এখন শুধুই অপেক্ষা

প্রকাশিতঃ 11:39 pm | October 27, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

আর মাত্র দেড়মাস। এরপরই চালু হচ্ছে মেট্রোরেল। স্বপ্ন হবে সত্যি। অবসান ঘটবে অধীর আগ্রহের অপেক্ষার। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ডিসেম্বরেই মেট্রোরেলেই উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পাড়ি দিতে পারবেন রাজধানীবাসী। সময় ঘনিয়ে আসায় চলছে শেষ মুহূর্তের পরীক্ষা নিরীক্ষা। বৈদ্যুতিক ট্রেন যুগের সূচনার একেবারেই দ্বারপ্রান্তে রয়েছে দেশ। ডিসেম্বরেই বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নয়নের দৌড়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে দেশ।

জানা যায়, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের প্রথম অংশের (উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত) বাস্তবায়ন অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৪ দশমিক ২২ শতাংশ। সার্বিকভাবে পুরো মেট্রোরেল লাইন-৬ প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয়েছে ৮৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। সেই সঙ্গে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দ্বিতীয় অংশের বাস্তবায়ন ৮৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম, রেল কোচ এবং ডিপোর যন্ত্রপাতি সংগ্রহের সমন্বিত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। এছাড়া মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত বাস্তব কাজ এখনো শুরু হয়নি। চলছে ভূমি অধিগ্রহণ এবং পরিষেবা যাচাই-বাছাইয়ের কাজ।

দেখা গেছে, আগারগাঁও স্টেশনের নিচে পিয়ারের ডিভাইডারে চলছে স্টিলের বেষ্টনী বসানোর কাজ। সেই সঙ্গে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য গাছ লাগানো হচ্ছে। পাশাপাশি স্টেশনের সিঁড়ি ও অন্যান্য কাজ চলছে। আগারগাঁও থেকে তালতলা পর্যন্ত রাস্তার কাজ প্রায় শেষ।

আরও দেখা যায়, উত্তরা ডিপো এলাকায় ১৭টি লিফটের ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ভায়াডাক্টের ওপর রেললাইন স্থাপন এবং ওভারহেড ক্যাটানারি সিস্টেম চালু করা হয়েছে। সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন করে টেস্টিং কাজ চলছে। এ এলাকার ৯টি স্টেশনের ৩৬টি লিফটের মধ্যে ২৫টির কাজ শেষ হয়েছে। ৫৪টি এস্কেলেটরের মধ্যে ৪৮টি স্থাপন করা হয়েছে। এ অংশে ইতোমধ্যেই অটোমেটিক ট্রেন প্রটেকশন (এটিপি) এবং অটোমেটিং টেন অপারেশন (এটিও) সিস্টেম স্থাপন শেষ হয়েছে।

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বলেন, এখন পর্যন্ত ডিসেম্বরেই মেট্রোরেলের প্রথম অংশ চালু করার প্রস্তুতি রয়েছে। বড় কোনো সমস্যা না হলে এই লক্ষ্য বিচ্যুত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে সমস্যা হলো কোনো কোনো জায়গায় নিচের কাজগুলো শেষ করা যায়নি। সিটি করপোরেশনকে বারবার তাগাদা দিয়েও তারা পাইপ বসানোর কাজ শেষ করছে না।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, মেট্রোরেল প্রকল্পের প্যাকেজভিত্তিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা যায় প্যাকেজ-১ এর আওতায় ডিপো এলাকার ভূমি উন্নয়ন কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া প্যাকেজ-২ এর আওতায় ডিপো এলাকার পূর্ত কাজও শতভাগ শেষ। প্যাকেজ-৩ ও ৪ এর আওতায় নির্মাণ করা হচ্ছে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৯টি স্টেশন। ইতোমধ্যেই ভায়াডাক্টের কাজ শেষ হয়েছে। স্টেশনগুলোর ওপরের ছাদ নির্মাণ শেষ হয়েছে। ৬টি স্টেশনের ঢোকা ও বের হওয়ার সিঁড়ি ও এস্কেলেটরের কাজ শেষ হয়েছে। ৩টি স্টেশনের ঢোকা ও বের হওয়ায় সিঁড়ির কাজ চলছে। ৯টি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ও কনকর্সে লাইট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ৯টি স্টেশনের মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল এবং প্লাম্বিংসহ অন্যান্য কাজ চলছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্যাকেজের অগ্রগতি ৯৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। প্যাকেজ-৫ এর আওতায় আগারগাঁও থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত চলছে ৩ দশমিক ১৯ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৩টি স্টেশনের নির্মাণ কাজ। ইতোমধ্যেই ভায়াডাক্ট ও স্টেশন প্ল্যাটফর্মগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। অন্যান্য সব কাজই শুরু হয়েছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্যাকেজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। এছাড়া উত্তরা ডিপো এলাকায় অবস্থিত মেট্রোরেল এক্সজিবিশন অ্যান্ড ইনফরমেশন সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়েছে ৬ সেপ্টেম্বর।

ডিএমটিসিএল সূত্র আরও জানায়, প্যাকেজ-৬ এর আওতায় কাওরান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯২ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট ও ৪টি স্টেশনের কাজ চলছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্যাকেজের সার্বিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এছাড়া প্যাকেজ-৭ এর আওতায় ইলেকট্রিক অ্যান্ড মেকানিক্যাল সিস্টেম স্থাপনের কাজ চলছে। এ প্যাকেজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। সর্বশেষ প্যাকেজ-৮ এর আওতায় রেল কোচ এবং ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ প্যাকেজের আওতায় ২৪ সেট ট্রেনের মধ্যে ১৭ সেট ট্রেন উত্তরা ডিপোতে এসেছে। ১৮ ও ১৯ নম্বর ট্রেন সেট জাপানের কোবে সমুদ্রবন্দর থেকে ৮ সেপ্টেম্বর জাহাজে করে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওয়ানা করেছে।

কালের আলো/ডিএস/এমএম