আবারও শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসায় জো বাইডেন, ভেস্তে গেল অপতৎপরতা

প্রকাশিতঃ 10:18 pm | September 23, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতি গোটা বিশ্বেই বিস্ময়। বঙ্গবন্ধু কন্যার দূরদর্শী, বিচক্ষণ ও সাহসী নেতৃত্বের দৌলতেই এক সময়ের ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ এখন ‘উন্নয়নের মডেল’। ছোট অর্থনীতির দেশ আজ এশিয়ার ‘টাইগার ইকনোমি’। অর্থনীতির এই উত্থান যেন ‘ছাই থেকে জন্ম নেওয়া ফিনিক্স’। সামগ্রিক এই উন্নয়ন গতিধারায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যকর নেতৃত্বের ভূমিকার বিষয়ে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

দেশটিতে সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমেরিকার মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় দেওয়া উষ্ণ অভ্যর্থনায় তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসাই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রীকে ‘টেরিফিক লিডার’ বা ‘অসাধারণ নেতা’ বলে অভিহিত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি ও তার পত্নী জিল বাইডেন হাস্যোজ্জ্বল ছবিও তুলেন। দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে তারা আন্তিরকভাবে কথা বলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী জো বাইডেনকে ধন্যবাদ জানান এবং তাকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানান। খবর কূটনীতিক দায়িত্বশীল সূত্রের।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে অংশগ্রহণের জন্য নিউইয়র্ক সফররত রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার স্ত্রী আমেরিকার মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক নৈশভোজ ও সংবর্ধনার আয়োজন করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও তার স্ত্রীর আমন্ত্রণে এই অভ্যর্থনায় যোগ দেন।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭ তম অধিবেশনে যোগ দিয়ে নিউইয়র্কে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি বিভিন্ন রাষ্ট্র এবং সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। আন্তর্জাতিক সঙ্কটময় বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে একাধিক ফোরামে দৃঢ়তার সঙ্গেই কথা বলছেন। বিভিন্ন দেশের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব ইভেন্টে ভাষণদানকালে রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেওয়া রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সম্মানে আয়োজিত সংবর্ধনায় জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে কথা বলেছেন। মতবিনিময় করেছেন। তবে সব ছাপিয়ে আলোচিত হয়েছে এবং নজর কেড়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জো বাইডেনের আন্তরিক সাক্ষাৎ পর্ব। মূলত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘টেরিফিক লিডার’ হিসেবে তাঁর মূল্যায়ন আলাদা গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে।

জানা যায়, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে এক ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করেছিলেন। ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশ্বে উদারতা ও মানবতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরির জন্য অভিনন্দনও জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র অংশীদার হিসেবে কাজ করবে বলেও দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়েছিলেন।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে র‍্যাবের ৬ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞায় দু’দেশের সম্পর্কে টানাপোড়ন তৈরি হয়। বাংলাদেশের মানবাধিকার এবং গুম নিয়েও তারা বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলেন। সামনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে অংশগ্রহণমূলক হয় এই বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়। এই মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসের কাছে গুলশান টেরেস মিলনায়তনে যুক্তরাষ্ট্র নাগরিক কমিটির দেওয়া সংবর্ধনায় দেশটি সফররত বাংলাদেশের পুলিশপ্রধান ড.বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) বলেন, ‘২৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চারটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল একটি গোষ্ঠী। সেই ভাড়াটে ফার্ম টানা তিন বছর চেষ্টা করেছে কথিত স্যাংশনের জন্য।’

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমও চলতি বছরের জানুয়ারিতে একবার বলেছিলেন, ‘লবিস্টের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের আরও ব্যয়ের খোঁজ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তিন দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ের তথ্য পেয়েছি।’

চলতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদ্‌যাপন উপলক্ষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের আমন্ত্রণে দেশটি সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.এ কে আব্দুল মোমেন। ওই সফরকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আশাব্যঞ্জক আলোচনা হয় বলেও জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওই সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তায় বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারত্বের সম্পর্ক আগামী ৫০ বছরে নিঃসন্দেহে আরও শক্তিশালী হবে।’

কূটনীতিতে অভিজ্ঞরা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় ও বন্ধুতাপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের আলোকে সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে জো বাইডেনের গুরুত্বপূর্ণ উচ্চারণ সেই বার্তাই দিচ্ছে যেন। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নেতৃত্বে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাক্ষাৎ যেন না হয় সে লক্ষ্যে নানামুখী অপতৎপরতা শুরু হয়। বাংলাদেশ সম্পর্কে নতুন করে ভুল বুঝাতে একাধিক লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বরাবরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে আগ্রহী ছিলেন। তার সেই আগ্রহের বহি:প্রকাশও ঘটেছে শেখ হাসিনার দুর্দান্ত নেতৃত্ব সম্পর্কে প্রজ্ঞাময় অভিব্যক্তিতে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার কূটনৈতিক মুন্সীয়ানার কাছে আদতে বিএনপি-জামায়াত চক্রের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচার প্রকল্প ভেস্তে গেছে। জো বাইডেন আর শেখ হাসিনার মধ্যকার সাক্ষাত তাদের সব অপতৎপরতাকে নসাৎ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের অদম্য গতিতে এগিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব বিকল্পহীন, বিশ্ব পরিমন্ডলে আরও একবার সেটি প্রমাণিত হয়েছে।

কালের আলো/এমএএএমকে