শিক্ষামন্ত্রীর স্বচ্ছতার আরও এক ‘উদাহরণ’; ইইডির প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে দেলোয়ার হোসেন

প্রকাশিতঃ 10:00 pm | October 15, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

জ্যেষ্ঠতায় সবার চেয়ে এগিয়ে ছিলেন দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মাপকাঠিতেও সেরা। অনেক আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল-শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসবেন তিনি। কিন্তু শক্ত সিন্ডিকেট বরাবরই প্রতিবন্ধকতা তৈরির ‘অপচেষ্টা’ চালিয়েছে। ঘটেছে নজিরবিহীন ‘তথ্য সন্ত্রাস’র ঘটনাও।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে আগ্রহী বাড়বাড়ন্ত মহলটিও নানা কায়দা-কানুনে তাকে হেনস্থা করার অপচেষ্টা চালিয়েছে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে। কিন্তু জ্যেষ্ঠতা যেন লঙ্ঘন না হয় সেই বিষয়ে রীতিমতো অনড় ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি এমপি। পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগেও ঘোর আপত্তি ছিল তাঁর। প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগে অতীতের চিরায়ত ‘ওপেন সিক্রেট’ টাকার খেলা বন্ধ করেছেন নিজ মেয়াদে। যারপরেনাই কোন রকম সিন্ডিকেটের দৌড়ঝাঁপ কাজে আসেনি, পর্যদুস্ত হতে হয়েছে।

মন্ত্রীর স্বচ্ছতার আরও একটি ‘উদাহরণ’ তৈরি হয়েছে দেশের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল, কলেজের শিক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন, অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং শিক্ষা খাতের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) প্রধান প্রকৌশলী নিয়োগেও।

কাক্সিক্ষত যোগ্যতার মানদন্ডে ‘উত্তীর্ণ’ হয়ে শেষতক বিজয়ের হাসি হেসেছেন চট্টগ্রামের দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারই। বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এক প্রজ্ঞাপনে তাকেই প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

জানা যায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শাহ নইমুল কাদের শনিবার (১৫ অক্টোবর) স্বাভাবিক নিয়মে অবসরে গেছেন। তবে তিনি পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে নানামুখী অপতৎপরতা শুরু করেছিলেন। দেলোয়ার হোসেন মজুমদার তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন বিষয়টি ঠাহর করতে পেরে গত কয়েক বছর যাবতই তাকে নিয়ে নানামুখী অপপ্রচারে মনোনিবেশ করেন তিনি, এমন কথা কান পাতলেই শোনা যায়।

তিনি দেলোয়ার হোসেনের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অভিষিক্ত হওয়া ঠেকাতে তাকে ‘টার্গেট’ করেন। এমনকি ১১ বছর আগের একটি ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে তাকে ঘৃণ্য কায়দায় হেনস্থা করতে উঠেপড়ে লেগে যান নইমুল কাদের। ভুয়া ঘটনায় শুধুমাত্র তাঁর ইমেজ ক্ষুন্ন করতেই শেষ পর্যন্ত তদন্ত কমিটিও করেন।

আদতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার মাধ্যমে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিজের মেয়াদ বাড়াতে বিভিন্নভাবে ফন্দি ফিঁকিরও এঁটেছিলেন তিনি। কিন্তু সত্যের শক্তিতে দুর্বার থেকেছেন চট্টগ্রামের দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার।

সূত্র জানায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিচালনায় শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি মন্ত্রণালয়ের ভেতরে-বাইরে সব সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়েছেন। তিনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পদটিকে একটি নিয়মের মধ্যে আনতে চেয়েছেন। জ্যেষ্ঠতা মেনেই তিনি এই পদে এবারও নিয়োগ দিয়েছেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যেখানে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনই নিয়ম সেখানে একটি ব্যতিক্রম নজির স্থাপন করেছেন শিক্ষামন্ত্রী।

এতে করে জ্যেষ্ঠ হিসেবেই প্রধান প্রকৌশলীর আসন অলঙ্কৃত করতে সক্ষম হয়েছেন দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। রোববার (১৬ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।

শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নতুন প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার। চাঁদপুরে জন্ম নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধার এই সন্তান ছাত্রজীবনে সম্পৃক্ত ছিলেন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে।

নীতির প্রশ্নে কখনও আপস করেননি। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে অনন্য এক উচ্চতায় নিতে তিনি নিজের রোডম্যাপও স্থির করেছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নতুন প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার কালের আলোকে বলেন, ‘আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে চাই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আমার ওপর আস্থা রেখে দায়িত্ব দিয়েছে। আমি সেই আস্থার মর্যাদা রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাবো। বর্তমান সরকারের যে মিশন-ভিশন রয়েছে, তা বাস্তবায়নে আমি কাজ করে যাবো।’

‘টিম ওয়ার্ক’ নিয়েই কাজ করতে আগ্রহী নতুন প্রধান প্রকৌশলী। স্বপ্ন দেখেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর অন্যান্য অধিদপ্তরের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ‘নাম্বার ওয়ান’ পজিশনে থাকবে। লক্ষ্য অর্জনে পথ না হারিয়ে উন্নয়নের মহীসোপানে অগ্রগামী হবে। মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে কার্যকর অবদান রাখবে, এমন প্রত্যাশা তাঁর।

কালের আলো/ডিএস/এমএম