‘প্রকাশ্যে ভোট দেওয়া বেআইনি, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে’
প্রকাশিতঃ 12:43 pm | December 01, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:
প্রকাশ্যে ভোট দেওয়া বেআইনি উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টদের এ ধরণের কর্মকাণ্ড অ্যালাও না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম।
রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে সরকারি কর্মকর্তাগণের প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণে এসব কথা বলেন তিনি।
মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আপনারা কাউকে ব্যালট পেপার দিয়ে দিলেন, উনি গোপন কক্ষে না গিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দিলেন। আমার ভোট আমি প্রকাশ্যে দিয়েছি অসুবিধা কী? একথা অনেকেই বলতে পারেন। যেহেতু আইনে এটা পারমিট করে না। আপনারাও অ্যালাও করবেন না।
আপনাদের প্রশিক্ষণার্থীকেও (প্রিজাইডিং, সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার) বলবেন- ডোন্ট অ্যালাও ইট। কারণ এ ধরণের কর্মকাণ্ড বেআইনি এবং এ ধরণের কর্মকাণ্ড নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
একজনের ভোট অন্যজন:
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন গণমাধ্যমে আমরা দেখতে পাই যে একজন ভোটার এসে বলতেছে আমার ভোটটা দেওয়া হয়ে গেছে।
যদি নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারা ঠিকমত তার কাজটা করেন তাহলে একজনের ভোট আরেকজনের দেওয়ার কথা নয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আইনে ভোট দেওয়া হয়ে গেলেও কিন্তু ভোট দেওয়ার বিধান আছে, যদি আপনি সেটিসফায়েড হন।
কেউ যদি সত্যিকার অর্থে ভোটার, আর তার ভোটটা অন্য কেউ দিয়ে গেছে; তাহলে জাস্ট অ্যালাও হিম উইদাউট এনি কোয়েশ্চেন।
আপনারা যদি আইনটাকে ফলো করেন তাহলে আর নির্বাচনকে কেউ প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারবে না।
নির্বাচন মানেই একদিন:
তিনি বলেন, আসলে দেখবেন নির্বাচন মানেই কিন্তু একদিন। সিডিউলে ৪৬-৪৫ দিন বা যতদিনই থাকুক না কেনো নির্বাচন মানে একদিন, মানে সেই নির্বাচনের দিন।
নির্বাচনের দিন কী হলো- এটা যদি ঠিক না হয়, যদি আইনানুগ না হয় তাহলে আমরা সবাই প্রশ্নবিদ্ধ হবো। কারণ ওই নির্বাচনের দিনই ভোটার আপনাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবেন।
শঙ্কা …
মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেকটা পত্রিকা খুললে একটাই কথা, সবার ভিতরেই শঙ্কা ভোট দিতে পারবেন কি না। ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবেন কিনা।
এই জিনিসটুকু আপনাদের ওপর নির্ভর করে। কারণ আপনি যদি ব্যালটটাকে ঠিকমত সংরক্ষণ করেন, কেন্দ্রটাকে ঠিকমত তৈরি করেন, আপনার দায়িত্ব এবং আপনি যাদের ট্রেইনিং দেবেন তারা যদি সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন তাহলে শঙ্কা থাকে না।
কারণ আপনার কাছে ছবিসহ ভোটার তালিকা আছে। ঠিক মতো যদি আইডিন্টেফিকেশন হয়। যদি আপনারা কাউকে জোর করে বের করে না দিয়ে এজেন্টদের ঠিকমত রাখেন তাহলে কোনোক্রমেই একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবে না। প্রত্যেকের ভোটাধিকার আপনার কেন্দ্রের ভেতর নিশ্চিত করতে হবে।
আপনার দায়িত্ব কিন্তু এটুকুই। ঠিকমতো তাকে আইনডেন্টিফিকেশন করা, আইন অনুসরণ করে ব্যালট পেপার প্রদান করা এবং ব্যালট প্রদান করার পরে তাকে দিয়ে গোপন কক্ষে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং উনি যেনো আর দ্বিতীয়বার ভোট দিতে আসতে না পারেন সেজন্য আঙুলে কালো কালী দিয়ে চিহ্নিত করা।
কোনো ভোটারকে চিহ্নিত না করা পর্যন্ত তাকে ভোট দিতে ব্যালট পেপার দেবেন না। এগুলো যদি আপনারা করতে পারেন তাহলে কোনোভাবেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।
চৌকিদার থেকে সেনা বাহিনীর কেউ বাদ থাকবে না:
তিনি বলেন, ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে পারবে কি না, কেন্দ্রে গেলে তো ভোট দেবো এ রকমও প্রশ্ন আসতেছে। এটা আপনাদের বিষয় না। এজন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আছে। দরকার হলে আমরা আরো ব্যবস্থা নেবো যাতে করে ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে আসতে পারেন।
তারপরও যদি কোনো এক্সিডেন্ট হয়, তাহলে আপনাদেরকে কথা দিতেছি আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো।
আপনারা আপনাদের নিরাপত্তার জন্য চিন্তা করবেন না। একেবারে চৌকিদার থেকে সেনা বাহিনীর কেউ বাদ থাকবে না। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সবাই যুক্ত থাকবেন। আপনাদের জীবন, মালামাল নিয়ে আপনাদের দু:শ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।
শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আপনারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখবেন। আপনার অনুমতি ছাড়া তারা যেন কোথাও যেতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।
তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে নির্বাচন করেন আপনারা। নির্বাচনের প্লানিংটা করে নির্বাচন কমিশন ও সচিবালয়। আমাদের মান সম্মান ইজ্জত আপনাদের হাতে ন্যস্ত। নির্বাচনের সব দায়িত্ব আপনারা পালন করবেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও ব্যালটের অপব্যবহার করতে পারে:
নির্বাচনের মালামাল গ্রহণের সময় সবকিছু আপনারা বুঝে নিবেন। এটা কিন্তু আইনে বলা নাই। তারপরও মালামাল, ব্যালট সবকিছু দেখে গ্রহণ করবেন। এমনও তো হতে পারে সেখানে ব্যালটের পরিবর্তে সাদা কাগজ চলে আসল। সেজন্য সবকিছু আপনারা বুঝে নিবেন। এগুলো আপনাদের দায়িত্বে থাকবে। আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা কারও কাছে এগুলো রেখে কোথাও যাবেন না। তারাও ব্যালটের অপব্যবহার করতে পারে, যদিও তারা তা করবেন না। তারপরও আপনি সার্বক্ষণিক এগুলোর সাথে থাকবেন। কারণ এগুলো নেওয়ার সময় আপনি (প্রিজাইডিং অফিসার) স্বাক্ষর করে নেবেন। তাই এর দায় দায়িত্বও আপনার।
কালের আলো/এমএইচএ