দরপত্র বাণিজ্য রোধ ও সিন্ডিকেট প্রথা বিদায় গণপূর্ত অধিদপ্তরে!

প্রকাশিতঃ 10:35 am | November 09, 2022

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, অ্যাকটিং এডিটর, কালের আলো:

সরকারি দপ্তরের যাবতীয় নির্মাণ কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। অধিদপ্তরটির সাফল্য রয়েছে অনেক। আবারও সমালোচনাও কম হয়নি। বিশেষ করে জি কে শামীম ও গোল্ডেন মনিরদের মতো রাঘব বোয়াল সিন্ডিকেটের অপকর্মে দেশজুড়ে হয়েছে নেতিবাচক শিরোনাম। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ঠিকাদারদের অনিয়ম দূর করে দরপত্র বাণিজ্য রোধ ও সিন্ডিকেট প্রথাকে বিদায় করতে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন এই মন্ত্রণালয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যকর নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপির প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির স্বাক্ষর রেখেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার। নিজেদের দৃঢ়চেতা মনোভাব ও সাহসী নেতৃত্বের টিম স্পিরিটে এগিয়ে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। ছোট-বড় সব স্থাপনা নির্মাণ কাজে সব ধরনের অনিয়ম বন্ধ করে সরকারের শতভাগ স্বার্থরক্ষা করতে ও অধিক স্থায়িত্বের স্থাপনা নির্মাণের লক্ষে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর দৃষ্টি দিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা ৮ শতাংশ থেকে উন্নীত হয়েছে ২৭ শতাংশে।

সূত্র মতে, গণপূর্ত অধিপ্তরকে এখনও নানাভাবেই বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস দৃশ্যমান রয়েছে। চলছে নানামুখী কূটকৌশলও। এক সময় দায়িত্বে ছিলেন কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পদ থেকে ছিটকে পড়েছেন-এমন কেউ কেউ নানা কায়দা-কানুনের মাধ্যমে বর্তমান প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। নিজের অনুসারী অনুগামীদের দিয়ে অপপ্রচার রটিয়ে জলঘোলা করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে দেদারসে। তবে বিষয়টি কারও কারও চেয়ার হারানোর ‘মনোকষ্ট’ হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।

সূত্র জানায়, নির্মাণ কাজের ইজিপি বা সাধারণ দরপত্রে চিরায়ত সিন্ডিকেট প্রথারও শক্ত হাতে লাগাম টেনে ধরেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ’র নির্দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার ‘অনিয়ম করে নির্মাণকাজে দীর্ঘসূত্রতা’ তৈরির পথ বন্ধ করেছেন। ঠিকাদার ও অনৈতিক কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দরপত্র বাণিজ্য রোধ ও সিন্ডিকেট প্রথাকে বিদায় করতে কঠোর মন্ত্রণালয় চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছে নিয়ম ভেঙে দরপত্র দাখিল, ভুয়া কাগজ দিয়ে বিল আদায়, কাজের মান বজায় না রেখে ইচ্ছামতো কাজ করে বিল আদায়ও। এছাড়া ইজিপি টেন্ডারেও সিন্ডিকেটের থাবা বন্ধ করতে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কোন কোন ঠিকাদার এসব অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত, এমনকি তাদের সহায়তাকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়মিত কর্মকান্ডও নজরদারি করা হচ্ছে। বহুল সমালোচিত ‘টেন্ডার কিং’ জিকে শামীমের ১৫ টি প্রকল্পের দরপত্র বাতিল করে বিভিন্ন কোম্পানিকে নিয়ম মেনে দেওয়া হয়েছে।

একই সূত্র জানায়, দরপত্র প্রক্রিয়ায় কোন অনিয়ম হলে কাউকে তদবির বা অনৈতিক সুবিধা প্রদানের চেষ্টায় সরকারের সামান্য স্বার্থ নষ্ট করার অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। অভিযোগের তদন্তে ঠিকাদার নিজেও জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ফৌজদারি আইনে মামলা দায়ের, লাইসেন্স কালো তালিকাভুক্তকরণ এমনকি অপরাধ অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিল করা হচ্ছে। প্রতিটি দরপত্র শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সব ধরনের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণ কাজগুলোও স্বচ্ছতার সঙ্গেই বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি কালের আলোকে বলেন, ‘গণপূর্ত অধিদপ্তর, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) আমার মন্ত্রণালয়ের অধীন সব সংস্থার দরপত্র প্রক্রিয়ায় যুক্ত সব সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দরপত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তথা দরপত্র বাণিজ্য রোধে আমরা সর্বোচ্চ কঠোর অবস্থায় রয়েছি। এক্ষেত্রে আমাদের নীতি জিরো টলারেন্স।’

সূত্র মতে, সাধারণত ইস্টিমেট, ড্রয়িং ডিজাইন ও দরপত্র মূল্যায়নসহ বিভিন্ন কারণে দরপত্র বিলম্বিত হয়। একটি দরপত্র ঠিকাদারকে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়ার পর এক্সিকিউশনেও কোন কোন ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপির নির্দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তার সময়েই নতুন সিডিউল আপডেট হয়েছে। এতে নতুন অনেক আইটেম যেমন সন্নিবেশিত হয়েছে, পাশাপাশি আধুনিক নির্মাণ পদ্ধতি, মান নিয়ন্ত্রণ, সেফটি মেজার্সসহ অনেক কিছুই সংযোজন করা হয়েছে।

একই সূত্র জানায়, দ্রুত ও নির্ভুলভাবে এস্টিমেট করার জন্য অনলাইন বেইজড এস্টিমেটিং সিস্টেম ডেভেলপ করা হয়েছে। শতভাগ ইজিপি’র মাধ্যমে দরপত্র আহবান করা হচ্ছে। প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে মনিটরিং’র মাধ্যমে দরপত্র মূল্যায়নে সময় ক্ষেপণ কমিয়ে আনা হচ্ছে। ঠিকাদাররা যেন দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করে সে লক্ষ্যেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এসব বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার কালের আলো’কে বলেন, ‘কোন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিধি বহির্ভূত কাজ অথবা অনৈতিক আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠলেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আমরা এসব বিষয় তদন্ত করে মন্ত্রণালয়কে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি মামলা করার জন্যও সুপারিশ করছি।’

কালের আলো/এমএএএমকে