খোলনলচে পাল্টে ‘স্বস্তি’ দিচ্ছে টিসিবি
প্রকাশিতঃ 6:50 pm | October 22, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
ন্যায্যমূল্যের পণ্যবাহী খোলা ট্রাকের পেছনে ছুটে চলা দৃশ্যের যবনিকাপাত ঘটেছে। পরিবর্তন এসেছে পণ্য বিক্রি ব্যবস্থায়। ট্রাকের পরিবর্তে ডিলারদের নির্দিষ্ট দোকান থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে মিলছে পণ্য। বিক্রিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে চালু হয়েছে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ প্রথা। সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেওয়া ‘ফ্যামিলি কার্ডধারী’ মাসে একবার পাচ্ছেন ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য।
এতে করে গজিয়ে উঠা সংঘবদ্ধ চক্রও নির্মূল হয়েছে। তবে এই কার্ড তৈরিতে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা, যোগ্যরাই কার্ড পেয়েছেন কিনা এসব বিষয়ও যাচাই করে দেখা হচ্ছে। জেলায় জেলায় যাচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪০ কর্মকর্তা। অনিয়ম মিললে রেহাই নেই। নেওয়া হচ্ছে আইনগত ব্যবস্থা।
মূলত খোলনলচে পাল্টে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে বাঙালি জাতির চির আরাধ্য পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া ৫১ বছর বয়সী এই প্রতিষ্ঠানটি। গত কয়েক বছর যাবত যেকোন দুর্যোগে-সঙ্কটে টিসিবি বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর ‘অ্যান্টিবায়োটিক’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার ছুটন্ত সময়ে হয়ে উঠেছে দরিদ্র আর নিম্নবিত্ত মানুষের প্রধান ও একমাত্র ভরসার নাম।
চলতি মাসেও সহনীয় দামে প্রায় ১ কোটি উপকারভোগী কার্ডধারীর হাতে তুলে দিচ্ছে ৫৫ টাকায় এক কেজি চিনি, ৬৫ টাকা কেজিতে ২ কেজি মসুর ডাল, ১১০ টাকা করে ২ লিটার সয়াবিন তেল। সংযোজন হয়েছে পেঁয়াজও।
খুচরা বাজারের চেয়েও ৪০ শতাংশ কম দামে এসব পণ্য পাচ্ছেন ক্রেতারা। টিসিবির এসব পণ্যে স্বস্তির শ্বাস ফেলছেন, জীবন যুদ্ধে টিকে রয়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষজন। শুধু তাই নয়, অসহায়দের জন্য টিসিবির নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি অসাধু ব্যবসায়ীদের অশুভ প্রতিযোগিতার লাগাম টানতেও সক্ষম হয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রেও রাখছে বড় রকমের অবদান।

টিসিবির মহাকর্মযজ্ঞ নিয়ে ‘ইতিবাচক’ মনোভাবই পোষণ করছেন বিশ্লেষকরা। টিসিবির ধারাবাহিক উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তারা বলছেন, টিসিবি সাম্প্রতিক সময়ে বাজার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাজার অস্থিরতার টুঁটি চেপে ধরেছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বড় পরিসরে টিসিবির কার্যক্রম সম্প্রসারণ করলে, সংস্থাটিকে জনবল বাড়িয়ে আরও শক্তপোক্ত করা সম্ভব হলে বাজার সিন্ডিকেট আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।
সূত্র জানায়, সরকার টিসিবির পণ্য বিক্রি বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার করেছে। ফলে নির্দিষ্ট কোন পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অপতৎপরতা এখন বন্ধ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মহতি উদ্যোগে ও বাণিজ্যমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে আগেভাগেই সতর্ক পথ অবলম্বন করে যৌক্তিক মূল্যে ফ্যামিলি কার্ডধারীদের পণ্যের বন্দোবস্ত করে নিজেদের অপরিহার্য করে তুলেছে টিসিবি।
পুরো দৃশ্যপটেই সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান। মাত্র দু’শতাধিক জনবল নিয়েই সরকারের এই মিশন বাস্তবায়নে সম্মুখ নেতৃত্বে রয়েছেন এই সেনা কর্মকর্তা।
টিসিবিকে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্তদের আস্থার প্রতীতিতে নামাঙ্কিত করতে তিনি পুরো কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর অভিভাবকত্বে পরিচালিত মন্ত্রণালয়ের প্রতি। নিজের সংস্থার বিশাল কর্মযজ্ঞকে ‘টিম ওয়ার্ক’ হিসেবে দেখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন টিসিবি প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান।

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘কোন পণ্যে ফায়দা হাসিলের অপচেষ্টা রুখে দিতে সক্ষম হয়েছে টিসিবি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় টিসিবিকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকারের কার্যকর এসব প্রয়াসের ফলে বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।’
টিসিবি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও জোর দিয়েছেন টিসিবি চেয়ারম্যান। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কম সংখ্যক জনবল দিয়ে টিসিবির কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছি। অনুমোদন পেলেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় আঞ্চলিক কার্যালয় ও জনবল বাড়ানো হবে।’
টিসিবিতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে চলা টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, ‘সরকারের মহতি উদ্যোগে অনিয়ম-দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই। কোন ডিলারের অনিয়মের খবর পেলেই তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা নিয়মিত পুরো বিষয়টি মনিটরিং করছি। মনিটরিং কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন হওয়ায় অনিয়ম শুন্যের কোঠায় নেমে এসেছে।’
কালের আলো/ডিএস/এমএম