বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ উদ্যোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুশীলনে ভূমিকম্প মোকাবেলায় গুরুত্ব
প্রকাশিতঃ 8:58 pm | November 02, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:
দুর্যোগ প্রস্তুতি ও মোকাবেলায় পরস্পরের ‘বন্ধু’ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। ২০১০ সাল থেকে এই গভীর সম্পর্কের সূত্রপাত। হৃদ্যতাপূর্ণ এই সম্পর্কের বয়সসীমা স্পর্শ করেছে এক যুগ। এরই সূত্র ধরে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর তত্বাবধানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মার্কিন সেনাবাহিনীর যৌথ উদ্যোগে আবারও অনুষ্ঠিত হয়েছে ভূমিকম্প পরবর্তী অনুসন্ধান ও উদ্ধার বিষয়ক চারদিনব্যাপী অনুশীলন।
ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের পর উদ্ধার অভিযান নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বৃহত্তম এই অনুশীলন রোববার (৩০ অক্টোবর) উদ্বোধন করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান এমপি।
ডিসাস্টার রেসপন্স এক্সারসাইজ এন্ড একচেঞ্জ বাংলাদেশ, সংক্ষেপে যাকে বলা হয় ড্রী। রাজধানীর কুর্মিটোলা আর্মি গলফ ক্লাবে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ এই অনুশীলনের সমাপনী দিনে বুধবার (০২ নভেম্বর) প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, দুর্যোগ মোকাবেলায় জাতীয় প্রস্তুতি বৃদ্ধি, বাংলাদেশের জন্য ভুমিকম্প কন্টিনজেন্সি প্ল্যান মোতাবেক কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সমন্বয় করাই এই অনুশীলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
ড্রী বাংলাদেশ-২০২২ অনুশীলনটিতে বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারি ও বেসরকারি বাহিনী ও সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, এনজিও/আন্তর্জাতিক এনজিও এবং ২৭টি বন্ধুপ্রতীম দেশের প্রতিনিধিসহ (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, তুরস্ক, কানাডা, মঙ্গোলিয়া, লাওস, কেনিয়া, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, সিংগাপুর, ইথিওপিয়া, আর্মেনিয়া, প্রভৃতি) সর্বমোট আনুমানিক ৪০০ জন স্বশরীরে এবং ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। এ সময় দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন তারা।

এছাড়াও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে অধ্যয়নরত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং স্বেচ্ছাসেবকরাও এই ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন। অনুষ্ঠানে সামরিক/অসামরিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের রাষ্ট্রদূত, সামরিক উপদেষ্টা, কূটনীতিক ও দুর্যোগ মোকাবেলা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
আইএসপিআর আরও জানায়, ড্রী বাংলাদেশ-২০২২’র জন্য নির্ধারিত উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চারদিনব্যাপী এই অনুশীলনে বিভিন্ন সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট এক্সচেঞ্জ (এসএমইই) সেশনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দেশী এবং বিদেশী বিশেষজ্ঞরা দুর্যোগ মোকাবেলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য প্রদান করেছেন। ভূমিকম্প আঘাত হানার পরবর্তী পরিস্থিতির আলোকে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন ফাংশনাল গ্রুপে বিভক্ত হয়ে টেবিল টপ এক্সারসাইজের মাধ্যমে ডিজাস্টার ইনসিডেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিম (ডিআইএমটি) ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অন্যান্য ফ্রেমওয়ার্কসমূহকে আরও শক্তিশালী করার চ্যালেঞ্জ এবং সেটি মোকাবেলার উপায়সমূহ চিহ্নিতকরণের প্রয়াস নেয়া হয়েছে।

আইএসপিআর জানায়, তাত্ত্বিক জ্ঞানকে ব্যবহারিক উপায়ে পরীক্ষণের জন্য ভূমিকম্প মোকাবেলার সাথে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের অংশগ্রহনে বানৌজা শেখ মুজিবে ফিল্ড ট্রেনিং এক্সারসাইজ (এফটিএক্স) অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়াও প্রথমবারের মত দুর্যোগ মোকাবেলায় অত্যন্ত সহায়ক ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে স্থাপিত ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার পরিদর্শন করা হয়েছে।
অনুশীলনের সমাপনী দিনের প্রধান অতিথি সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ড্রী বাংলাদেশ-২০২২’র অনুশীলন পরিচালনা এবং এর পরবর্তী অ্যাকশন পর্যালোচনার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ভবিষ্যতে ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারস্পরিক সহযোগিতা দৃঢ়করণে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে ‘প্রস্তুতির মাধ্যমে স্থিতিস্থাপকতা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নির্ধারিত উদ্দেশ্যসমূহ জাতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ‘ড্রী বাংলাদেশ-২০২২’ একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।

কালের আলো/বিএস/এমএম