সৃষ্টিকর্তা অতীব ক্ষমাশীল

প্রকাশিতঃ 11:04 am | October 28, 2022

মাহমুদ আহমদ :

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের বার বার সতর্ক করছেন, আমরা যেন অসৎ পথ ছেড়ে সহজ সরল পথ অবলম্বন করি। ব্যক্তি জীবনে আমি যে কাজই করি না কেন তা যেন হয় সৎ। বিষয়টিকে এভাবেও বলা যায়, সমাজ ও দেশের বেশির ভাগ মানুষ যখন পাপ, ব্যভিচার, অন্যায় এবং নিজ প্রভুকে ভুলতে বসে তখনই আল্লাহতায়ালা তার পক্ষ থেকে কোপগ্রস্ত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, ‘আর তোমাদের কৃতকর্মের কারণেই তোমাদের ওপর বিপদ নেমে আসে। অথচ তিনি অনেক কিছুই উপেক্ষা করে থাকেন।’ (সুরা আশ শুরা: আয়াত ৩০)

আজাবের এমন একটি দিক নেই, যেদিক দিয়ে আজ পৃথিবী আক্রান্ত হয়নি। পৃথিবীর এমন কোনো দেশ বা এমন কোনো জাতি নেই যার ওপর আজাব না এসেছে, সে যত বড় শক্তিধর রাষ্ট্রই হোক না কেন। সব প্রকার আজাবের প্রবল আক্রমণ মরণাহত মানবের ওপর বারবার এসে আঘাত হানছে। মানব প্রকৃতি বিকৃত হয়েছে। তার কারণে আল্লাহর রুদ্র রূপও প্রকাশিত হচ্ছে। খোদার পক্ষ থেকে শাস্তিস্বরূপ যখন কোনো আজাব আসে তখন তা থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো রাস্তা থাকে না।

আমাদের সব সময় আল্লাহপাকের কাছে পাপসমূহের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে আর তার শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে। তিনি আমাদের না চাইতেও কত কিছুই না দান করছেন। যদি এসবের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করি তাহলে আমরা অকৃতজ্ঞ হিসেবে পরিগণিত হবো।

যেভাবে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন ‘তুমি বল, আল্লাহর হাত থেকে কে তোমাদের রক্ষা করতে পারে যদি তিনি তোমাদের কোনো শাস্তি দিতে চান? অথবা তিনি যদি তোমাদের প্রতি কৃপা করতে চান তবে কে এ থেকে তোমাদের বঞ্চিত করতে পারে? আর তারা নিজেদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন অভিভাবক বা কোন সাহায্যকারীও খুঁজে পাবে না।’ (সুরা আহজাব: আয়াত ১৭)

আরও উল্লেখ রয়েছে ‘এসব জনপদের অধিবাসীরা কি এ ব্যাপারে নিরাপদ হয়েছে যে, রাতের বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় তাদের ওপর আমাদের শাস্তি নেমে আসবে না? আর এসব জনপদের অধিবাসীরা কি এ বিষয়ে নিরাপদ হয়েছে যে, দুপুর বেলায় খেলাধুলায় মত্ত থাকা অবস্থায় তাদের ওপর আমাদের শাস্তি নেমে আসবে না? (সুরা আরাফ: আয়াত ৯৯-১০০)।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার দোষত্রুটি ঢেকে রাখতে চান। তিনি চান তার বান্দারা যেন নিজের ভুল বুঝতে পেরে নিজেকে পবিত্র করার চেষ্টা করে আর আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা চায়। আমাদের চলার পথে কিছু না কিছু ভুলত্রুটি হয়েই থাকে। আমাদের পাপসমূহ ক্ষমার জন্য সর্বদা ইস্তেগফার ও দোয়া করা উচিত। আমরা যদি ইস্তেগফারে রত থাকি তাহলে আল্লাহপাক হয়তো আমাদের এই দোষত্রুটি ক্ষমা করে দেবেন।

এ বিষয়ে একটি হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ‘ইস্তেগফার’র সাথে আঁকড়ে থাকে অর্থাৎ ইস্তেগফারে সর্বদা নিয়োজিত থাকে আল্লাহতায়ালা তাকে সর্ব প্রকার বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধারের পথ সৃষ্টি করে দেন আর প্রত্যেক দুরবস্থা থেকে উত্তরণের রাস্তা বের করে দেন আর তাকে ওই সব রাস্তায় দান করেন, যা সে ধারণাও করতে পারে না’ (সুনান আবি দাউদ, কিতাবুল বিতর, বাব ফিল ইস্তেগফার)।

তাই আমাদেরও উচিত হবে সর্বদা ইস্তেগফারে রত থাকা। আমরা যখন যেই অবস্থায়ই থাকি না কেন, আমরা ইচ্ছা করলেই মহান আল্লাহপাককে স্মরণ করতে পারি। আমাদের কারও জানা নেই যে কখন, কোন অবস্থায় মৃত্যু ঘটবে। তাই আমরা যদি আমাদের দোষ-ত্রুটিকে ক্ষমা করাতে চাই তাহলে ইস্তেগফারের বিকল্প নেই।

তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আমি ভুল করেছি, তারপর আমার মাঝে উপলব্ধি হলো আর আমি এর জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করে ক্ষমা চাইলাম আর তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিলেন। তাই বলে বার বার ভুল করবো আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে থাকবো তা ঠিক নয়। মুমিন একই ভুল বার বার করেন না।

আমাদের এমনভাবে ইস্তেগফার করতে হবে যেন আমার দ্বারা দ্বিতীয়বার এমন ভুল আর কখনও সংঘটিত না হয়। এছাড়া সর্বদা মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আমাদের এই প্রার্থনাই করতে হবে, যেভাবে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘রাব্বানা যালামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফিরলানা ওয়া তারহামনা লানা কুনান্না মিনাল খাসেরিন’ অর্থাৎ ‘হে আমাদের প্রভুপ্রতিপালক! নিশ্চয় আমরা নিজেদের প্রাণের ওপর জুলুম করেছি আর তুমি আমাদের ক্ষমা না করলে এবং আমাদের ওপর কৃপা না করলে আমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ২৩)।

আমরা যেন সর্বদা মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও তওবা করতে থাকি এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আবার আল্লাহপাক ইরশাদ করেন, ‘ওয়া আনেসতাগফিরু রাব্বাকুম সুম্মা তুবু ইলাইহে’ অর্থাৎ ‘তোমরা তোমাদের প্রভুপ্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চাইবে, তার কাছে সবিনয়ে তওবা করবে’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৩)।

তাই আমাদের সব সময় আল্লাহপাকের কাছে আমাদের পাপসমূহের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে আর তার শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে। তিনি আমাদের না চাইতেও কত কিছুই না দান করছেন। আমরা যদি এসবের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করি তাহলে আমরা অকৃতজ্ঞ হিসেবে পরিগণিত হবো।

একটি হাদিসে এসেছে, হজরত নুমান বিন বশির (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবি (সা.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বল্পে তুষ্ট হয় না সে অধিক পেলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। আর যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না সে আল্লাহতায়ালার করুণারাজিরও কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না। আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহরাজির উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ করাটাও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। আর আল্লাহতায়ালার আশিসসমূহের উত্তম স্বীকারোক্তি প্রকাশ না করাটা অকৃতজ্ঞতা’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল)।

অন্য একটি হাদিসে হজরত মায়াজ বিন জিবল (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) তার হাত শক্ত করে ধরলেন আর বললেন, ‘হে মায়াজ! আল্লাহর কসম! সত্যিই আমি তোমাকে ভালোবাসি’ অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, ‘হে মায়াজ! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি প্রত্যেক নামাজের পরে এই দোয়া করতে ভুলে যেও না, ‘আল্লাহুম্মা আইন্নি আ’লা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদিকা’।

অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে শক্তি-সামর্থ্য দান কর যেন আমি তোমার যপগাথা আবৃত্তি করতে পারি, তোমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারি আর তোমারই ইবাদত আরও উত্তম রূপে করতে সক্ষম হই। (সুনান আবি দাউদ)।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে তার ক্ষমার চাদরে আবৃত করে রাখুন, আমিন।

লেখক: গবেষক, ধর্মীয় চিন্তাবিদ।