প্রতি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন আর স্বপ্ন নয় বাস্তবতা

প্রকাশিতঃ 10:03 pm | November 09, 2022

বিশেষ সংবাদদাতা, কালের আলো:

আগুন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কম উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় থাকতে হয়নি টেকেরহাটের বাসিন্দাদের। বিভিন্ন দুর্যোগে প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হতো। টেকেরহাট পোর্ট স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে মন থেকে দূর হলো সেই আশঙ্কা। স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে এখন প্রধান ভরসার নাম হয়ে উঠছে ফায়ার সার্ভিস।

কেবল অগ্নিকান্ডে নয়, যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা দুর্ঘটনায় এখানে স্বল্প সময়ে সহজে সেবা মিলবে ফায়ার সার্ভিসের। ফলে নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন টেকেরহাটের বাসিন্দারা। গতি, সেবা আর ত্যাগের বারতা নিয়ে বুধবার (০৯ নভেম্বর) বিকেলে টেকেরহাট পোর্ট স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

এরই মধ্যে দিয়ে প্রতি উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় অঙ্গীকারও পূরণ হচ্ছে ক্রমশ। প্রতিটি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপন যেন এখন আর স্বপ্ন নয় বাস্তবতা! টেকেরহাট পোর্ট স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশনের উদ্বোধনকালেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল প্রধানমন্ত্রীর সেই অঙ্গীকারের কথাই পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘কিছুদিন আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রাজৈর ফায়ার স্টেশনের শুভ উদ্বোধন করেছেন। আজ আপনাদের টেকেরহাট পোর্ট স্থল কাম নদী ফায়ার স্টেশনের শুভ উদ্বোধন করা হলো। এর মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি উপজেলায় নূন্যতম একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণের ঘোষণা বাস্তবায়নের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি আমরা।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মো. শাজাহান খান এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাঈন উদ্দিনসহ ফায়ার সার্ভিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশে ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ছিল ২০৪টি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফায়ার স্টেশনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এই সংখ্যা বাড়াতে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি প্রতি উপজেলায় ফায়ার স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ২৮৭টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হয়। দু’টি প্রকল্পের অধীনে আরও ৯৫টি ফায়ার স্টেশন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনির্মিত ৪০টি ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন করেন। মূলত এসবের মাধ্যমে যেকোন দুর্যোগ মোকাবেলাসহ জনসেবামূলক কাজের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত হয়েছে। নির্মাণাধীন রয়েছে আরও ৫২ টি ফায়ার স্টেশন।

একই সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে সর্বমোট চালু ফায়ার স্টেশনের সংখ্যা ৪৯১টি। এসব ফায়ার স্টেশন চালুর মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সক্ষমতা আরও বেড়েছে। এতে অগ্নি দুর্ঘটনা রোধ, জনজীবন ও জনগণের সম্পদ রক্ষা বহুলাংশে কমে এসেছে। নতুন ফায়ার স্টেশন হওয়ায় খুশি সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারাও।

‘দুর্ঘটনা-দুর্যোগে সবার আগে সবার পাশে’ স্লোগান নিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মীরা সততা, দক্ষতা ও অসীম সাহসের সঙ্গে জীবনবাজি রেখে প্রতিনিয়ত পালন করে যাচ্ছেন অর্পিত দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন ও সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী’র অভিভাবকত্বে ও অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাঈন উদ্দিনের সময়োপযোগী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সব দুর্যোগে বুক চিতিয়ে কাজ করে প্রতিনিয়ত প্রশংসা কুড়াচ্ছেন অদম্য ফায়ার ফাইটাররা।

সূত্র জানায়, বর্তমান ডিজি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাঈন উদ্দিনের সময়েই সুউচ্চ ভবনের আগুন নেভানো এবং উদ্ধার কাজ সহজতর করতে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কার্যক্রমে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে মইবাহী (টার্ন টেবিল ল্যাডার-টিটিএল) গাড়ি। সেবা সংস্থাটির কার্যক্রমের গতিশীলতা এবং আধুনিকায়নের ধারাবাহিকতায় জার্মানি থেকে ৬৮ মিটার উচ্চতায় মইবাহী (টার্ন টেবিল ল্যাডার -টিটিএল) এই গাড়িটি এবারই প্রথম বাংলাদেশে আনা হয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত সক্ষমতা বাড়ছে মানবসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক যেকোনো দুর্যোগ দুর্ঘটনায় প্রথম সাড়াদানকারী হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত এই প্রতিষ্ঠানটি।

জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাঈন উদ্দিন কালের আলোকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শীতায় মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সেবার মান আধুনিক ও গণমুখী হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের নানা উদ্যোগে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা ও সদস্যদের কাজের গতি বেড়েছে। উন্নত বিশ্বের আদলে গড়ে উঠছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।’

কালের আলো/এমএএএমকে