি কোন জবাব দিতে পারবো না।’

এসব ব্যাপারে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দৈনিক কালের আলো। রাত ১১ টায় ফোনালাপে তিনি বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই করেই কমিটি দিয়েছি এবং নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছি। মতিনের বাবা শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক।

যারা কমিটি বঞ্চিত হয়েছে তারাই মূলত ষড়যন্ত্র করছে। এরাই মতিনের নামে ভূয়া আইডি খুলে এসব স্ক্রিনশট তৈরি করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।’

এ বিষয়ে শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম দৈনিক কালের আলোকে বলেন, আগের কমিটির নেতারা নবগঠিত কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন। সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম সম্রাটকে বাদ দিয়ে মতিউর রহমান মতিনকে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

এটার বিরুদ্ধে সম্রাটের লোকজন সোমবার (২৯ জানুয়ারি) হরতাল ডেকেছে। তবে মতিন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি করে কোন স্ট্যাটাস দিয়েছে কীনা এটা আমার জানা নেই।’

 

তবে শেরপুর জেলা ছাত্রলীগের নব গঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতিন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস.এম.জাকির হোসাইনের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে পাল্টা দাবি করেছেন সদ্য বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম সম্রাট।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘দুর্নীতি পরায়ণ হুইপ আতিক সেন্ট্রালে টাকা-পয়সা দিয়ে এক তরফা কমিটি করেছে। মতিন জামায়াত-বিএনপি’র সঙ্গে জড়িত। প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একাধিকবার কটুক্তি করেছে। সে নারী কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে নারী অপহরণ মামলা রয়েছে। হুইপ আতিক ও জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন একটি সিন্ডিকেট মতিনের বাবাকে রাতারাতি আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক করেছে।’

নাজমুল ইসলাম সম্রাট বলেন, ‘একজন মেয়ের সঙ্গে মতিন নেশা করছে এটার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। আমাদের হেয় করতে ও ছাত্রলীগকে ধ্বংস করতেই এমন কমিটি করেছে। তাঁর ফাঁদে পড়ে সেন্ট্রাল এমন কমিটি করেছে। এর প্রতিবাদে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফুঁসে উঠেছে। তাঁরা সোমবার (২৯ জানুয়ারি) হরতালের ডাক দিয়েছে।’

 

আরও পড়ুন:: ‘যৌন হয়রানি’র অভিযোগ ঢাবি আন্দোলনের নেতার বিরুদ্ধেই

 

কালের আলো/এএ