হিমালয় জয়ী বাংলার সাহসিকাদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা শেখ হাসিনা

প্রকাশিতঃ 6:30 pm | September 21, 2022

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

বাংলার সাহসিকাদের মাথায় দক্ষিণ এশিয়ার রানির মুকুট। শত প্রতিকূলতা আর আধার পেরিয়ে ওরা দাঁড়িয়েছে মাথা উঁচু করে। হিমালয়ের কোলে হিমালয়সম সাহস দেখিয়ে অপরাজিত সুবর্ণ জয়ের জয়োধ্বনি। সবার সেরা সাফ চ্যাম্পিয়ন। দেশের ঝিমিয়ে পড়া ফুটবলে নব জাগরণ ঘটিয়ে দৃপ্ত শপথে, দৃঢ় মনোবলে নতুন এক অধ্যায়ের সূত্রপাত। এভারেস্ট জয় করে এখন সতের কোটির বাংলাদেশের অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন সাবিনা, মারিয়া মান্দা ও সানজিদারা। বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে এখন দশরথের উচ্ছ্বাস।

লাল-সবুজের নারী ফুটবলে নতুন ভোর বা বাঁকবদলের নেপথ্যে রয়েছেন ক্রীড়াপ্রেমী, মহিয়সী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফুটবলপ্রেমী প্রধানমন্ত্রীকে ‘নানু’ বলে সম্বোধন করেন মারিয়া মান্দারা। মমতার পরশে প্রধানমন্ত্রী ‘নাতিকে’ জড়িয়ে ধরে ছবিও তুলেন। স্বভাবতই রঙিন ও উৎসবমুখর ওদের ভুবন। ক্রীড়াবান্ধব এই প্রধানমন্ত্রী ওদের সাফল্যে প্রশংসা করেন, বুকে জড়িয়ে আদর করেন। সংবর্ধনার মাধ্যমে উৎসাহিত ও পুরস্কৃত করেন। ফলত বাংলার বাঘিনীদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার নাম শেখ হাসিনাই। কার্যত ওদের স্বর্ণসাফল্য যেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের অনন্য-অনবদ্য এক উদাহরণ।

সংবর্ধনার মাধ্যমে উৎসাহিত ও পুরস্কৃত করেন। ফলত বাংলার বাঘিনীদের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার নাম শেখ হাসিনাই। কার্যত ওদের স্বর্ণসাফল্য যেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের অনন্য-অনবদ্য এক উদাহরণ।

বাঁধার পাহাড় পেরিয়েই এগিয়ে যেতে হয়েছে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যদের। অথচ গৌরবময় এই কীর্তিগাঁথা বন্ধের হীন প্রয়াসের ফন্দিফিকির এঁটেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সেই ২০০৪ সালের গোড়ার দিকেই। নারীর অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধক এই অপশক্তি দমিয়ে দিতে চেয়েছিল ওদের দিগ্বিজয়ী শক্তিকে। রক্ষণশীল সমাজের কটুকথা, হুমকি আর মৌলবাদীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার হাত ধরে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এখন এতোদূর দৃঢ় শক্ত অবস্থানে এসেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল।

প্রধানমন্ত্রী বরাবরই নারীদের ফুটবলে উৎসাহিত করেছেন। কামড়ে ধরা সমাজের খোলসে বন্দী, শৃঙ্খলে আবদ্ধ ধারণা চুরমার করে নারী ফুটবলের জাগরণে ‘প্রাণভোমরা’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছাশক্তি, সুদক্ষ কর্মপরিকল্পনা আর পৃষ্ঠপোষকতায় কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদতার অচলায়তন ভেঙে নারী ফুটবল দলের অদম্য মেয়েরা হিমালয়ের দেশের ‘চূড়ায়’ উঠেছে।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সাফল্য ও সম্ভাবনার অন্তর্নিহিত উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। ২০১১ সালে শুরু হওয়া এই টুর্নামেন্টের মধ্যে দিয়েই দেশের ফুটবলে ফুটে নতুন ফুল। জেগে উঠে আশা। ওই সময় ৬৪ হাজার ১৯৬টি প্রাথমিক স্কুলের প্রায় ১০ লাখ ৯১ হাজার ৩৩২ জন ছাত্রীকে নিয়ে এই টুর্নামেন্ট যাত্রা করে। এরই গতিধারায় নারী ফুটবলে নতুন দিগন্তের সূচনাপথের উন্মোচন ঘটে।

বাংলাদেশের নারী ফুটবলে বিজয়-বৈজয়ন্তী’র কথা উঠলে প্রথমেই উচ্চারিত হয় ময়মনসিংহের সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা ধোবাউড়ার নাম। মারিয়া-সানজিদাদের হাত ধরেই সেই সময়ে ইতিহাসে নতুন এক গল্প শুরু। এখন এই গ্রামের ৮ ফুটবলার খেলছেন জাতীয় দলে। এই একাদশে একজন সূর্যকন্যা মারিয়া মান্দা।

বাংলার ফুটবলের এই তারকা বলছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার মায়ের নামে প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন না করলে আমরা এতোদূর আসতে পারতাম না। ফুটবলে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে আমরা বহুবার প্রধানমন্ত্রীর স্নেহ সান্নিধ্য পেয়েছি। আমরা যতবার জিতি, তিনি আমাদের সংবর্ধনা দেন। আমরা তাকে ‘নানু’ বলে ডাকি। তিনি আমাদের ভীষণ আদর করেন। রাষ্ট্রের প্রধান হলেও প্রধানমন্ত্রী স্নেহপরায়ণ আর মমতাময়ী। ঠিক যেন আমাদের মা-খালা আর নানীর মতো। তিনিই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রেরণার নাম।’

‘আমরা ভালো খেলে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনলে প্রধানমন্ত্রী অনেক খুশি হন। তিনি আমাদের যেভাবে উৎসাহ দেন তাতে আমরা আরো অনুপ্রাণিত হয়েছি।একজন প্রধানমন্ত্রী এতো সহজ-সরল হতে পারেন। বিশ্বাসই হয় না। যতবার তাকে দেখি মুগ্ধ হই’ এমন ভাষ্য ভাষ্য সাফজয়ী আরেক বীরকন্যা সানজিদার।

আনন্দ, সংগ্রাম, বেদনাবিধুর নানা ঘটনাপ্রবাহের পর দেশের সবচেয়ে বেশি মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারী ফুটবলারদের চোখের পানি মুছে দেন মায়াবী হাতে। ঘটনাটি ২০১৯ সালের ৫ এপ্রিলের। ওই বছর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট’র ফাইনাল উপভোগ করেন তিনি। ফাইনাল হেরে অঝোরে কাঁদছিল টেপুগাড়ি বিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেয়েরা। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেও থামছিল না কান্না। কচিকাঁচাদের ট্রফি না পাওয়ার কষ্ট আদর ও ভালোবাসায় ভুলিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন মেয়েদের গলায় পদক পরিয়ে প্রধানমন্ত্রী বুকে টেনে নেন এক একজনকে। আরেক হাত দিয়ে মুছে দেন কান্নারত মেয়েদের চোখের পানি। ওদের দেন সান্ত্বনা; এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ।

শুধু তাই নয়, ফুটবলে মেয়েদের দুর্বার জয়যাত্রা নিশ্চিতের মাধ্যমে অভূতপূর্ব জাগরণ ঘটাতে ক্রীড়ামোদী প্রধানমন্ত্রী এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪, সাফ অনূর্ধ্ব-১৫, এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬, সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ এবং বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ জেতা মেয়েদের গণভবনে ডেকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। আর্থিক প্রণোদনাসহ বিভিন্ন পুরস্কার দিয়েছেন। ১ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া মেয়ের সংখ্যা ৪৫ জন বলে জানিয়েছেন নারী ফুটবল দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। এর বাইরেও মেয়েরা বাফুফে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক পুরস্কার পেয়েছেন।

মেয়েদের কেউ জমি কিনেছেন, কেউ বাড়িতে পাকা ঘর দিয়েছেন, কেউ টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রেখেছেন, কেউ বাজারে দোকান ঘর কিনে ভাড়া দিয়েছেন। এভাবে একেকজন মেয়েরা বদলে দিয়েছেন তাদের পরিবার। একজন স্নেহময়ী ক্রীড়া অন্ত:প্রাণ প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই এসব সম্ভব হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে এরাই বিশ্ব ফুটবলের কেতন উড়াবে লাল-সবুজের।

নারী ফুটবল দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও মেয়েদের বদলে যাওয়ার পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানকেই বড় করে দেখেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক স্কুল পর্যায়ে মেয়েদের খেলা শুরু করেই প্রতিভা বাছাইয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন। এরপর আবার যখন সাফল্য এসেছে তখনই মেয়েদের ডেকে পুরস্কার দিয়েছেন, অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ফোন করে খোঁজ খবর নেন। একবার নেপালে ভূমিকম্পের কারণে যখন আটকা পড়েছিলাম তখন হেলিকপ্টার পাঠিয়ে মেয়েদের ফিরিয়ে এনেছেন। এর চেয়ে বড় অনুপ্রেরণা আর কি হতে পারে। মেয়েদের ফুটবল খেলে পরিবার বদলে দেয়ার পেছনে বড় অবদান বঙ্গবন্ধুকন্যারই।’

ক্রিকেটের জয়গানে ব্যর্থতার চোরা স্রোতে যেন হারিয়ে চুপসে গিয়েছিল ফুটবল। কিন্তু হিমালয় বিজয়িনীরা দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পরে সাফজয়ী নন্দিনীরা আরও একবার প্রমাণ করেছেন ফুটবল বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে। চলতি বছরের রোববার (১৯ জুন) গণভবনে সাফের শিরোপা জয়ী অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলকে সংবর্ধনা ও অর্থ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিযোগিতা করে আমাদের মেয়েরা ওঠে আসছে। ফুটবলে মেয়েরা (বাংলাদেশের) অনেক ভালো। তারা আমাদের সম্মান এনে দিচ্ছে।’

বাংলার ফুটবলের জ্যোতির্ময় নারীরা যখন দেশের মাটিতে বীরের বেশে পা ফেলেছেন তখন তাদের অফুরান প্রেরণার উৎস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রে। সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে ইতোমধ্যেই তিনি আনন্দ নন্দিত অভিনন্দন জানিয়েছেন। বন্দোবস্ত করে দিয়েছেন ট্রফি নিয়ে ছাদখোলা বাসে করে রাজধানী প্রদক্ষিণ করার। এমন দৃশ্য দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিরল! নিরাপত্তা কর্মীদের বেষ্টনি ঘিরে ফুলের বৃষ্টিতে ভিজিয়েছেন। দেশের নারী ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই সাফল্যে স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত ফুটবলপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী। অধরা স্বপ্নপূরণের আনন্দে নি:সন্দেহে বড় এক সংবর্ধনার মাধ্যমেই ওদের গৌরবময় অধ্যায়কে রঙিন করে দিবেন বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্নসারথি বঙ্গবন্ধুকন্যা। 

শুধু তাই নয়, জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রীর যখন নজরে এসেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দলের গোলকিপার রূপনা চাকমার জীর্ণ বাড়ির ছবি তখনই পরিবারটির জন্য একটি বাড়ি তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন। বাফুফে ভবনে পৌঁছার আগেই এই সুসংবাদ পেয়ে যান রূপনা। সত্যিই এমন রাষ্ট্রনায়ক বিশ্বে বিরল। তিনিই ‘বেস্ট অব দ্য বেস্ট’ প্রধানমন্ত্রী।

কালের আলো/এএএমকে