সক্ষমতায় আরও এগিয়ে ফায়ার সার্ভিস, নব সংযোজন বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার টিটিএল গাড়ি
প্রকাশিতঃ 5:22 pm | October 16, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
উন্নত বিশ্বের আদলে গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অধিদপ্তরটির আধুনিকায়নে মহাকর্মযজ্ঞের সূচনা করেছেন। প্রতিনিয়ত সময়োপযোগী ও উন্নততর করে গড়ে তোলা হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসকে। এরই মধ্যে অধিদপ্তরের যান্ত্রিক বহরে যুক্ত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধিক উচ্চতার লেডার সম্বলিত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে দু’টি টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) নামক গাড়ি। ফলে এখন থেকে অনায়েসে ৬৮ মিটার উচ্চতায় যেকোন বহুতল ভবনের ২৪ তলা পর্যন্ত অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজ করা সম্ভব হবে।
রোববার (১৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে অত্যাধুনিক, শক্তিশালী ও উন্নত কর্মক্ষমতা সম্পন্ন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের অগ্রযাত্রার পালকে নতুন সংযোজন দুটি টার্ন টেবল লেডার গাড়িটির উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এতে করে অধিদপ্তরের সক্ষমতা আরও একধাপ এগিয়ে গেলো। এটি সব সদস্যদের উৎসাহ ও মনোবলও বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে।
মন্ত্রীর উপস্থিতিতে সূচনা বক্তব্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ভালোবাসার কোটি কোটি প্রদীপের দীপ্তশিখা আর সাধারণ মানুষের আস্থার প্রতীতিতে রূপ নিয়েছে অধিদপ্তরটি। নিজের পেশাগত সততা ও দক্ষতার আলোয় ফায়ার সার্ভিসকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই ডিজি। উচ্ছ্বসিত কন্ঠেই তিনি বলেন, ‘৬৮ মিটার উচ্চতার টিটিএল গাড়িই হলো অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে অধিক উচ্চতার গাড়ি। আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধার এই টিটিএল গাড়ি বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ ও উদ্ধারকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।’
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে এসে পৌঁছালে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এ সময় অনুষ্ঠানের দু’ বিশেষ অতিথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন এবং সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এরপর মন্ত্রীকে চৌকস অগ্নিসেনাদের একটি দল সশ্রদ্ধ অভিবাদন জ্ঞাপন করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনায় নিহত ১৩ ফায়ারফাইটারকে ‘অগ্নি বীর’ খেতাবে ভূষিত করে বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মানুষের জীবন নিরাপদ রাখার জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় ১৩ জন ফায়ারফাইটারের শহিদ হওয়ার মাধ্যমে তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে।’ পরে তিনি টিটিএল গাড়ির পরিচালনা কার্যক্রম অবলোকন করেন।
সরকারের যুগান্তকারী নানা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ফায়ার সার্ভিস আজ যেকোনো দুর্যোগে প্রথম সাড়াদানকারী পারদর্শী বাহিনী এবং সক্ষমতার উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি ফিরে যান প্রায় ১৩ বছরের আগের ইতিহাসে। স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘২০০৯ সালে যেখানে ফায়ার সার্ভিসের বহুতল ভবনে কাজ করার মতো মাত্র একটি পুরনো গাড়ি ছিল, যা দিয়ে ৮ থেকে ১০ তলার ওপরে কাজ করা যেতো না।
বর্তমান সরকারের সময়ে আমরা এই প্রতিষ্ঠানের জন্য বহুতল ভবনে কাজ করার মতো ২৪টি উঁচু মইয়ের গাড়ি এনেছি। আজ ৬৮ মিটার উচ্চতার লেডার সম্বলিত গাড়ি ফায়ার সার্ভিসের বহরে যুক্ত হওয়ায় তাদের অপারেশনাল কাজের সক্ষমতা ২৪ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হলো।’
ফায়ার সার্ভিসের জনবল বৃদ্ধিতেও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে টানা দু’মেয়াদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব দেওয়া এই মন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে এই প্রতিষ্ঠানের মোট জনবল ছিল মাত্র ৬ হাজারের সামান্য বেশি। বর্তমানে এই জনবল হয়েছে ১৪ হাজারের অধিক। ফায়ার স্টেশন নির্মাণের চলমান প্রকল্প শেষে এই সংখ্যা হবে প্রায় ১৬ হাজার। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানের জনবল ৩১ হাজার করার জন্য অর্গানোগ্রাম পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
সীমান্তে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো অস্থিতিশীলতার পাঁয়তারা চালাচ্ছে
এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পার্বত্য অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টসহ (ইউপিডিএফ) আরও কয়েকটি বাহিনীর কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, তারা সবসময় আমাদের সীমান্ত এলাকায় একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির প্রয়াস পাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে আমাদের সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দেশের সীমানা এলাকায় থাকতে দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেকোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী কিংবা যে কোনও জঙ্গি সংগঠন; যেগুলো বাংলাদেশের কোনও জায়গায় অবস্থান করছে, আমরা তাদের সরিয়ে দিচ্ছি।
বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলোর কোনও যোগসূত্র রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কানেকশন পাই, তাহলে সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা ধারণা করছি যে, জঙ্গিরা ওখানে গিয়েছিল। তারা ওই কেএনএফ-এর ক্যাম্পের পাশাপাশি তারা অবস্থান নিয়েছিল।
তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনায় আমরা কয়েকজনকে শনাক্ত করেছি। তাদের আইনের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পরবর্তী সময়ে আপনাদের এসব বিষয় জানানো হবে।
কালের আলো/ডিএস/এমএম