চিরসবুজ অন্তরে শেখ রাসেল

প্রকাশিতঃ 10:31 am | October 18, 2022

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

১০ বছর ৯ মাস ২৮ দিনের জীবন তাঁর। কুঁড়িতেই শেষ হয়ে যাওয়া একটি ফুল। সেই ফুল ফুটতে পারেনি। শেখ রাসেল বাঁচতে পারেনি। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের অন্ধকার রাতে ঘাতকের নির্মম বুলেট ছাড় দেয়নি তাকে। নির্মমভাবে চিরবিদায় নিতে হয়েছে। আজ তাঁর ৫৯ তম জন্মদিন। গত বছর থেকে দিনটি জাতীয়ভাবে ‘শেখ রাসেল দিবস’ হিসেবে পালিত হচ্ছে। বেঁচে থাকলে আজ ৫৯ বছর বয়সী পরিণত মানুষ হতেন। হয়তো হতেন বাঙালি জাতির চির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির উজ্জ্বল উত্তরাধিকার।

আরও পড়ুন: বেঁচে থাকলে শেখ রাসেলের বয়স আজ হতো ৫৯ বছর

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোক মশাল হয়ে জ্বলজ্বল করতেন সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশে। ‘রাসেল বেঁচে থাকলে আজ কী করত- এই ভাবনাটা প্রায়ই ভাবায় স্নেহময়ী বড় বোন শেখ হাসিনাকে। তাঁর ভাষ্যে-‘রাসেল যদি বেঁচে থাকত, তাহলে হয়তো একজন মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শ নেতা আজ আমরা পেতাম, যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারত।’

বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র, শিশু থেকে সদ্য-কৈশোরে উত্তীর্ণ শেখ রাসেলকে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাঁর নাম ও স্মৃতি মুছে ফেলতে চেয়েছিল ঘাতকচক্র। কিন্তু শেখ রাসেল জেগে আছেন বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু-কিশোরের চিরসবুজ অন্তরে। দেশের প্রতিটি শিশুর মাঝেই নিজের ছোট ভাই শেখ রাসেলকে খুঁজে ফিরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দু:খ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে স্মরণ করেন শিশু রাসেলকে।

কোমলমতি শিশু রাসেলসহ পুরো পরিবারকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের এক নির্মম, জঘন্য ও বিভীষিকাময় রাতে হারিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার কথায়, ‘নামটি শুনলেই প্রথমে যে ছবি সামনে ভেসে আসে তা হলো- হাস্যোজ্জ্বল ও প্রাণচঞ্চল এক ছোট্ট শিশুর দুরন্ত শৈশব; যে শিশুর চোখ হাসি-আনন্দে ভরপুর। মাথাভর্তি অগোছালো চুলের সুন্দর একটি মুখাবয়ব, যে মুখাবয়ব ভালোবাসা ও মায়ায় মাখা।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিজীবনের অজানা-অদেখা গল্প নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘হাসিনা: অ্যা ডটারস টেল’-এ তিনি তুলে ধরেন ছোট্ট রাসেলকে। মাত্র ১০ বছর ১০ মাসের জীবন তাঁকে যে গভীর ক্ষতবোধ দিয়েছিল তা সবসময়ই ফুটে ওঠে বড় বোনের কণ্ঠে, ‘রাসেল জন্মানোর পর আমরা ভাইবোনেরা খুব খুশি হই। যেন খেলার পুতুল পেলাম হাতে। ও খুব আদরের ছিল আমাদের। একটা ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলতো। ওইটুকু একটা মানুষ, খুব স্ট্রং পার্সোনালিটি।’

২০১৯ সালে রাসেলের জন্মদিনে আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা না বলা অনেক কথা ভাগাভাগি করেন। স্মৃতিচারণে তিনি বলেন, ‘বন্দিখানায় থাকা অবস্থায় যখন যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, সেই যুদ্ধের সময় যখন আক্রমণ হতো, রাসেল পকেটে সবসময় একটু তুলা রাখতো। নিজের কানে দেওয়ার পাশাপাশি ছোট্ট জয়ের কানেও তুলা দিয়ে দিতো, যেন ওই আওয়াজে জয়ের কোনও ক্ষতি না হয়। জয়ের প্রতি রাসেল খুব খেয়াল রাখতো। সবসময়ই তার সেদিকে বিশেষ নজর ছিল।’
সেনা কর্মকর্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল শেখ রাসেলের। শেখ হাসিনা প্রায় সময়েই স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘শেখ রাসেলের জীবনে একটা শখ ছিল, সে বড় হলে সেনাবাহিনীর সদস্য হবে। যখন গ্রামে বেড়াতে যেতাম- গ্রামের ছোট ছোট শিশুদের একত্রিত করে রাসেল তাদের দিয়ে প্যারেড করাত। শুধু প্যারেড করিয়ে খালি হাতে ফেরাত না। চাচা শেখ আবু নাসের তাকে যে টাকা দিতেন, প্যারেড করার পর সবাইকে সেই টাকা দিয়ে দিত। তাদের জন্য কাপড়চোপড়ও কিনে দিত। মা সবসময় বাচ্চাদের জন্য কাপড়চোপড় কিনে টুঙ্গিপাড়া নিয়ে যেতেন। রাসেলের ইচ্ছামতো প্রতিটি বাচ্চাকে এই কাপড়চোপড় দেওয়া হতো। সবাইকে শার্ট কিনে দিত, প্যান্ট কিনে দিত। (রাসেলের আবদার রক্ষার জন্য) মা সবসময় কিছু কাপড় টুঙ্গিপাড়ায় রেখে দিতেন আলমারিতে।’

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিরা শেখ রাসেলকে হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। তাদের সেই অপচেষ্টা শতভাগ ব্যর্থ হয়েছে। শহীদ শেখ রাসেল আজ বাংলাদেশের শিশু-কিশোর, তরুণ ও শুভবুদ্ধি বোধসম্পন্ন মানুষের কাছে ভালোবাসার নাম। অবহেলিত, পশ্চাৎপদ ও অধিকারবঞ্চিত শিশুদের আলোকিত জীবন গড়ার প্রতীক হয়ে বাংলাদেশ নামক জনপদে শেখ রাসেল আজ এক মানবিক সত্তায় পরিণত হয়েছে। শেখ রাসেলের মর্মান্তিক বিয়োগ-বেদনাকে হৃদয়ে ধারণ করে বাংলার প্রতিটি শিশু-কিশোর ও তরুণের মুখে হাসি ফোটাতে মানবিক চেতনাসম্পন্ন সব মানুষ আজ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

কালের আলো/এমএএএমকে