অরিত্রির আত্মহত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে: শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিতঃ 3:18 pm | December 04, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালের আলো:

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, স্কুলে শিক্ষকের কথায় অপমানিত হয়ে ছাত্রীর আত্মহত্যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক না কেন, প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নকলের অভিযোগ তুলে বাবা-মাকে ডেকে অপমান ও টিসি দেয়ার কথা বলায় রাজধানীর শান্তিনগরে নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রি অধিকারী (১৫) আত্মহত্যা করেন।

এর পর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাস পরিদর্শনে আসেন শিক্ষামন্ত্রী। এ সময় তিনি শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং অভিভাবকদের ক্ষোভের কথা শোনেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। অভিযোগ ও ক্ষোভের কথা শুনেছি। তাদের বলেছি-কেউ অপরাধী হলে অবশ্যই শাস্তি পাবে।

‘একজন শিক্ষার্থী কতটা অপমানিত হলে, কতটা কষ্ট পেলে আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয়? যে ঘটনাগুলো আমরা শুনছি, এর পেছনের কথা শুনছি; ঘটনার পেছনে বা ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, যদি প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি বলেন, এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ভিকারুননিসা নূন স্কুল হচ্ছে অভিভাবকদের কাছে আকর্ষণীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ছেলেমেয়েদের তারা এখানে পড়াতে চান।

‘কিন্তু দেখা যাচ্ছে, জনপ্রিয়তার কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের কথা অনেক আগেই কানে এসেছে,’ বলেন নাহিদ।

তিনি বলেন, এসব অনিয়মের কারণে টাকার বিনিময়ে ভর্তি বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়। এখানে ভর্তির জন্য একসময় ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হতো, যা বন্ধ করা হয়েছে।

স্কুলের অধ্যক্ষ অরিত্রির বাবা-মাকে ডেকে মেয়ের সামনেই অপমান করে বলেন-সিদ্ধান্ত হয়েছে অরিত্রিকে নকলের অভিযোগে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেয়া হবে।

এ অপমান সইতে না পেরে বাসায় এসে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় অরিত্রি। আত্মহত্যার কিছুক্ষণ আগে সে তার মাকে জানায়, ‘মা এ লজ্জা নিয়ে বাঁচতে চাই না।’ তার ছোট বোনও একই স্কুলে পড়ে।

পুলিশ ও পরিবারের তথ্যানুযায়ী, সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় রাজধানীর শান্তিনগরে সাততলা ভবনের সপ্তম তলায় নিজ ফ্ল্যাটের ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় অরিত্রিকে পাওয়া যায়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে চিকিৎসকরা অরিত্রিকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই ছাত্রীর গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদরে। অরিত্রির বাবা দিলীপ কুমার একজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী।

অরিত্রির মা-বাবা জানান, অরিত্রির স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার সমাজবিজ্ঞান পরীক্ষা চলার সময় তার কাছে একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে পাঠায়। স্কুলে গেলে স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের জানায়, অরিত্রি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নকল করছিল, তাই তাকে বহিষ্কারের (টিসি) সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

অরিত্রির বার্ষিক পরীক্ষা চলছিল। রোববার স্কুলে পরীক্ষার সময় তার মেয়ে মোবাইল ফোন নিয়ে গিয়েছিল। মোবাইল ফোনে নকল আছে-এমন অভিযোগে ওই স্কুলের শিক্ষক তাদের স্কুলে আসতে বলেন।

সোমবার পরীক্ষার সময় অরিত্রির সঙ্গে তারা স্কুলে যান। পরে তাদের ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে নিয়ে গেলে তারা মেয়ের নকল করার ব্যাপারে ভাইস প্রিন্সিপালের কাছে ক্ষমা চান।

কিন্তু ভাইস প্রিন্সিপাল কিছু করার নেই বলে তাদের প্রিন্সিপালের রুমে যেতে বলেন। সেখানে গিয়েও তারা ক্ষমা চান। কিন্তু প্রিন্সিপালও তাতে সদয় হননি।

পরে তার মেয়ে প্রিন্সিপালের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও তাদের বেরিয়ে যেতে বলেন এবং পরের দিন টিসি নিয়ে আসতে বলেন।

অরিত্রির মা-বাবার অভিযোগ, প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করায় তার মেয়ে দ্রুত বাসায় চলে যায়। পরে তারা গিয়ে দেখে অরিত্রি নিজ রুমে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় আছে। পরে তাকে দ্রুত উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়।

সেখান থেকে তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পল্টন থানার এসআই আতাউল জানান, ঘটনা শুনে তিনি ঢামেকে গিয়েছেন। তিনি মেয়েটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করছেন।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস বলেন, ওই ছাত্রী পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নকল করে পরীক্ষা দিচ্ছিল। বিষয়টি পরিদর্শক শিক্ষক বুঝতে পেরে খাতা নিয়ে নেন। তিনি আরও বলেন, মোবাইল ফোনে পুরো বই কপি করা ছিল।

সোমবার ছাত্রীর মা-বাবা স্কুলে এসেছিল। মেয়েকে পরীক্ষা দিতে সুযোগদানের জন্য। আমাদের স্কুলে কেউ নকল করলে তাকে আর ওই বর্ষে পরীক্ষা দেয়ার নিয়ম নেই। আমরা তাকে পরবর্তী বর্ষের সঙ্গে পরীক্ষা দেয়ার পরামর্শ দিই। পরে জানতে পারি অরিত্রি আত্মহত্যা করেছে।

অরিত্রির লাশ ময়নাতদন্ত শেষে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ জানান, প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে-মেয়েটি গলায় ফাঁস দিয়েছে। তার গলায় দাগ ছিল। তার ‘নেক টিস্যু’ সংগ্রহ করা হয়েছে, পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

কালের আলো/এসএন/এমএইচএ