সেনাপ্রধানের ব্যস্ত দিনলিপি
প্রকাশিতঃ 10:35 pm | October 15, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মিনিট, ঘন্টা হিসেব করে সময়ের সদ্ব্যবহার করেন। কথা বলেন গভীর আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে। শনিবার (১৫ অক্টোবর) দিনমান ঠিক তেমনিই ব্যস্ত একদিন অতিবাহিত করলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ড. এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এদিন তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
‘৬ষ্ঠ আনোয়ার ইস্পাত-আনোয়ার সিমেন্ট ক্যাপ্টেন কাপ গলফ টুর্নামেন্ট’র সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। পরে ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২৩‘র লোগো উন্মোচন এবং ম্যারাথন ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন। একই দিনে সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক’এ অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনাকালে নিহত ৩ শান্তিরক্ষীর নামাজে জানাজায় অংশ নেন। খবর আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্রের।
আইএসপিআর জানায়, ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি গলফ ক্লাবের গলফ গার্ডেনে ৬ষ্ঠ আনোয়ার ইস্পাত-আনোয়ার সিমেন্ট ক্যাপ্টেন কাপ গল্ফ টুর্নামেন্টে এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) ও আর্মি গলফ ক্লাবের প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল মো. মোশফেকুর রহমান, আনোয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান মানোয়ার হোসেন, টূর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) শাহ-নুর জিলানী, প্রধান নির্বাহী অফিসার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) সৈয়দ আহমেদ আলী, স্পোর্টস এন্ড ফ্যাসিলিটিস’র পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. গোলাম মঞ্জুরসহ অন্যান্যরা।

গত বুধবার (১২ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া আর্মি গলফ ক্লাবে চার দিনব্যাপী এই টুর্নামেন্টে অ্যামেচার গলফারদের নিয়ে আয়োজিত পাঁচটি ক্যাটাগরীতে টূর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভাগগুলো হলো – সিনিয়র, জুনিয়র, রেগুলার, লেডিস ও ভ্যাটারান। টুর্নামেন্টে ৭১৬ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করেন। তন্মধ্যে বেশ কয়েকজন বিদেশী খেলোয়াড়ও রয়েছেন।
এই টূর্নামেন্টে লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম মর্তুজা ওভার অল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। এছাড়াও ভ্যাটারান উইনার হলেন হায়াতুজ্জামান খান, সিনিয়র উইনার কর্নেল একেএম নজরুল ইসলাম (অব:), লেডি উইনার মিসেস কুলসুম ফরিদ এবং জুনিয়র উইনার হয়েছেন মাষ্টার এস এম সামির হোসেন। প্রত্যেককেই পুরস্কার প্রদান করা হয়।
আইএসপিআর জানায়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ ঢাকা সেনানিবাসস্থ আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২৩‘ এর লোগো উন্মোচন এবং ম্যারাথন ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে আছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সিজিএস ও চেয়ারম্যান আয়োজক কমিটি লেফটেন্যান্ট জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন-২০২৩ এর আয়োজন সম্পর্কে মিডিয়া ব্রিফিং প্রদান করেন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
এদিকে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনাকালে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে নিহত তিন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীর নামাজে জানাজা এদিন ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি এভিয়েশন হ্যাঙ্গারে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদসহ ঢাকা সেনানিবাসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সকল পদবীর সদস্যরা অংশ নেন। এ সময় সেনাবাহিনী প্রধান নিহত শান্তিরক্ষীদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরবর্তীতে সেনাসদস্যদের মরদেহ আর্মি এভিয়েশনের হেলিকপ্টারযোগে নিজ নিজ গ্রামে (ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারী) পাঠানো হয় এবং সেখানে সম্পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় নিহতদের দাফন সম্পন্ন হয়।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার (০৩ অক্টোবর) সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ০৪ অক্টোবর ০১ টা ৩৫ মিনিটে) জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন’র আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনাকালে বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণে পতিত হলে তিন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী নিহত হন।
প্রয়াত সেনাসদস্যদের মরদেহ গত ১৪ অক্টোবর বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌঁছায়। এই পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ১২৯ জন বাংলাদেশের সেনাসদস্য প্রাণ বিসর্জন দিয়ে স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও বাংলাদেশ শান্তিরক্ষীরা আফ্রিকার ৮টি দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ বজায় রেখে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে চলেছে।

কালের আলো/এমএএএমকে