স্পটলাইটে ‘নির্ভরতার প্রতীক’ গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার
প্রকাশিতঃ 10:45 am | October 31, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
প্রতিবারই সঙ্কটে নিজেকে মেলে ধরেছেন। আলো ছড়িয়েছেন আব্দুর রউফ তালুকদার। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। মহামারি করোনার সময় দেশের ক্রান্তিকালে অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ তৈরিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেন। অর্থ সচিব হিসেবে সাফল্যের দ্যুতিতে উদ্ভাসিত করেন নিজেকে। একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী তার প্রশংসাও করেছেন।
অর্থনৈতিক সঙ্কট, বৈশ্বিক মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময়টিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে মূল স্পটলাইটে রয়েছেন এই নির্ভরতার প্রতীক। অর্থ সচিবের পদে যখন ছিলেন তখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে একাই অর্থ মন্ত্রণালয় সামলেছেন। এখন একইভাবে গভর্নর হিসেবেও সঙ্কটে পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নিজের প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই বলেছিলেন, ‘কোনো চাপ বা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পিছু হটবেন না। আইন মেনেই চলবে বাংলাদেশ ব্যাংক।’
বিশ্ব মন্দার প্রভাবে টালমাটাল বাংলাদেশের অর্থনীতি। তাই মূল্যস্ফীতির চাপ কমিয়ে স্থিতিশীল অর্থনীতির মিশনে কাজ করে চলেছেন গভর্নর। সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক একসঙ্গে কাজ করছে। এক্সচেঞ্জ রেটকে নিয়ন্ত্রণে আনতে চান, বিনিয়োগ বাড়াতে চান।
আব্দুর রউফ তালুকদার ফোকাস প্রিয় নন। তিনি অনেকটা নিভৃতে-নীরবে অর্থসচিবের কাজ করছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি সবকিছু থেকে অনেকটা দূরে থাকেন এবং শুধুমাত্র নিজেকে কাজের মধ্যেই নিয়োজিত রাখতে চান। ২০২০ সালে যখন বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ শুরু হলো তখনই প্রথম আলোচনায় আসেন আব্দুর রউফ তালুকদার।
এই সময়ে বাংলাদেশ সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে এবং শিল্প কারখানা ক্ষুদ্র-মাঝারি এবং একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণ যেন লকডাউন এবং করোনার কারণে সঙ্কটে না পড়ে, তার জন্য একটি পরিপূর্ণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এই প্যাকেজ ঘোষণার পেছনে আব্দুর রউফ তালুকদারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এখানেই তিনি প্রধানমন্ত্রী আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত এবং ঘনিষ্ঠ হন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এসময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে প্যাকেজ প্রণয়নের ক্ষেত্রে আব্দুর রউফ তালুকদার নিজের দক্ষতা এবং যোগ্যতা প্রমাণ করেন। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অর্থসচিব থাকাবস্থায় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে তিনি আবির্ভূত হন।
২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান আ হ ম মোস্তফা কামাল। কিন্তু ক্রমশ মোস্তফা কামাল প্রমাণ করতে থাকেন যে, অর্থমন্ত্রী হিসেবে যেরকম পরিশ্রম এবং সার্বক্ষণিক তৎপর থাকা দরকার সেটি তিনি থাকতে পারবেন না। আস্তে আস্তে তিনি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন এবং বিভিন্ন কাজকর্মে তার শ্লথ গতির কারণে প্রধানমন্ত্রীও তার ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দেন। এসময় আব্দুর রউফ তালুকদার আসেন আরও সামনে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে শলা-পরামর্শ করা, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শগুলোকে বাস্তবায়ন করার কারণে তিনি প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত বিশ্বস্ত একজন সরকারি কর্মকর্তায় পরিণত হন। এরপর করোনা পরিস্থিতি এবং সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট হয় তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আব্দুর রউফ তালুকদারকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব দেন।
সূত্র জানায়, আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংককে পুনরুজ্জীবিত করা, অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রে দিনান্ত পরিশ্রম করে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সকলের কাছে প্রশংসিত হন। এমনকি সমালোচকরাও তার সততা, নিষ্ঠা এবং কর্তব্যপরায়ণতার প্রশংসা করতে বাধ্য হন। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তাকেই নেতা নির্বাচন করেন। তিনি ওয়াশিংটন সফর করেন। সাম্প্রতিক সময়ে আইএমএফের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকেও পুরো কার্যক্রমটির নেতৃত্ব দিয়েছেন আব্দুর রউফ তালুকদার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যোগ্য ব্যক্তি চিনতে ভুল করেন না এবং যোগ্যতার মূল্যায়ন তিনি করেন-তার বড় প্রমাণ বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর। এখন তিনিই মূল স্পটলাইটে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ নির্দেশনায় চলমান সঙ্কট কাটিয়ে তুলতে বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কার্যকর ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সফল হবেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কালের আলো/ডিএস/এমএম